গোটা বাংলায় বর্ষা ঢুকে পড়েছে। আর বর্ষা আসতেই প্রতিবারের মতো এবারও ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গত বছরের মতো এ বারও মশাবাহিত ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষের ঘরে ঢুকবে কিনা, তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর। গত বছর ১ লক্ষ ৭ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছিলেন রাজ্যে। প্রসঙ্গত, গোটা কর্ণাটক জুড়ে এখন ডেঙ্গুর আতঙ্ক। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ৭ হাজার পার। বেঙ্গালুরুতে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার। এরাজ্যেও চলতি বছরে বর্ষার শুরু থেকেই হু-হু করে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি মরসুমে গত ৩ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২০৯৫।
বর্ষার মরশুমে এই রোগ ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। মশার প্রভাব কমাতে শুরু হয়েছে অভিযান। পুরসভাকে সতর্ক করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। কোথাও ছাড়া হচ্ছে গাপ্পি মাছ কোথাও আবার ছড়ানো হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার। শুধু এই বারেই নয় প্রত্যেক বারই বর্ষার সময় শহর ও শহরতলিতে মাথা চাড়া দেয় ডেঙ্গু। ডেঙ্গি নিয়ে ইতিমধ্যে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গি প্রতিরোধ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেছেন, পুরসভার তরফে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেবলমাত্র মানুষ সচেতন হলেই ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা যাব। পাশাপাশি তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, সপ্তাহে একবার করে ছাদে বা বাড়ির চারপাশে দেখা কোথাও জল জমে আছে কি না।
ডেঙ্গি কী ?
ডেঙ্গি একটি মারণ রোগ । শহর ও গ্রামীণ এলাকায় মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছে । বর্ষার দিনে এই রোগের শিকার হন বেশির ভাগ মানুষ । বর্ষার দিনে জমে থাকা জলে মশা বংশবিস্তার করে । তাই জমে থাকা জল পরিষ্কার করে, নদী নালা পরিষ্কার করা প্রয়োজন । এই প্রাণঘাতী ডেঙ্গি রোগ প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এই রোগের কারণ
ডেঙ্গি একটি ভাইরাসজনিত রোগ । এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে এই ভাইরাস ছড়ায় । প্রতি চারজনের একজন ডেঙ্গির শিকার হতে পারেন । ডেঙ্গির লক্ষণ হালকা বা গুরুতর হতে পারে । সাধারণত মশার কামড়ের ৩ থেকে ১৪দিন পর উপসর্গ দেখা দেয় । ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেওয়া উচিত, প্রচুর জল পান করা উচিত এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল গ্রহণ করা উচিত ।
ডেঙ্গির লক্ষণ
ডেঙ্গির সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল জ্বর । অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ফুসকুড়ি, শরীরে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং মল । ডেঙ্গি জ্বরের লক্ষণ ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হতে পারে । রোগীরা ক্লান্তি, অস্থিরতা এবং বিরক্তিও অনুভব করতে পারে ৷ প্রাথমিক ভাবে ডেঙ্গির লক্ষণ হল উচ্চ জ্বর, চোখে প্রচণ্ড ব্যথা, জয়েন্টসহ শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, ক্লান্তি বা বিরক্তি, পেটে ব্যথা। ডেঙ্গির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে, ডেঙ্গি জ্বরের লক্ষণগুলি মশার কামড়ের ৪ থেকে ১০ দিন পরে দেখা দিতে শুরু করে এবং তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যার কারণে রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়।এতে শরীরে প্লেটলেট কমতে শুরু করে এবং রক্তপাতের আশঙ্কা থাকে।
ডেঙ্গি জ্বর নির্ণয়
সময়মতো রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসায় ডেঙ্গি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে না । তবে ডেঙ্গি রোগের ক্ষেত্রে এই ধরনের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন । ব্যায়াম, যোগব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান । অন্যান্য ব্যবহারিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে মশা তাড়ানোর ক্রিম, মশা তাড়ানোর স্প্রে, মশার প্যাচ এবং ইলেকট্রনিক ভ্যাপোরাইজার । এই ব্যবস্থাগুলি ছাড়াও জনগণকে তাদের চারপাশ পরিষ্কার করতে হবে, ড্রেন এবং নর্দমাগুলিতে ব্লিচিং স্প্রে করতে হবে এবং জমে থাকা জল পরিষ্কার করতে হবে।
ডেঙ্গি জ্বর হলে যা করবেন
ডেঙ্গি হলে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায়। এতে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে প্রথম থেকেই সচেতন থাকা জরুরি। ডেঙ্গি হলে জ্বর হবেই। আর জ্বর হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখান। জ্বর আসা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৭ দিন পর পর্যন্ত থাকলে এনএস-১ পরীক্ষা করান। জ্বর আসার ৫-৯ দিন পর আইজিএম পরীক্ষা করান। জ্বর আসার অন্তত ১৪ দিন পর আইজিজি পরীক্ষা করানো জরুরি। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গি ধরা পড়লে শরীরে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসার সাহায্যে সুস্থ ডেঙ্গি থেকে সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। শুধু সময়মতো ডাক্তার কাছে যেতে হবে এবং রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে তাজা শাকসবজি, ফল খান। আর প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
ঘরোয়া উপায় ডেঙ্গি প্রতিরোধ
ঘরোয়া উপায় ডেঙ্গি থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারেন৷ মানতে হবে কয়েকটি নিয়ম৷ ডেঙ্গিতে শরীরে জলের মাত্রা যাতে কোনও ভাবে না কমে, তার দিকে নজর দিতে হবে৷ হাইড্রেটেড রাখা খুবই জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব জল পান করুন। এমন ফল খান যাতে জলের পরিমাণ বেশি থাকে। যতটা সম্ভব নারকেল জল, লেবু জল এবং বাটারমিল্ক খান। হাতের কাছে থাকা তুলসী পাতাও ডেঙ্গিতে অনেক উপকার পাবেন৷ ডেঙ্গির সময় উচ্চ জ্বর ও শরীর ব্যথা কমাতে তুলসী পাতার ক্বাথ খেলে অনেক উপকার মেলে। সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ওষুধ হিসেবে আয়ুর্বেদে বহু বছর ধরে তুলসি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডেঙ্গিতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে পেপে পাতার রস৷ এটি খাওয়ার মাধ্যমে লক্ষণগুলি থেকে দ্রুত উপশম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পেঁপে পাতার রসে ডেঙ্গিতে প্লেটলেট কমানো থেকে উদ্ধার করে। পেঁপে পাতা জলে সেদ্ধ করে দিনে একবার পান করুন।