অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ডায়মন্ড মডেল' নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলার পর শোরগোল পড়ে গিয়েছে। নিজের বক্তব্য়ে অনড় শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেছেন,''মমতাই আমার নেত্রী, কেউ পদাধিকারী হতে পারেন, নেতা নয়।'' এদিকে, সংবাদমাধ্যমে কুণাল কটাক্ষ করেন,''সন্ধ্যার পরে কেউ কিছু বলেছেন কিনা বলতে পারব না।'' ফলে তৃণমূলের অন্দরমহলে মমতা ও অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রবীণ-নবীন সংঘাত প্রকাশ্যে এসে পড়ল বলে মনে করছেন অনেকেই।
সংঘাতে প্রবীণ-নবীন!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরে অভিষেকের 'অভিষেক' হয় তৃণমূলে। ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হন। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার জেতেন। একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলে অভিষেকই ছিলেন মমতার পরে দ্বিতীয় ব্যক্তি। অভিষেকের উত্থান নিয়ে ভোটপ্রচারে শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেছিলেন,'হেলিকপ্টার থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিঁড়ি ভেঙে ওঠেননি।' পিসি-ভাইপো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি বলেও তোপ দেগেছিলেন। ভোটের পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু কল্যাণের মন্তব্যের পর জল্পনা জোরালো হয়েছে, দলের মধ্যে অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে সম্ভবত প্রবীণ-নবীন নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কল্যাণের মতো অভিজ্ঞ ও প্রবীণ নেতারা এখনও মমতাকেই নেত্রী বলে মানেন। কারণ রাজনীতিতে এখনও নবাগত অভিষেক।
কী বলেছিলেন অভিষেক?
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়ে রিভিউ বৈঠকের পর অভিষেক বলেছিলেন,''এখন মেলা, খেলা, ভোট সব বন্ধ রাখা উচিত। দু'মাস সব বন্ধ রাখা উচিত। মানুষ বাঁচলে আমরা বাঁচব। এটা আমার ব্যক্তিগত মত।'' পরে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে অভিষেকের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ডহারবারে ৫৩ হাজার মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়। আক্রান্ত হন ১১৫১ জন। সংক্রমণ হার ২.১৬ শতাংশে নেমে এসেছে বলে টুইট করেন অভিষেক।
কল্যাণের তোপ
গঙ্গাসাগর মেলা করাতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তাঁরই দলের নেতা উল্টো কথা বলছেন! এটা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল বলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে নিশানা করেন কল্যাণ। তিনি বলেন,''দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ সর্বক্ষণের। এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত কোনও মত থাকতে পারে না। অনেক বিষয়ে আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই তা প্রকাশ্যে বলা যায় না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধাচারণ। এভাবে রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।''
শুধু তাই নয় অভিষেকের বিরুদ্ধে রীতিমতো দ্বিচারিতার অভিযোগ করেছেন কল্যাণ। ইংরেজি নববর্ষে ডায়মন্ড হারবারে এমপি কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার কথা স্মরণ করিয়ে কল্যাণের প্রশ্ন, সেখানে কি সংক্রমণের সম্ভাবনা ছিল না? তাঁর সংযোজন, মানুষের মন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে কে বেশি বুঝবে? দল বা সরকারের নীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক করেন। এমন কোনও কাজ করা উচিত নয় যাতে মমতার কার্যকলাপে হস্তক্ষেপ করা হয়। আমার বক্তব্য, নির্বাচন কমিশন পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন ঘোষণা করেছে। উনি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিবাদ জানাননি কেন? মমতা দল চালান, সরকার চালান। মমতাকে দেখেই মানুষ ভোট দিয়েছেন। সবাই মমতার জন্য ভোট পেয়েছেন। আমিও।''
কুণালের কটাক্ষ
কল্য়াণের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন,''দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই স্থান অভিষেকের। দলের সাধারণ সৈনিক হিসেবে তাঁর কথা আমাদের চুপ করে শোনা উচিত। সাধারণ সম্পাদক একটা কথা বলেছেন। সেটাই দলের মত। কল্যাণ কখন বলেছে, সন্ধের আগে না পরে, সেটা দেখতে হবে।''
আরও পড়ুন- পুরভোট-সিদ্ধান্ত নিতে হবে কমিশনকেই, নির্দেশ হাইকোর্টের
পাল্টা কল্যাণ
এরপরই কার্যত অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে কল্যাণ জানান,''আমার নেত্রী মমতা। কুণাল কবে দলে ছিল, কবে আছে,ও তো মমতার বিরুদ্ধে বলেছে। আমি তো জেলখানায় বসে বলিনি। দলবিরোধী কথা আমি বলি না। মমতার নেতৃত্বে রাজনীতি করি। কুণাল ঘোষ তো সাংবাদিক হিসেবে ১৬ লক্ষ টাকা মাইনে নিতেন। আজ এমন হাল কেন! এত বড় সাংবাদিক। কোনও মিডিয়া হাউসে একটা চাকরি জুটল না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় দেখছেন। আমাকে দল থেকে কিছু বলা হয়নি।''
আরও পড়ুন- 'ট্রেন নিজেই বেলাইন হয়? সামনে ভোট,' CBI-তদন্ত চান রূপা