কৌশল বদল করলেন শুভেন্দু অধিকারী? রবিবার মহিষাদলের সভায় ৩৪ বছরের বাম আর বর্তমান তৃণমূল সরকারকে একবন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বাম জমানার বেকারত্ব ও ঋণের পরিমাণের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। অথচ কয়েক দিন আগেও শুভেন্দু মুখে সিপিএমের প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। সেই তিনিই কেন এখন সিপিএম ও তৃণমূলকে একসঙ্গে বিঁধলেন? এর পিছনে লুকিয়ে সম্ভবত ভোট রাজনীতির বদল। সাগরদিঘি ও বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে বিজেপি। অথচ ওই দুই আসনেই একুশের বিধানসভায় দ্বিতীয় ছিল তারা। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের প্রধান বিরোধীর জায়গা কি হারাচ্ছে বিজেপি?
রবিবার মহিষাদলের সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ৩৪ বছর সিপিএমকে দেখেছে মানুষ। বিজেপিকে এখন সরকারে দেখেনি। তাই ডাবল ইঞ্জিনের সরকার পশ্চিমবঙ্গে না হলে উপায় নেই। সিপিএম রেখে গিয়েছিল ১ কোটি বেকার। পিসিমণি ২ কোটি করে দিয়েছেন। । ২ লক্ষ কোটি দেনা করেছিল বামফ্রন্ট। আর সেটা ৬ লক্ষ কোটি করেছে পিসিমণি। বামফ্রন্ট নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়ে মেরেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বগটুইয়ে মুসলমান পুড়িয়েছে।' সেই সঙ্গে শুভেন্দু মনে করিয়ে দিয়েছেন,'একমাত্র জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি ছাড়া এ রাজ্যের গতি নেই।'
কেন শুভেন্দু হঠাৎ করে বাম-তৃণমূলকে একবন্ধনীতে ফেললেন? সেই রহস্য লুকিয়ে ভোটের পরিসংখ্যানে।
সাগরদিঘিতে সদ্য উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছে বাম-কংগ্রেস জোট। ২২,৯৮০ ভোটে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থাী বায়রন বিশ্বাস। তিনি পেয়েছেন ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট। ৩৪.৯৪ শতাংশ ভোট গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে। আর বিজেপির ভোটের হার মাত্র ১৩.৯৪%। অথচ ২০২১ সালে বিজেপির পেয়েছিল ২৪.০৮ শতাংশ ভোট। প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছে ২২ মাসে। সেই ভোটই গিয়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে। সেবার তারা ভোট পেয়েছিল ১৯.৪৫ শতাংশ।
তার আগে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনেও একই ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালে বালিগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন ২০.৬৮ শতাংশ ভোট। উপনির্বাচনে সেই ভোটের হার কমে হয় ১২.৮৩%। একুশে ৫.৬১ শতাংশ ভোট পাওয়া সিপিএম ৩০.০৬ শতাংশ ভোট পেয়ে উঠে এসেছিল দ্বিতীয় স্থানে।
আরও পড়ুন- 'সেদিন যদি নো ভোট টু মমতা বলতেন....', শুভেন্দুর নিশানায় বাম-কংগ্রেস
তাছাড়া একের পর এক পুরসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। সেখানে ক্ষয়িষ্ণু বামেদের দখলে তাহেরপুর পুরসভা। সবমিলিয়ে বিজেপির হাত থেকে বিরোধী পরিসর হাতছাড়া হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে যা চিন্তা বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবিরের। যদিও এটাও প্রণিধানযোগ্য, বালিগঞ্জ ও সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোট নির্ণায়ক শক্তি। যা বিজেপির দখলে নেই। সাগরদিঘির ৬৩ শতাংশ ভোটারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে তত বাম ও তৃণমূলকে একবন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ শানাতে থাকবেন বিরোধী নেতারা। শুধু এটাই নয়, সাম্প্রতিককালে সিবিআই ও ইডি তদন্তে একাধিক তৃণমূল নেতা ধরা পড়েছেন। সেই কৃতিত্বও নিজেদের দিকে টেনেছেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, 'সিপিএম-কংগ্রেস বেরিয়ে পড়েছে। এরা ছিল ১১ সাল থেকে বিরোধী দল। ২০১১ সাল থেকে বিরোধী দলনেতা ছিল সিপিএমের। ১৬ থেকে কংগ্রেসের। কখনও প্রতিবাদ হয়েছে? চোর ধরা পড়েছে? বিজেপি করবে আর লাভ পাবে ওরা! ২৫ বছর লোকে কংগ্রেসকে দেখেছে।'