scorecardresearch
 

বাঁধ ভাঙা নিয়ে তদন্ত রাজ্যের, মমতার লক্ষ্য কি দলত্যাগী শুভেন্দু-রাজীব?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেচ দফতরকে বকাবকি করলেও মন্ত্রী হিসাবে এই দফতরের দায়িত্বে সম্প্রীতি এসেছেন সৌমেন মহাপাত্র। অন্যদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে এই দফতর সামলেছেন। প্রসঙ্গত, দলত্যাগ করার আগে পর্যন্ত পরিবেশ ও বন দফতরের দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেচমন্ত্রীও ছিলেন। রাজীবকে বনমন্ত্রী করার সময় শুভেন্দুকে সেচমন্ত্রী করা হয়। নতুন সরকার এসেছে মাত্র কয়েকদিন হল। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে দুই দলত্যাগী, তা বোঝাই যাচ্ছে।

Advertisement
মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে দুই দলত্যাগী এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে দুই দলত্যাগী এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে
হাইলাইটস
  • সেচ দফতরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন মমতার
  • বন ও পরিবেশ দফতরকেও কটাক্ষ করেছেন
  • মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে দুই দলত্যাগী এমনটাই অনুমান করা হচ্ছে

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপট এরাজ্যে আয়লা বা আম্ফানের মত হবে না তা আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। ইয়াস আছড়েও পড়ে ওড়িশায়। ফলে ঘূর্ণিঘড়ের দাপটে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যটিরই। এর মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজ্যে প্রচুর বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গিয়েছে। নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন ১৩৪টি বাঁধ ভেঙেছে। প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের সামনে  নবান্নে বাঁধ ভাঙা নিয়ে সেচ দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরাতেও দেখা গিয়েছে মমতাকে। সেচ দফতরের সচিবকে ভর্ৎসনাও করেছেন।  পাশাপাশি বন ও পরিবেশ দফতরকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্দেশ দিয়েছেন তদন্তের। আর তাতেই জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কারণ একসময় রাজ্যের সেচমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন বর্তমানে বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেচ বিভাগের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হলে স্বভাবতই চাপ বাড়বে দুই তৃণমূল ত্যাগী নেতার ওপরেই।

বাঁধ ভাঙা নিয়ে মমতার প্রশ্ন
নবান্নে ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা বৈঠকে মমতার তুমুল ভর্ৎসনার মুখে পড়েন সেচ দফতরের সচিব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সেচ দফতর থেকে দিঘায় যেটা করেছিলে, তার পুরোটাই ভাঙল কীভাবে? এত কংক্রিট করেও (ভাঙল কীভাবে)? দু'বছরের মতো হয়েছে। জলের স্রোত ছিল, সবটা ঠিক আছে। সবটা কীভাবে ভেঙে গেল।' সেচ দফতরের তরফে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করলে মমতা পাল্টা বলেন, ‘করতে করতে তোমরা সময় নিচ্ছ। কবে শেষ করার কথা! কত বছর হল কাজটা করতে? তিনটি ব্রিজ করার কথা ছিল কতদিনে? আর তোমরা এটাকে কতদিন ঝুলিয়ে রেখেছ? তোমরা নজরদারি চালাও? কেন এতদিন সময় লাগে? না! আমি নিজে দেখেছি। আমার ১০ বার ঘোরা হয়ে গেল। কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে না। প্রতিবারই শুধু হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে, হচ্ছে। ’ মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানান, কাজে গাফিলতির অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। সঙ্গে প্রশ্ন করেন, 'তাহলে ভিত্তি তৈরি করা হয়নি? এটার একটা তদন্ত হবে।' বিদ্যাধরী সেতুর বাঁধ নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষোভের সুরে প্রশ্ন করেন, আমফানের সময় বাঁধের জন্য টাকা দেওয়া হল। ‘সব টাকা কি জলেই চলে যাচ্ছে? এটা তো আমায় দেখতে হবে।’ আম্ফানের পর কী কী কাজ হয়েছিল, তার কতটা অংশ ভেঙে গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য অর্থ দফতরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘যদি জানি যে জলের স্রোত এলে ভেঙে যাবে, তাহলে কেন করলাম? চারভাগের জায়গায় একভাগ করতে পারতাম। সেটা তো টিকে থাকতে পারত। জেনেশুনে বিষ পান করব কেন?’ সেইসঙ্গে অর্থ দফতরকে নির্দেশ দেন, ‘একদম (সেচ দফতরের) টাকা ছাড়বে না।' সেচ দফতরের অর্থ বরাদ্দের আগে যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করতে বলেন। মমতা জানিয়ে দেন, কেন এতগুলো বাঁধ ভাঙল তা নিয়ে তদন্ত হবে। তদন্ত প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করারও নির্দেশ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।  পাশাপাশি বন ও পরিবেশ দফতরকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ম্যানগ্রোভ লাগানোর কথা ছিল। সেই ম্যানগ্রোভের কী হল?

