scorecardresearch
 

প্রেসিডেন্সি জেল থেকে কয়েদি নিখোঁজ! তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

calcutta high court: এই ঘটনার জেরে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন রঞ্জিতের পরিবার। প্রশ্ন উঠছে নিয়ম ভেঙে সূর্য অস্ত যাবার পর কি করে তাঁকে জেল থেকে ছাড়া হল?

Advertisement
কলকাতা হাইকোর্ট-ফাইল ছবি। কলকাতা হাইকোর্ট-ফাইল ছবি।
হাইলাইটস
  • কয়েদির জামিনের নথি পৌঁছনোর আগে মুক্তি দেওয়ার অভিযোগ।
  • কাঠগড়ায় প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ।
  • তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের।

জামিন পাওয়ার পর প্রেসিডেন্সি জেল থেকে এক ব্যক্তি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ডিজি পদমর্যাদার এক আইপিএস আধিকারিককে দিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশের এই অনুসন্ধানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্য মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দিতে হবে রাজ্যের  অ্যাডভোকেট জেনারেলকে। শুক্রবার এই নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্যের কারা বিভাগ।

হাওড়ার একটি মামলায় গ্রেফতার হন রঞ্জিত ভৌমিক। গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় নিম্ন আদালত।পরের দিন জামিন মঞ্জুর হয় অভিযুক্তের। অভিযোগ, সন্ধে গড়িয়ে আদালতের নির্দেশ এসে পৌঁছয়। সেই সময় নিয়ম অনুযায়ী কোনও আসামির জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা নয়। তাই পরদিন আদালতের নির্দেশনামা নিয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে হাজির হন পরিবারের সদস্যরা। সে সময় তাঁদের জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, আগের দিন রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রঞ্জিতকে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রশ্ন তোলেন, অভিযুক্ত গেলেন কোথায়? এরপরই জেল থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে অভিযুক্তের পরিবার। 

এই মামলায় জেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চায় উচ্চ আদালত। তারা জানায়, সেদিন সন্ধে ৭টা ৫২ মিনিটে জেল থেকে ছাড়া হয়েছে অভিযুক্তকে। নিয়ম মেনে মুক্তি পেয়ে চলে যান রঞ্জিত। মামলাকারী আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, নিয়ম ভেঙে বেআইনিভাবে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে পুলিশ। তাই কর্তব্যরত অফিসারকে অবিলম্বে সাসপেন্ড করার আবেদন জানান তিনি। যদিও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর বেরোনোর সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হলে আদালতে কারা দফতরের আইনজীবী জানান, জেলের ভিডিও ফুটেজ লাইভ দেখা গেলেও ডিভিআর খারাপ থাকায় রেকর্ডিং হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের দিয়েও সেই ফুটেজ উদ্ধার করা যায়নি। কারা দফতরের এই যুক্তি শুনে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিচারপতি। জেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভিআর হায়দরাবাদে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। 

Advertisement

আরও পড়ুন- স্কুল-কলেজ কেন খোলা হবে না? প্রশ্ন অভিভাবকদের

এরপরই পুলিশ রিপোর্ট জমা করে রাজ্য জানায়, কলকাতা পুলিশের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ঘটনার দিন সন্ধের পর আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় রঞ্জিতকে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে। এমনকি পরের দিন সকালে তারাতলা এলাকায় তাঁকে দেখা গিয়েছে নজরদারি ক্যামেরায়। তাই জেল থেকে একবার কেউ বেরিয়ে যাওয়ার পর রাস্তায় নিখোঁজ হলে, তার দায় জেল কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় না। যদিও এই যুক্তির বিরোধিতা করেন আবেদনকারীর আইনজীবী। তিনি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্তের জন্য আবেদন জানান আদালতের কাছে। দু'পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে কলকাতা হাইকোর্ট  রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে নির্দেশ দেয়, ডিজিপি পদমর্যাদার এমন কোনও অফিসার যিনি সরাসরি জেলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁকে দিয়ে এই অভিযোগের অনুসন্ধান করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে করে জমা দিতে হবে আদালতে। মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ ফেব্রুয়ারি।

এই ঘটনার জেরে প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন রঞ্জিতের পরিবার। প্রশ্ন উঠছে নিয়ম ভেঙে সূর্য অস্ত যাবার পর কীভাবে তাঁকে জেল থেকে ছাড়া হল? কারা দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার দাবি, আদালত থেকে কোনও আসামির জামিনের নির্দেশ মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার পর তিনি আর সরকারিভাবে জেল হেফাজতে থাকেন না। আদালত থেকে ওই অভিযুক্তকে জেলে আনার পর তাঁকে আর হেফাজতে রাখা হয় না। বরং জেলের কার্যালয়ে রেখে নথিপত্র যাচাই করে, তাঁর জিনিসপত্র ফেরত দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়। তাই এক্ষেত্রে সূর্যাস্তের পর মুক্তি না দেওয়ার নিয়ম খাটে না। তবে কোনও অভিযুক্ত জেলের ভিতরে বা জেল হেফাজতে থাকার সময় তাঁর জামিন মঞ্জুর হলে সেক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন- মোদীকে টক্কর দিতে পারবেন মমতাই, বলছে দেশজুড়ে সমীক্ষা

Advertisement