মা আসতে আর মাত্র কয়েকটা দিনই বাকি। এরই মধ্যে শহর সেজে উঠছে পুজোর সাজে। কলকাতা জুড়ে আর কিছুদিনের মধ্যেই পুজোর হোর্ডিং দেখা দেবে। আর এরই মাঝে কুমোরটুলির ব্যস্ততা যেন একেবারে তুঙ্গে। কারোর দম ফেলার সময়ই নেই। চারদিক জুড়ে চলছে শুধুই মূর্তি তৈরির কাজ। আর এত ব্যস্ততার মধ্যেও bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে পুজো নিয়ে কথা বললেন জনপ্রিয় মৃৎশিল্পী মিন্টু পাল।
এই বছরের পুজোতে মিন্টু পালের ব্যস্ততা একেবারে আকাশছোঁয়া। এ বছর শহরের কটা পুজোয় আপনি মূর্তি তৈরি করছেন? কার্তিকের মূর্তিতে মাটির প্রলেপ লাগাতে লাগাতে মিন্টু পাল জানালেন, সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, সল্টলেকের এফডি ব্লক, বিকে পাল পার্ক, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং শিমলা পার্কের পুজো, বেনিয়াটোলা আছে, কাঁকুড়গাছির সিআইটি বিল্ডিং, বেহালাতেও বেশ কয়েকটা আছে। কলকাতা-হাওড়া সহ আশপাশের এলাকার ছোট-বড় সব পুজো মিলিয়ে মোট ৪০টা মতো ঠাকুর এবার করছেন মিন্টু পাল। তবে শিল্পীর কথাতেই জানা গেল, দুর্গা প্রতিমার চমক এবার রয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে। তিনি জানান, এখানে অযোধ্যার রাম মন্দির হচ্ছে, রামায়ণে রাম যেমন অকাল বোধনে মায়ের পুজো করেছিলেন, সেরকম রাম মন্দিরেই এবার মায়ের পুজো হবে, সেটাই আসল চমক। অযোধ্যার রাম মন্দির তৈরি হওয়ার আগেই এ রাজ্যের মানুষ দেখবেন রামের মন্দির কেমন হতে চলেছে। তবে দেবী মূর্তি সাবেকী হবে, সেখানে কোনও বদল নেই বলেই জানিয়েছেন মিন্টু পাল।
বিদেশে ইতিমধ্যেই মিন্টু পালের তৈরি ১৬টা মূর্তি চলে গিয়েছে। দুবাই, সিঙ্গাপুর, জাপান সহ এইসব জায়গাতে মূর্তি গিয়েছে। এই বছর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মূর্তি গিয়েছে। ১২টা দুর্গা প্রতিমা চলে গিয়েছে মার্কিন মুলুকে। এছাড়াও জার্মান, কানাডা, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, ফ্রান্স এই দেশগুলোতেও প্রতিমা গিয়েছে। মিন্টু পাল জানান, গত দু'বছরে করোনার কারণে পুজোর বাজার অনেকটাই পড়ে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে পুজোর বাজেটও এখন বেড়েছে, প্রতিমার মূল্যও বেড়েছে। তবে ২০১৯-২০-এর আগে যে দামটা আমরা প্রতিমার জন্য পেয়েছি, সেটা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। বড় বড় পুজো কমিটিগুলো প্রতিমার সঠিক মূল্য দিতে চাইছে না।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে নজরুল পার্ক উন্নয়ন সমিতির পুজোয় দেখা গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে প্রতিমা। যা তৈরি করেছিলেন মিন্টু পাল। সেই মূর্তি নিয়ে কম বিতর্কের সৃষ্টি হয়নি। সেই বছর রাজনৈতিক তরজা চড়েছিল তুঙ্গে। সেই বিতর্কের কথা তুলে মিন্টু পাল বলেন, 'কিছু কিছু পুজো কমিটির চাহিদা থাকে তাঁদের পুজোয় এ ধরনের কিছু করলে হয়ত চমক হবে, ভিড় বাড়বে। তবে কোনও নেতা-মন্ত্রীর মুখের আদলে মূর্তি গড়ে পুজো না করাই ভালো।' মিন্টু পাল বলেন, 'তবে আমরা তো মৃৎশিল্পী, আমাদের যেমনটা বলবে সেরকমই করবো। এই বছরও এরকমও প্রস্তাব এসেছিল নেতা-মন্ত্রীদের মুখের আদলে প্রতিমা-অসুর বানানো হোক, কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছি। অনেকে আবার কেন্দ্রীয় নেতাদের অসুর বানানোর কথা বলেছিল, কিন্তু আমি বলে দিয়েছি যে কোনও রাষ্ট্রনেতাকে নিয়ে মূর্তি বানানো যাবে না।'