NHRC রিপোর্ট নতুন হাতিয়ার BJP-র, বিড়ম্বনা বাড়বে মমতার?

হাইকোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পেশ করা রিপোর্ট এক কথায় বলতে গেলে রাজ্য সরকারকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান মুখ হিসাবে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে বিরোধী জোট গড়ে তুলতো আলোচনাও শুরু হয়েছে। তারমাঝে নিজের রাজ্যে হিংসা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের নেতিবাচক রিপোর্টকে পক্ষপাত মূলক বললেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালই জানেন এনিয়ে কম জলঘোলা হবে না।

Advertisement
NHRC রিপোর্ট নতুন হাতিয়ার BJP-র, বিড়ম্বনা মমতার?
হাইলাইটস
  • ভোট মিটেছে দু'মাস হল তারপরেও রাজ্যে কমেনি উত্তেজনা
  • তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ তুলছে বিরোধিরা
  • এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এবার হাইকোর্টে কী বক্তব্য রাখবে সেই দিকেই নজর সকলের


ভোট মিটেছে দু'মাস হল। কিন্তু রাজ্যের পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছে প্রধান বিরোধী বিজেপি। এই আবহে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে উচ্ছসিত গেরুয়া শিবির। গত ১৪ জুন হাইকোর্টে পেশ করা রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে NHRC। ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে দ্রুত বিচারের জন্য ভিন রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে রিপোর্টে।

আরও পড়ুন :শান্তনু মন্ত্রী, ২৪-এর আগে রাজ্যে CAA লাগু লক্ষ্য?

 হাইকোর্টের কাছে মানবাধিকার করিমশনের পেশ করা  ৫০ পাতার রিপোর্টে রাজ্যকে তীব্র আক্রমণ করা হয়েছে।  বলা হয়েছে, বাংলায় আইনের শাসনের বদলে চলছে শাসকের আইন। পরিস্থিতির বদল না হলে বাজবে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা।  কোর্টের পর্যবেক্ষণে সিট গঠনের প্রস্তাবও জাতীয় মানবাধিকারি কমিশনে দিয়েছে।  কমিশনের রিপোর্টে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’র তালিকায় রয়েছেন একাধিক তৃণমূল নেতৃত্বও। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, উদয়ন গুহ, শেখ সুফিয়ান থেকে পার্থ ভৌমিক, শওকত মোল্লা, জীবন সাহা, খোকন দাসের মতো রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা।  রাজ্যের সবথেকে হিংসা কবলিত এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বীরভূমকে। পাশাপাশি রিপোর্টে রয়েছে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রতমণ্ডল ঘনিষ্ঠ ৩ নেতার নাম।

 

 

স্বাভাবিক ভাবেই এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে ময়দানে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলছেন,  “এই রিপোর্ট প্রমাণ করছে রাজ্যে আইনের শাসন নেই। এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র! সারা দেশের কাছে লজ্জার!' বিজেপি বলছে, ব্রিটিশ শাসনকেও হার মানাচ্ছে এই সরকার। রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে গেরুয়া শিবির। রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করার ব্যাপারে বিজেপির সঙ্গেই সুর মিলিয়েছে বামেরাও।  এই রাজ্যে আইনের শাসন নেই তা গত দশ বছর ধরে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, বলছেন সুজন চক্রবর্তী। স্বাভাবিক ভাবেই এই রিপোর্ট ঘিরে কিছুটা হলেও চাপে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। তীব্র  সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার দাবি ,বাংলাকে বদনাম করতেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের কমিটির সদস্যদের নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে  নবান্ন। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কমিটিতে এমন লোকও রয়েছে যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজেপি হিসেবে পরিচয় দেন। অন্যদিকে গেরুয়া শিবির  রিপোর্টক স্বাগত জানালেও তাদের স্পষ্ট বক্তব্য বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এই তদন্ত হয়নি। 

Advertisement

আরও পড়ুন : 'ভুল করে BJP-তে গেলে চলে আসুন', এবার একুশেও সেই বার্তা?

নবান্নের অনুরোধে মানবাধিকার কমিশনের সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আনা হয়। শুক্রবার ওই রিপোর্ট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা। মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে থাকা প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশকে। ২২ জুলাই হাইকোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানি। এর মধ্যে সব ক'টি ঘটনার রিপোর্ট না পাওয়া গেলে আদালতের কাছে আরও সময় চেয়ে নিতে পারে রাজ্য। আর এরমধ্যেই রাজ্যপালের দিল্লি গমন নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

 

 

 নির্বাচনের পর থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসা প্রসঙ্গে মমতার সরকারকে বারংবার তোপ দেগেছেন রাজ্যপাল। নিজেই চলে গিয়েছেন উত্তরবঙ্গ, নন্দীগ্রামের মতো স্থানে। এরপর মাঝে একবার দিল্লি গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট সামনে আসতেই তার ফের দিল্লি গমন বাড়তি মাত্রা যোগ করছে। ভোট পরবর্তী বাংলায় একাধিকবার শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষকে বলতে শোনা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অতীতে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলায় হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে  রাজ্য সরকারকে। তারপরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। । হাইকোর্টে এহেন নির্দেশে আগেই নিজেদের জয় দেখছে বিজেপি। এদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্যরা যাদবপুর এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখনি রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে তোলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী। তারপর হাইকোর্টে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পেশ করা রিপোর্ট এক কথায় বলতে গেলে রাজ্য সরকারকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান মুখ হিসাবে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে বিরোধী জোট গড়ে তুলতো আলোচনাও শুরু হয়েছে। তারমাঝে নিজের রাজ্যে হিংসা নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের নেতিবাচক রিপোর্টকে পক্ষপাত মূলক বললেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালই জানেন এনিয়ে কম জলঘোলা হবে না।  এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এবার হাইকোর্টে কী বক্তব্য রাখে সেদিকেই নজর ওয়াকিবহাল মহলের। 

 

POST A COMMENT
Advertisement