বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেকেই শুনেছেন, 'আঙুল ফাটিও না, নইলে আর্থ্রাইটিস হবে!' ছোটবেলায় এই সতর্কতা হয়তো অনেককেই ভয় পাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ডাক্তাররা বলছেন, আঙুল ফাটানো (Finger Cracking) আর আর্থ্রাইটিস (Arthritis) হওয়ার মধ্যে কোনও সরাসরি সম্পর্ক নেই। বরং এই শব্দের পেছনে রয়েছে একদম বৈজ্ঞানিক কারণ।
কেন হয় এই পপিং শব্দ?
জনস হপকিন্স আর্থ্রাইটিস সেন্টারের গবেষণা বলছে, আমাদের জয়েন্টের ভিতরে ‘সাইনোভিয়াল ফ্লুইড’ নামে এক ধরনের তৈলাক্ত তরল থাকে। এই তরলে গ্যাসের ক্ষুদ্র বুদবুদ জমে। যখন আমরা আঙুল বাঁকাই বা প্রসারিত করি, তখন জয়েন্টের ভিতরে নেতিবাচক চাপ তৈরি হয়, আর সেই বুদবুদ ফেটে গেলে শোনা যায় ‘পপ’ শব্দ। এই গ্যাস বিলুপ্ত হতে কিছুটা সময় লাগে, তাই একই আঙুল বারবার ফাটানো যায় না।
আঙুল ফাটানো কি ক্ষতিকর?
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘন ঘন আঙুল ফাটানোতে বড় কোনও ক্ষতি হয় না। তবে মাঝে মাঝে লিগামেন্ট বা টেন্ডনে হালকা টান পড়তে পারে, যা নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে যাদের এই অভ্যাস আছে, তাদের হাতের গ্রিপ বা মুঠো সামান্য দুর্বল হতে পারে, কিন্তু আর্থ্রাইটিস হয় না।
গবেষণা কী বলছে?
একটি গবেষণায় ২১৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে দেখা গেছে, যারা আঙুল ফাটিয়েছেন, তাদের মধ্যে আর্থ্রাইটিসের হার ১৮.১। যারা ফাটাননি, তাদের মধ্যে হার ২১.৫%। অর্থাৎ কোনও পার্থক্যই নেই।
আরও অবাক করা উদাহরণ দিয়েছেন মার্কিন চিকিৎসক ডঃ ডোনাল্ড উঙ্গার। তিনি ৫০ বছর ধরে প্রতিদিন বাঁ হাতের আঙুল ফাটাতেন, কিন্তু ডান হাতের একটিও নয়। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণায় দেখা গেছে, এত বছর পরেও দুই হাতের কোনওটিতেই আর্থ্রাইটিস হয়নি।
তাহলে আর্থ্রাইটিস কেন হয়?
চিকিৎসকরা বলছেন, আর্থ্রাইটিসের প্রধান কারণ দুটি
প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis), যেখানে দেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুলবশত জয়েন্টে আক্রমণ করে ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
ক্ষয়প্রাপ্ত আর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis), বয়সজনিত বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জয়েন্টের কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়।
ঝুঁকি বাড়ে যদি, বয়স বেশি হয়, ওজন বেশি থাকে, আগেও জয়েন্টে আঘাত লেগে থাকে, পরিবারে আর্থ্রাইটিসের ইতিহাস থাকে।