মঙ্গলবার আরজি কর কাণ্ডের (RG Kar Incident) প্রতিবাদে 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ'-এর ডাকে নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই মিছিলে পুলিশের জলকামানের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল আরএসএস (RSS) কর্মী প্রবীর বসুকে (Prabir Basu)। পেশায় শিক্ষক বছর ৫৬-র প্রবীর এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তার সঙ্গে ভাইরাল কলকাতা পুলিশের উদ্দেশ্যে তাঁর করা মন্তব্যও। যা নিয়ে অনেকেই প্রবীরের পাশে দাঁড়িয়েছেন আবার অনেকেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চুড়ি পরা নিয়ে মন্তব্য করেও কোনও অনুশোচনা নেই প্রবীরের।
সেদিন কী ইঙ্গিত করেছিল প্রবীর?
নবান্ন অভিযানে ছাত্র সমাজের কর্মীদের রুখতে যখন জল কামান চালাচ্ছে পুলিশ, ঠিক তখনই প্রবীরকে দেখা যায় পুলিশের উদ্দেশে কটাক্ষ করতে। জলকামানের মুখে দাঁড়িয়ে বাকি আন্দোলনকারীরা যখন পেছনে সরে যাচ্ছেন, তখনই একা দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বাঁ হাতে জাতীয় পতাকা আর ডান হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে পুলিশকর্মীদের হাতে চুড়ি পরে বসে থাকতে বলছিলেন। আর এতেই তীব্র আপত্তি জানালেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার ও সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার। তাঁদের মত, প্রবীর বসুরা আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ফসল।
কী বললেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার?
'চুড়ি পরে বসে থাকো' এই শব্দবন্ধের কড়া সমালোচনা করেছেন পবিত্র সরকার। তিনি bangla.aajtak.in-কে বলেন, 'এর অর্থ হল, আপনারা মেয়েদের মত ঘরে বসে থাকুন। এটা একটা নারীদের প্রতি তীব্র অবজ্ঞা ও নারীরা কাপুরুষ, নারীরা কোনও শক্তপোক্ত কাজে আসে না এই ধারনা থেকে এটা বলা। এটা ভারতে বা সারা পৃথিবীতে পুরুষ শাসিত সমাজের নিজেদের প্রাধান্যের কথা প্রচার। মেয়েরা কোনও কাজের নয়। অনেকে আবার শাড়ি পাঠিয়ে দেয়, সিঁদুর পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে, এটা বোঝাতে যে তাদের সাহস নেই। এটা মেয়েদের প্রতি অসম্মান। এরা অনেকেই সচেতন নয়। পুলিশকে এ কথা যিনি বলেছেন তাঁর বুদ্ধির গড়ায় খানিকটা ঘাটতি আছে বলেই মনে হয়।' এই চুড়ি পরার বিষয়টি অনেকসময়ই আমাদের কথাতেও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের ভাষার মধ্যে পুরুষ প্রাধান্য রয়েছে। যেহেতু এই ভাষা মূলত পুরুষদের তৈরি। মেয়েরাও ভাষা তৈরি করেন তবে সেটা খানিকটা তলায় তলায়। তবে শুধু ভাষায় নয়, ধর্মে, আচার-আচরণে সবেতেই পুরুষের প্রাধান্য এখনও আছে। এটা আসলে তারই প্রকাশ। আমরা সচেতন থাকি না অনেক সময়। কিন্তু সময় এসেছে সচেতন হওয়ার।'
ক্ষুব্ধ মীরাতুন নাহারও
প্রবীর বসুর কথায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মীরাতুন নাহারও। তাঁর মত, প্রবীর আসলে এই মন্তব্যের মাধ্যমে নিজের করা আন্দোলনকেই অপমান করে বসেছেন। তিনি বলেন, 'প্রথমত এই আন্দোলনকারী হুজুকে মেতেছিলেন। আন্দোলনের কারণ, অর্থ, তাৎপর্য কিছুই বোঝেন না। এই যে দৃষ্টিভঙ্গি এর থেকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি হয় না। তবে দুঃখের কথা একটাই, আমাদের দেশের ৮০ শতাংশ পুরুষই তারা এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি পোষন করেন বলেই আমাদের দেশের এই অবস্থা।' তিনি আরও বলেন, 'উনি মেয়েদেরকে বলছেন ঘরে বসে থাক। চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকো। পুরুষদের বলছেন। অর্থাৎ তোমরাও মেয়ে মানুষ হয়ে যাও। মেয়ে মানে চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকা।'
কী বলছেন প্রবীর?
প্রবীর bangla.aajtak.in-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বলেন, 'মেয়েরা যুদ্ধে বা খেলতে গেলে কি চুড়ি পরেন? আমি সেটাই বোঝাতে চেয়েছি। অন্য কোনও কিছুই উদেশ্য ছিল না।'