একসময় কলকাতায় দাপিয়ে বেড়াত কাঠের বাস। সময়ের দাবিতেই সেইসব বাস উঠে গেছে। এসেছে একের পর এক আধুনিক প্রয়ুক্তির বাস গাড়ি। কিন্তু কলকাতায় এখনও রয়ে গেছে একটি কাঠের বাস। এখনও সচল।
বাসটি রোজ হাওড়া স্টেশন থেকে রুইয়া পূর্বপাড়া ভায়া হয়ে সালকিয়া, বেলুড়, বালি, দক্ষিণেশ্বর, ডানলপ হয়ে সোদপুর পর্যন্ত যায়। এবং এটিই রাজ্যে শেষ কাঠের মডেল, এই দাবি গুয়াহাটি আইআইটি-র পড়ুয়া-গবেষক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাস নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। তৈরি করেছেন বাস-ও-পিডিয়া নামে একটি গ্রুপ। যেখানে বাসের বিবর্তন, বেসরকারি পরিবহণে বাসের ভূমিকা এবং বাস নিয়ে বিভিন্ন অজানা তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়।
বৃহস্পতিবার অনিকেত বাস-ও-পিডিয়ার তরফে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রীর কাছে তাঁর অনুরোধ, ওই বাসটি সংরক্ষণ করে মিউজিয়াম করা হোক। তিনি ই-মেলে লিখেছেন, 'কলকাতার শেষ চালু কাঠের বাস আমাদের শহরের একটি মূল্যবান ঐতিহ্য। শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের এই অনন্য অংশটি সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। ভবিষ্যতের জন্য কলকাতার শেষ কাঠের বাসটি যাতে সংরক্ষিত থাকে তা, নিশ্চিত করার জন্য আমি আপনাকে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করছি।'
বিষয়টিতে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস ফোনে বললেন, 'এখনও চিঠি পড়া হয়নি। উত্তরও দেওয়া হয়নি। তবে প্রস্তাবটা ভালো। বিষয়টিতে কী করলে ভালো হয়, আমার সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ দিক। কী করলে ভালো হয় বলুক। সব ঠিকঠাক থাকলে সংরক্ষণ করার কথা ভাবা হতে পারে।' স্নেহাশিস আরও জানান, তিনি আগামী ৪ বা ৫ এপ্রিল পরিবহণ দফতরে একটি বৈঠকও করবেন। সেখানে কিছু বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বিষয়টিতে বাস-ও-পিডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি দেখা করবেন। তার আগে পরিকল্পনাটি লিখিত আকারে রেডি করা হবে। তারপর মন্ত্রীর দফতরে দেওয়া হবে। অনিকেত বললেন, 'এটা আমাদের গ্রুপের কাছে খুবই আনন্দের খবর। ওই ট্রামে স্মরণিকার মতো বাসের মিউজিয়াম করা যেতে পারে। পুরোনো দিনের রুট চার্ট ও বিভিন্ন অনুসঙ্গে সাজিয়ে ছোট একটি সরকারি সংগ্রহশালা করা যেতে পারে। বা ইকো পার্কের মতো জায়গায় জয় রাইডের জন্য রাখা যেতে পারে।'
সাংবাদিক, লেখক ও কলকাতা গবেষক গৌতম বসুমল্লিক বিষয়টিতে বললেন, 'পুরোনো বাসের ছবি, পুরোনো চেয়ার, প্রথমদিকে বাসগুলো যেমন ছিল। তখন হলুদ বাল্ব জ্বলত। কোনও কোনও বাসে রেডিও থাকত। দেবদেবীর ছবিও অন্যরকম ছিল। প্লাস্টিকের মালা ছিল না। তাই হাতে আঁকা কাঁচে বাঁধানো দেব-দেবীর গলায় আসল মালাই ঝুলত। ধীরে ধীরে পুরোনো বাস তো উঠেই যাচ্ছে। বাসও কমছে। কলকাতার বাস শতর্বর্ষ পেরিয়েছে। তাই সরকার একটা পুরোনো বাস সংরক্ষণ করে রাখতেই পারে।'
আরও পড়ুন-বোলপুর-বর্ধমান সহ ২৮৮টি স্টেশনে ডাক্তারখানা খুলছে রেল, কী কী সুবিধা?