Advertisement

 

 

বাঁধ ভাঙা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি
কীসের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী ১৩৪টি বাঁধ ভাঙার কথা বলছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কেন্দ্রের দেওয়া টাকার হিসেবও রাজ্যের থেকে চাইছেন খড়গপুরের সাংসদ। ইয়াস মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলে সুর চড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীও। গতবছর 'আম্ফান'-এর টাকা তৃণমূলের নেতাদের পকেটে গিয়েছে। কাটমানি খেয়ে গরীব কিংবা ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ ঝেঁপেছে তৃণমূল এই অভিযোগ করেছিল বিজেপি। এদিকে আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রচুর টাকা খরচ করে বাঁধ মেরামতি করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল পরবর্তী কোনও দুর্যোগ এলেও মানুষের জীবন–জীবিকার খুব বড় ক্ষতি হবে না।  সেই দায়িত্ব নিজের ক্যাবিনেটের মন্ত্রী ও রাজ্যের আধিকারিকদের ওপরে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  তৎকালিন মন্ত্রীরা কাজ করেছেন বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইয়াসের দাপটে ভেঙেছে একের পর এক বাঁধ।  যার যেরে ভাসছে একাধিক গ্রাম। যেসব বাঁধ কোটি কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তা নিমেষেই মাটিতে মিশে গিয়েছে। তাহলে কী ভেজাল জিনিস দিয়ে তৈরি হয়েছিল বাঁধ?‌ প্রশ্ন ছুঁড়ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কাটমানি গিয়েছিল মন্ত্রীদের পকেটে?‌ সেই প্রশ্নও সুচারু ভাবে তুলে দিয়েছেন মমতা।  ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী  সেচ দফতরের সচিবকে দু’‌কথা শুনিয়ে অর্থ দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে।

শুভেন্দু ও রাজীব দু'জনেই ছিলেন সেচমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেচ দফতরকে বকাবকি করলেও মন্ত্রী হিসাবে এই দফতরের দায়িত্বে সম্প্রীতি এসেছেন সৌমেন মহাপাত্র। অন্যদিকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে  এই দফতর সামলেছেন। প্রসঙ্গত, দলত্যাগ করার আগে পর্যন্ত পরিবেশ ও বন দফতরের  দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি  সেচমন্ত্রীও ছিলেন। রাজীবকে বনমন্ত্রী করার সময় শুভেন্দুকে সেচমন্ত্রী করা হয়। নতুন সরকার এসেছে মাত্র কয়েকদিন হল। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নিশানায় যে দুই দলত্যাগী, তা বোঝাই যাচ্ছে।

 

 

রাজীবের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত হচ্ছে
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের  মতে, সেচ দফতরকে নিয়ে তদন্ত শুরু হলে  পরোক্ষে চাপ বাড়তে পারে রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী তথা অধুনা বিজেপির দুই নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। কারণ এই দু’জন নেতা একদা সেচমন্ত্রী ছিলেন রাজ্যের। এই দুই নেতার মধ্যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বন সহায়ক পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে সায় দিয়েছে মমতার মন্ত্রিসভা।  বন ও পরিবেশ দফতরকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দল ছাড়ার আগে পরিবেশ ও বন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন রাজীব।  বন দফতরের ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপনের সিদ্ধান্তের কী হল?‌ তাও জানতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফলে কাটমানি নিয়ে বিজেপি যে অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করছিল তা কার্যত দলত্যাগীদের দিকেই ঘুরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ নাম না করলেও এই কাটমানির দায় এখন চাপছে স্বয়ং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর দিকেই। যাঁরা এখন বিজেপির ছত্রছায়ায়। 
 

Advertisement

Advertisement