একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। বিরোধীরা সরাসরি নিশানা করছে মুখ্যমন্ত্রীকে। সোমবার দলের কর্মিসভায় তারই জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তুলে ধরলেন তাঁর আয়ের খতিয়ান। নেত্রী বলেন,'আমি ছবি আঁকার প্রদর্শনী করলেই ৬-৭ কোটি টাকা এক সেকেন্ডে তুলে নিতে পারি।'
সরকারি সুযোগ-সুবিধা, এমনকি প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে পেনশন, মুখ্যমন্ত্রীর বেতনও তিনি নেন না। আগেও একাধিকবার বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিনও মনে করিয়ে দিলেন,'১৯৯১ সাল থেকে বিমানের এক্সিকিউটিভ শ্রেণিতে চড়িনি। সেই সময় টিএ, ডিএ পাইনি। প্রতিবার বিমানে চড়লে ৮-১০ হাজার টাকা ক্ষতি হত! তার পরেও সিদ্ধান্ত বদলাইনি। অনেকে জানেই না, বড় বড় কথা বলে! চুরি আমায় কেন করতে হবে? সাতবার সাংসদ ছিলাম। ১ লক্ষ টাকার বেশি আমার পেনশন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সব কিছু মিলিয়ে দেড় লক্ষ পাই। এক আর দেড় মিলিয়ে আড়াই লক্ষ টাকা করে প্রতি মাসে ১১ বছর হিসেব করুন? এক পয়সাও নিইনি। কত হল? আড়াই-তিন কোটি হয়ে গেল।'
২০১৪ সালে ভোটের আগে সারদা কর্তাকে কোটি টাকার ছবি বিক্রি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৎকালীন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। অতিসম্প্রতি ধর্মতলার সভায় কোটি টাকায় ছবি বিক্রি নিয়ে সিবিআই তদন্ত নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই ছবি প্রসঙ্গই আনলেন মমতা। বলেন,'আমি ছবি আঁকার প্রদর্শনী করলেই ৬-৭ কোটি এক সেকেন্ডে তুলে নিতে পারি। কিন্তু আমি তা করি না। মাঝে পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে আমায় করতে হয়েছিল। তার কারণ পার্টির লড়ার ক্ষমতা ছিল না। তখন আমরা প্রদর্শনী করেছিলাম। তাই নিয়েও প্রশ্ন!আমি আমার সৃষ্টি কীভাবে ব্যবহার করব এটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়।'
চলে কী করে? নিজেই তার জবাব দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়,'আমার ১০৭-১০৮টা বই বেরিয়ে গিয়েছে। তার বেশিই হবে। প্রতিবছর বই বিক্রি করে ১০ শতাংশ স্বত্ত্ব পাই আমি। যতটা পাই সেটাই যথেষ্ট। আমার বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। আমার গানের সিডি আছে। ইন্দ্রনীলরা জানে, গোল্ডেন ডিস্ক অনেক আগেই পেয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে আমি ৪-৫ লক্ষ টাকা বছরে স্বত্ত্ব পাই। আমার কী যায় আসে!'
তাঁর পরিবারকেও আর্থিক সাহায্য করতে হয় না বলে দাবি করেন মমতা। বলেন,'আমার পরিবার অনেক বড়। কেউ এক জায়গায় থাকে না। তিনটে প্রজন্ম তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাঁরা নিজের মতো দাঁড়িয়েছে। কাউকে আমি সাহায্য করতে হয় না। বাড়ির বউদের প্রশংসা করতে হয়। বিশ্বাস করুন, বাইরে গেলে ছোট্ট মাথার ক্লিপ কিনে দিই তাতেই খুশি হয়ে যায়। কোনওদিন সোনা-মুক্ত-হিরে চায় না। তার কারণ মানসিকতা এমন তৈরি হয়েছে। অভিষেক কাল আমায় বলছিল, দিদি তুমি আমার বাচ্চাদের কত খেলনা ছিল না। আমাকে তো দিতে না? আমার কাছে ছিল না তো কী করব? ছোটদের আমি সবসময় ভালবাসি।'
আরও পড়ুন- 'দিদির সুরক্ষা কবচ' কর্মসূচির সূচনা মমতার, কী কী সুবিধা?