রাজ্যে বাম রাজনীতি কোণঠাসা। গত বিধানসভা ভোটে একটাও আসন পায়নি বাম দলগুলি। কমছে সিপিএমের সদস্য সংখ্যা। ফরওয়ার্ড ব্লকের হালও তথৈবচ। এই প্রেক্ষাপটে এবার বাম-ঘেঁষা থেকে সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটছে নেতাজির দল। আরও ভাল করে বললে 'মার্ক্সবাদ' ছেড়ে 'সুভাষবাদে'ই পরিত্রাণের পথ খুঁজে পেয়েছে। আট দশক পর দলীয় পতাকা বদল করল তারা। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত, পতাকা থেকে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নটি বাদ দেওয়া হল। থাকবে শুধুমাত্র লাফানো বাঘের ছবি।
শনিবার ভুবনেশ্বরে ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয় পরিষদের বৈঠকে দলীয় পতাকা বদলের সিদ্ধান্তে শিলমোহর দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। লাল পতাকার মাঝে লাফানো বাঘের সঙ্গে থাকত কাস্তে-হাতুড়ি। সেই 'কাস্তে-হাতুড়ি' বাদ পড়ল। চারের দশকে চন্দননগরে দলীয় বৈঠকে পতাকায় কাস্তে-হাতুড়ি অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৫২ সালে পুরীর বৈঠকে শ্রেণি সংগ্রামের ভিত্তিতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহমত হন তৎকালীন নেতারা। অনুমোদন পায় লাফানো বাঘ ও কাস্তে-হাতুড়ি পতাকা।
বর্তমান অবস্থায় পতাকা বদল নিয়ে অনেক দিন ধরেই ফব-র অন্দরে আলোচনা চলছিল। জাতীয় পরিষদের বৈঠকে সেটাই চূড়ান্ত হল। ফরওয়ার্ড ব্লক বিবৃতিতে জানিয়েছে,'সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিস্তারে অন্তরায় হয়ে উঠেছিল কাস্তে-হাতুড়ি। অপপ্রচার চালাতে সুবিধা হচ্ছিল। আর শ্রেণি সংগ্রামের চরিত্রেও বদল হয়েছে। পরিষেবাক্ষেত্রে এখন বিপুল মানুষ কাজ করেন। কৃষি ও শিল্পের চেয়ে দেশের জিডিপি-তে অংশীদারিত্ব বাড়ছে পরিষেবা ক্ষেত্রের। ফলে সব শ্রেণির চিহ্ন পতাকায় রাখা সম্ভব নয়। সে কারণে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।'
দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যে সিপিএমের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। ফলে কাস্তে-হাতু়ড়ি সরানোর সিদ্ধান্ত বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানান,'আমরা সুভাষ মতবাদেই চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই বাদ দেওয়া হয়েছে কাস্তে-হাতুড়ি।'
নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসুর কথায়,'তেরঙার উপরে লাফিয়ে ওঠা বাঘ। এটাই পুরনো পতাকা। সেটাই ফিরিয়ে আনা উচিত। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতাজির সদ্ভাবের আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে হবে গোটা দেশে।'
আরও পড়ুন- গরম থেকে স্বস্তি, এই দিনেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি