পুজোর আগে রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। বাংলায় হু হু করে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে। আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সামনে আসছে মৃত্যুর খবরও। সোমবারই নবান্নে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হওড়া ও হুগলির জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব।
ডেঙ্গি হলেই জ্বর হবে এটাই স্বাভাবিক। এদিকে রাজ্যে ভাইরাল ফিভারের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। ফলে জ্বর আদতে ডেঙ্গির লক্ষণ নাকি সাধারণ ভাইরাল ফিভার তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। এর জন্য চিকিৎসকরা কিছু উপসর্গের দিকে নজর দিতে বলেছেন। সেই উপসর্গগুলি ফুটে উঠলেই সতর্ক হতে হবে জনতাকে।
ডেঙ্গি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের পার্থক্য
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের পার্থক্যটা সহজে বোঝার উপায় হল প্রথম তিন দিনে এনএসওয়ান, ভাইরাল অ্যান্টিজেন ডিটেকশন করা। তিন দিন পার হয়ে গেলে ডেঙ্গি আইজিজি ও ডেঙ্গি আইজিএম টেস্ট করতে হবে। সাধারণ ভাইরাস জ্বর বা ফ্লু ভাইরাল সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে। তবে সেই জ্বরে এক ব্যক্তি থেকে অন্যের কাছে যেতে পারে। ফ্লু সংক্রমণের ২-৪ দিন পর উপসর্গ দেখা দেয়। ভাইরাল জ্বর ৩-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং এরপর সাধারণত কোনও জটিলতা থাকে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফ্লু এমনিতেই প্রশমিত হয়ে যায়। ফ্লুয়ের লক্ষণগুলি হল- সংক্রমিত ব্যক্তির জ্বর, হাঁচি-কাশি, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা ইত্যাদি। অন্য়দিকে, ডেঙ্গি হলে ২-৭ দিন স্থায়ী হতে পারে এবং জ্বর ভালো হওয়ার পরও ২-৩ দিন ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
ডেঙ্গির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলিতে সতর্ক হবেন
ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে অন্য কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া শুধু জ্বর হয়, ডেঙ্গি সাধারণত সংক্রমিত মশা কামড়ানোর ৪-১০ দিন পরে শুরু হয়। ডেঙ্গিতে সাধারণত রোগীর প্রেশার কমে যায়। রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলেই সতর্ক হতে হবে। অতীতে ডেঙ্গি হয়ে থাকলে অর্থাৎ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গির সংক্রমণ মারাত্মক মৃত্যুর ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং জটিলতা দেখা দেয়। ডেঙ্গিতে রক্তের প্লেটিলেটের মাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং রোগীকে ৭-১০ দিনের জন্য সঠিক খাবারের মাধ্যমে প্লেটিলেটের মাত্রা বজায় রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে প্লেটিলেট ট্রান্সফিউশন দিতে হতে পারে।
ডেঙ্গি জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গি জ্বর হল একটি মশা-বাহিত ভাইরাস-ঘটিত রোগ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু-তে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোন উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায় না। শুধু অল্প কিছু ক্ষেত্রেই রোগের প্রভাব গভীর হয়। ডেঙ্গির সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল -
ডেঙ্গির গুরুতর উপসর্গ গুলি হোল -
ডেঙ্গির জীবাণু মানুষের শরীরের রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে রক্তনালীতে ছিদ্র তৈরি হয়। রোগীর শরীরে গুরুতর উপসর্গ গুলির কোন একটি দেখা দিলে অতি অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত বা রোগীকে নিকটবর্তী হসপিটালে ভর্তি করানো দরকার। অন্যথায় রোগীর প্রাণসংকট হতে পারে।
ডেঙ্গিতে প্লেটলেটের সংখ্যা সাধারণত কত হয়?
স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সম্পন্ন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয় ১৫০,০০০ থেকে ৪৫০,০০০ প্লেটলেট প্রতি microliter রক্তে। উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু-আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা ২০,০০০ এর নীচে চলে যেতে পারে। এই সময় রক্তপাতের ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়। মাঝারি ঝুঁকি পূর্ণ রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা২১-৪০,০০০/cumm মধ্যে থাকে। অবশ্য ডেঙ্গি সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রেই প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্লেটলেট কাউন্ট কম এবং রক্তক্ষরণের লক্ষণ প্রকাশ পেলে তবেই প্লেটলেট প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। অন্যথায় সংক্রমণ কমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে স্বাভাবিক ভাবে প্লেটলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পায়। এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ফোলেট এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহন।