কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে (Sovan Chatterjee) প্রকাশ অযোগ্য ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন তাঁরই ছেলে ঋষি চট্টোপাধ্য়ায় (Rishi Chatterjee)। বলেছিলেন, 'কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে কুর্নিশ, তিনি এখনও নিজের পড়ন্ত যৌবনে বান্ধবী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। জনসমক্ষে এক জন মহিলার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, তা-ও জানেন না!' এবার তার জবাব দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। ঋষিকে বানর বলে কটাক্ষ করলেন তিনি।
শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'ঋষি আমার বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেছে। এটা ওর কুশিক্ষা। যার জন্য দায়ী ওর মা রত্নাদেবী। ঋষি বলেছে, ২২ বছর একজন স্ত্রী তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন স্বামীর প্রতি। কিন্তু, সেই ২২ বছর যদি সত্যিকারের কেউ স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করত, বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখত তাহলে তো এসব প্রসঙ্গই আসত না। আমি মনে করি, একজন বাবা হিসেবে ঘরের সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য যা যা করণীয় করেছি। বৈভবের মধ্য দিয়ে নয়, একজন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান যেভাবে মানুষ হয়, সেভাবেই সন্তানদের শিক্ষা-দীক্ষা দিতে চেয়েছি।'
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আরও সংযোজন, 'আমি যখন দেখি রত্নাদেবী বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন, তার প্রমাণ হিসেবে ফোনের চ্যাট, স্বদেশ ও বিদেশে হোটেল একসঙ্গে থাকার প্রমাণ হাতে পাই, তখন বুঝতে পারি, ২২ বছর ধরে যে সংসার করেছি, একজনকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ঘর করেছি, সেটা ভুল ছিল। তখনই বুঝতে পারি, আমাকে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হবে। আমি তাই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেছি। সেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা এখন বিচারাধীন।'
পুত্র ঋষিকে নিয়ে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বলেন, 'ঋষি এখন প্রাপ্ত বয়স্ক। ও সত্যিটা বলছে না। ওর মা ওকে বিপথে চালিত করছে। আমি মেয়র-মন্ত্রী থাকাকালীন দেখেছিলাম, ঋষির জীবন-যাপন ঠিক নয়। মিডিয়াতেও সেই সব ঘটনা এসেছিল। তবে বাবা হিসেবে ওকে যে রকম শাসন করার দরকার, সেগুলো করেছি। কিন্তু তার মায়ের প্রশ্রয়ে ঋষি আরও বিপথগামী হয়েছে। ও যে পোস্ট করেছে বা আমাকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছে সেটা তারই প্রমাণ দেয়। ঋষির জানা দরকার, তার মা আমাকে অশালীন কথা বলে চলেছে। আমার জিভ টেনে ছিঁড়ে দেব বলেছে। আমার গোডাউন থেকে যে ভাড়া পাওয়ার কথা তা থেকেও আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এজন্য সম্পূর্ণভাবে দুলাল দাস ও রত্নাদেবী দায়ী। বিভিন্নভাবে আমি ক্লেম সেটেলমেন্ট করেছি। তার কাগজপত্র দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে আমার যে প্রাপ্য তা আমাকে দেওয়া হচ্ছে না। আমার ব্যাঙ্কের যে স্টেটমেন্ট দেখলে বুঝতে পারবেন, আমার মাসিক আয় কত ছিল আর আজ কত হয়েছে।'
ঋষি চট্টোপাধ্য়ায় বলেছিলেন, তাঁর বাবা শোভন তাঁদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন না। তার পাল্টা শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'এখন ছেলে-মেয়ে বা রত্নার সঙ্গে যোগসূত্র রেখে নতুন করে কোনও বিপদ আনতে চাই না। কারণ, আমি মনে করি মানুষ হয়ে জন্মেছি, কিছু কাজ করার জন্য। আমি যখন রাজনীতি করতাম তখনও কাজ করেছি। মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে। জনপ্রতিনিধি বানিয়েছে। আমি স্বচ্ছ্বতার সঙ্গে মেয়র, কাউন্সিলর, মন্ত্রিত্বের পদ সামলেছি। কিন্তু ঋষি বা রত্নাদেবী যেগুলো করেছেন বা করে চলেছেন তা কাঙ্খিত নয়।'
নাম না করে স্টেটাসে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন ঋষি। লিখেছিলেন, 'কলকাতার প্রাক্তন মেয়র পড়ন্ত যৌবনে বান্ধবী খুঁজে বেড়াচ্ছেন'। তার উত্তরে শোভন চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, 'রত্নাদেবী নানা সময় বৈশাখীকে আক্রমণ করছেন। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষা, রুচিবোধ, সংস্কৃতির ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবেন না রত্নাদেবী। আমার যন্ত্রণাটা হল, ছেলেটাকে ঠাকুর গড়তে গিয়ে বানর বানানো হয়েছে। তাই সে ও এখন রত্নাদেবীর সুরেই কথা বলছে। তার মা যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন কোর্টে, তারপরও কীভাবে আমাকে স্বামী হিসেবে দাবি করেন ? রত্নাদেবী যাদের নিয়ে কোর্টে যান, তাঁরাও ভালো মানুষ নন। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় তো সব সময় আমার পাশে রয়েছেন। আমার খারাপ সময়ে সঙ্গে থেকেছেন। সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা ঋষির নেই।'
ঋষি যেদিন স্টেটাস দেন সেদিনই প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'আমি যে কোনওদিন ডিভোর্স দিতে পারতাম শোভনকে। কিন্তু ছেলে মেয়েদের অধিকারের প্রশ্নে আমি এখনও লড়ে যাচ্ছি।' তা নিয়ে শোভন বলেন, 'অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে রত্নাদেবীর এখন এসব কথা মানায় না। আমি জানি সন্তানকে মানুষ কীভাবে করতে হয়। তাদের প্রতি দায়িত্ব আগেও পালন করেছি, এখনও করছি। কিন্তু ঋষি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার দায়িত্ব রত্নাদেবীর।'