যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য যতদিন না নিয়োগ হচ্ছে ততদিন আচার্য উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করবেন। সম্প্রতি ‘আচার্যই উপাচার্য’ ফর্মুলা বাতলে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিস্তর বিরোধ তৈরি হয়। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আর এর মাঝেই ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন ছিল, রবিবার রাতে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তবর্তী উপাচার্য নিয়োগ করলেন তিনি।
গত ৩১ অগাস্ট একটি বিজ্ঞপ্তিতে রাজভবন জানায়, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নেই সেখানে আপাতত রাজ্যপালই আচার্য হলেও উপাচার্যের ভূমিকা পালন করবেন। স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে পড়ুয়ারা যাতে সার্টিফিকেট পাওয়া বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজে বাধা না পায় তা নিশ্চিত করতেই এই বিজ্ঞপ্তি বলে জানান হয়। এর মধ্যেই শনিবার আরও একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে রাজভবনের তরফে। সেই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে সরকার পোষিত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কাছে। সেখানে বলা হয়, আচার্যর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বময় কর্তা উপাচার্য। ফলে, তাঁর নির্দেশ মেনেই কাজ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মীদের। এখানে রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সরকারি নির্দেশ তাঁরা মানতে বাধ্য নন।
রবিবার রাতে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য ঠিক করে দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। এর আগে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বতী উপাচার্য হিসেবে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলেন সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রের খবর, রবিবার রাতে ওই ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কল্যাণী বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেলগাছিয়ার পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়েরও অন্তর্বর্তী উপাচার্য মনোনয়ন করেছেন তিনি। নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীকে নিযুক্ত করেছেন রাজ্যপাল। দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্যহীন থাকায় প্রশাসনিক কাজ আটকে ছিল এই সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে। উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগ করা আগামিদিনে যে আবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত বাড়াবে এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। প্রসঙ্গত আচার্যই উপাচার্য, রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বসু প্রশ্ন তুলেছেন, 'আচার্য-ই উপাচার্য! কীভাবে সম্ভব?' এই প্রসঙ্গে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বসু বলেন, 'এপ্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বলতে চাই যে, মহামান্য আদালত যদি লক্ষ্য করেন যে, রাজ্যপাল বাংলা প্রবাদকে কীভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন! যাহা চালভাজা, তাহা-ই মুড়ি! যিনি আচার্য, তিনি-ই উপাচার্য! কোন আইনের বলে উনি এটা করলেন? আমার মাথায় ঢুকছে না!'বলাই যায় রাজ্যপালের এই পদক্ষেপে এবার আরও প্রশস্ত হল সংঘাতের পথ।