ইলিশের নাম শুনলে জিভে জল আসে না এমন বাঙালি বোধ হয় খুব কমই আছে। ইলিশ ভাপা, সর্ষে ইলিশ, দই ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, ইলিশ বিরিয়ানি, ইলিশ মাছ ভাজা কিংবা ইলিশের ডিমের পদ ছাড়াও আরও একাধিক রান্না দিয়ে তালিকা অনেক লম্বা। তবে শুধু যে স্বাদ বা গন্ধে এই মাছের রাজকীয়তা তা কিন্তু নয়। ইলিশের নানা পুষ্টিগুণ রয়েছে।
কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছের প্রতি বাঙালির ভালোবাসার কথা প্রায় সকলের জানা। ইলিশ মাছের নানা পদের পাশাপাশি, এই মাছের ডিমও অনেকেরই পছন্দের তালিকার একেবারে শুরুতে থাকে। ইলিশের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলেও, এর ডিমের গুণ সম্পর্কে অনেকেই অবগত নয়।
কীভাবে চিনবেন ডিমওয়ালা ইলিশ?
ডিমওয়ালা ইলিশ মাছের পেট খানিকটা উঁচু এবং মোটা থাকে। আকৃতিতে চ্যাপ্টা। এছাড়া ডিমওয়ালা ইলিশের পেট টিপলেই মাছের পায়ুর ছিদ্র দিয়ে ডিম বেরিয়ে আসবে। ইলিশ কেনার সময় মাছটির পেটে হাত দিয়ে দেখুন। যদি পেটটা নরম এবং ঢিলে মনে হয়, তাহলে বুঝতে পারবেন তাতে ডিম আছে।
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই তামা, পিতলের বাসন ও মূর্তি চকচকে করুন এভাবে! রইল টোটকা
ডিমওয়ালা ইলিশের সেরা সময় কখন?
ডিমওয়ালা মাছ পাওয়ার সবচেয়ে সম্ভাব্য সময় হল অগাস্ট মাসের পর থেকে। তখন শুরু হয় ইলিশের ডিম ছাড়ার মরসুম। একটানা তা চলে অক্টোবর পর্যন্ত। যদিও বর্তমানে বাজারে বছর জুড়েই ইলিশ পাওয়া যায়।
কোন ইলিশের স্বাদ বেশি?
তবে পেটে ডিমওয়ালা ইলিশের স্বাদ তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম এবং তাতে তেলের পরিমাণও বেশি থাকে। ডিম হওয়ার আগে অবধি সাধারণত স্বাদ বেশি হয়। অনেক সময় ইলিশ মাছের পেটে ডিম এসে গেলে তার পেটের তেল কমে যায়, ফলে স্বাদ কিছুটা কম হয়।
ইলিশের ডিম ক্ষতিকর না উপকারী?
ইলিশের ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশি গঠনে এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ শরীরে 'ইকসিনয়ে়ড হরমোন' তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশের ডিম খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। এই মাছের ডিমে রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। থাইরয়েডের ঝুঁকি কমায় আয়ো়ডিন। সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে, যা ক্যানসারের মোকাবিলা করতে পারে। ইলিশের ডিমে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা কিনা রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিস দূরীকরণে সাহায্য করে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন কাটিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি রয়েছে ইলিশের ডিমে। যা শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ইলিশের ডিমে থাকা ইপিএ, ডিএইচ, ডিপিএ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
আরও পড়ুন: এই ৩ ধরণের মানুষ পৃথিবীতে স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করে, দারিদ্র্য শত মাইল দূরে থাকে
কিছু অপকারিতাও আছে
* ইলিশের ডিমে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। অতিরিক্ত খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
* ইলিশের ডিম উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত, ফলে অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে।
* কিছু মানুষের জন্য ইলিশের ডিম অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। অ্যালার্জির লক্ষণগুলোর মধ্যে ত্বকের র্যাশ, চুলকানি, বমি, পেটে ব্যথা ইত্যাদি থাকতে পারে।