আজ, শনিবার রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। তবে অনেক গবেশকের মতে, পয়লা বৈশাখ নয় শারদোৎসব হল নববর্ষ প্রবেশের উৎসব। বৃহদ্ধর্ম পুরাণে উল্লেখ রয়েছে- 'আশ্বিনাদি মতাঃ মাসাঃ', অর্থাৎ- আশ্বিন থেকে বছরের মাস গোনা শুরু হয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় শরৎ শব্দের মানে বছর।গবেষকরা বলছেন, রবির উত্তরায়ণ আরম্ভ থেকে হিম বছরের গণনা শুরু। চান্দ্রমাস শুক্ল প্রতিপদে উত্তরায়ণ আরম্ভ ধরে, এর আটমাস পরে এবং প্রতি মাসে এক তিথি বৃদ্ধি ধরে আশ্বিন শুক্ল অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে শরৎ ঋতুর আরম্ভ ধরা হয়েছে। বর্ষা-শরতের সন্ধিক্ষণেই দুর্গা পূজার সন্ধিক্ষণ। তাঁরা এমনটাও দাবি করেন, শারদোৎসব-দুর্গোৎসব নয়, শরৎ-ঋতু হল নতুন বছরের প্রবেশ জনিত উৎসব। এবং সন্ধীপুজোয় যে ১০৮ টা প্রদীপ জ্বালানো হয় তা নাকি নতুন বছরকে স্বাগত করার জন্যই।
পয়লা বৈশাখ সম্পর্কে আরও অনেক চমকপ্রদ তথ্য আছে। যেমন- জানিয়ে রাখি কৃষিভিত্তিক বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে বৈশাখ মাসের নববর্ষ উৎসবের কোনও যোগ নেই। শহরের বণিক ও ব্যবসাদার গোষ্ঠীই বাংলা-নববর্ষ বা হালখাতা উৎসবের হোতা।
পয়লা বৈশাখ নিয়ে আরও একটি তথ্য হল পশ্চিমবঙ্গে দিনটি পালিত হয ১৫ এপ্রিল অথচ বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল। এর কারণ কী ? আসলে বাংলাদেশ যখন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের অংশ ছিল তখন ভারতীয় বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে সরকার ১৯৫২ সালে পঞ্জিকা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়। সেই পঞ্জিকা অনুসারে, পয়লা বৈশাখ ছিল ১৪ এপ্রিল। যদিও মেঘনাদ সাহা যে সংস্কারটি করেন, তা কার্যকর হয়নি। পরে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গে ১৯৬৬ সালে ড. মহম্মদ শহিদুল্লাহের পরিচালনায় একটি কমিটি পুরনো বাংলা দিনপঞ্জির সংশোধন করে। ১৯৮৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে এই পঞ্জিকা গ্রহণ করে। এরপর, জাতীয় দিনপঞ্জির সূচনা ও প্রতি বছর নববর্ষ ১৪ এপ্রিলেই হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন : ডিএ বেড়ে হবে ৫০ শতাংশ, সরকারি কর্মীরা এক ধাক্কায় পাবেন হাজার হাজার টাকা
আবার পয়লা বৈশাখে কেন গণেশ-লক্ষ্মীর পুজো হয়? এর নেপথ্যে রয়েছে প্রচলিত একটি হিন্দু পুরাণের গল্প। গণেশ ও তাঁর ছোটভাই কার্তিকের মধ্যে ত্রিভূবণ পরিক্রমার একটি প্রতিযোগিতা হয়েছিল । কার্তিক ময়ূরে চড়ে ত্রিভূবন পরিক্রমায় পাড়ি দেন। কিন্তু গণেশ শুধু তাঁর বাবা-মাকেই প্রদক্ষিণ করেন । এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে গণেশ বলেন, তাঁর বাবা-মা শিব-পার্বতীই তাঁর কাছে ত্রিভূবন । খুশি হয়ে শিব-পার্বতী গণেশকে আশীর্বাদ করেন। সেই থেকে সব পুজোর আগেই করা হয় গণেশ পুজো। আর লক্ষ্মীর পুজো হয় ধনদেবীর আরাধনায়। সারা বছর গৃহস্থের আর্থিক সমৃদ্ধির কামনায় হয় ধন দেবীর কাছে প্রার্থনার চল বছরের প্রথম দিন।
আরও পড়ুন : ডিএ : 'সরকারি কর্মীরা এই মামলার দিকে তাকিয়ে', শুনে কী বললেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ?
নতুন বছরে যে হালখাতা হয় তার রঙ লাল কেন ? অনেকে বলেন, লাল রঙ শুভ, লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করে লাল সিঁদুরের স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা দিয়ে লেখা শুরু হয় হালখাতার প্রথম পাতায়৷ আবার অনেকের মতে, লাল উজ্জ্বল রঙ। আবার রয়েছে, ঐতিহাসিক মতও। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাদশাহকে খাজনা দেওয়ার সময় লাল শালু কাপড়ে বেঁধে দেওয়া হত৷ সেখান থেকেই হিসাবের খাতার রঙ লাল হয়েছে৷ আর একদল ঐতিহাসিকের মতে, বাংলার হালখাতার প্রচলন শুরু হয় নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ – এর সময় থেকে। রাজস্ব আদায়ের জন্যই এই হালখাতার প্রচলন করেন তিনি। এটিকে লাল খাতা কিংবা খেরো খাতাও বলা হত।