scorecardresearch
 

ভবানীপুর কি ভাবাচ্ছে মমতাকে? যা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনের দিন ও তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণার পর, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানিয়েছিলেন, ওই কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জিতবেন, তা কার্যত নিশ্চিত। কিন্তু, এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অনেকেই। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের ধরন।

Advertisement
প্রিয়াঙ্কা ও মমতা প্রিয়াঙ্কা ও মমতা
হাইলাইটস
  • আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন
  • গত কয়েকদিনে ভবানীপুরে একাধিক নির্বাচনী সভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়
  • আর প্রতিটি সভা থেকেই 'রণং দেহি' মেজাজে পাওয়া গিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচন। নির্বাচনের দিন ও তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণার পর, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানিয়েছিলেন, ওই কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জিতবেন, তা কার্যত নিশ্চিত। তবে এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অনেকেই। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারের ধরন। 

গত কয়েকদিনে ভবানীপুরে একাধিক নির্বাচনী সভা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। আর প্রতিটি সভা থেকেই 'রণং দেহি' মেজাজে পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। BJP-CPIM ও কংগ্রেসকে এক সারিতে রেখে আক্রমণ করেছেন। দাবি করেছেন, তাঁকে হারানোর চক্রান্ত হচ্ছে।

আবার তিনি এই কেন্দ্র থেকে জিততে যে মরিয়া তাও প্রকাশ্য সভা থেকেই বলেছেন। কয়েকদিন আগেই একবালপুরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ' ৩০ সেপ্টেম্বর ছুটি দেওয়া হয়েছে ভোট দেওয়ার জন্য। আমাকে জেতান, তবেই মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারব। প্রত্যেকটা ভোট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।' BJP-র দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গেছেন তিনি হারবেন, সেই কারণেই এত মরিয়া হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। 

আরও পড়ুন : 'মোহন ভাগবতের চাপে অভিষেককে গ্রেফতার করা হয়নি', বিস্ফোরক অধীর

শুধু প্রচার নয়, নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই সন্ত্রাসও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভবানীপুরে। BJP-র নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সেখানে প্রচারে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বাধা পেয়েছেন মমতার প্রতিপক্ষ প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। সোমবার শেষদিনের প্রচারে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে দিলীপ ঘোষকেও। BJP-র অভিযোগ, তৃণমূল তাদের প্রচারে বাধা দিয়ছে সেই প্রথম দিন থেকেই। আর এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে 'অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করেছে। 

এই ঘটনাবলী দেখে কেউ কেউ বলছেন, ভবানীপুর আসলে ভাবাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। সত্যিই কি তাই? কী বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখে নেব। 

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, 'আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেই, ফলে সেখানে আসলে কী হচ্ছে তা আমি নিজের চোখে দেখেনি। কিন্তু, মিডিয়ার মাধ্যমে যে খবর দেখছি বা পড়ছি তা থেকে আমার মনে হচ্ছে, ভবানীপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনওরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জিতে যাবেন, এমনটা নয়। কারণ, প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের সমর্থনে ভবানীপুরে একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-নেতাদের পাঠিয়েছে BJP। বেশ ভালোরকম প্রচারের হাওয়া তুলতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে বঙ্গ-BJP-র বড় বড় নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, BJP কামড় দিতে চাইছে। সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছে।' 

Advertisement
 উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)
উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (রাজনৈতিক বিশ্লেষক)

তাঁর আরও সংযোজন, 'ভবানীপুর এমন একটা কেন্দ্র যেখানে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। অবাঙালি ভোটার রয়েছে অনেক। তা নিয়ে BJP ওয়াকিবহাল। সেই মতো পরিকল্পনা করে ময়দানে নেমেছেন দিলীপ ঘোষরা। নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁকেও প্রচারের সারির সামনে এনেছে তারা। সব মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া জিতবেন, এমনটা আমার মনে হয় না।' 

আরও পড়ুন : Bhabanipur By Poll: ভবানীপুরে দিলীপের প্রচারে ব্যাপক অশান্তি, মাথা ফাটল BJP কর্মীর
এই বিষয়ে আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলালের মতে, 'প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল রাজনীতির ময়দানে সেই অর্থে বিশেষ পরিচিত মুখ নন। তবে আইনজীবী হিসেবে তাঁর পরিচয় রয়েছে। তিনি BJP-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্যে জোর কদমে প্রচার চালিয়েছেন। আবার বেশ সাড়াও ফেলে দিয়েছেন। BJP-র সবথেকে বড় সুবিধে হল, এবার তারা ভবানীপুরে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করেছে। এমনকী এই উপ-নির্বাচনেও যে সন্ত্রাস চলছে তা গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রম দেখলেই বোঝা যাবে। তাই গেরুয়া শিবিরও কিছু প্লাস পয়েন্ট নিয়েই ময়দানে নেমেছে বলে আমার মত।' 

তাহলে কি ভবানীপুরে জোর টক্কর হবে BJP ও তৃণমূলের? মহানন্দা কাঞ্জিলালের কথায়, 'জোর টক্কর হবে কি না সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু, প্রথমে বলা হচ্ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল ভোটে জিতবেন, কোনওরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই - এই 'হাওয়াতে' আঘাত আনতে এখনও পর্যন্ত সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। আর ভুলে গেলে চলবে না ওই কেন্দ্রে ৪০ শতাংশ অবাঙালি ভোটার রয়েছে। সেদিকে নজর রয়েছে BJP-র।' 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলাল
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহানন্দা কাঞ্জিলাল

মহানন্দাদেবী আরও বলেন, 'BJP-র মতো তৃণমূলেরও প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল পশ্চিমবঙ্গে জিতে আছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে। উপ-নির্বাচনে শাসকদলই জেতে। এটাই মূলত ট্রেন্ড। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্পকে সামনে রেখে প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন।' 

তাহলে ভবানীপুর এখন কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে?  উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহানন্দা কাঞ্জিলাল দুই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, 'এখনই তা বলা মুশকিল। সেজন্য ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।'   

Advertisement