Dextromethorphan Hydrobromide Cough Syrup: বাচ্চাদের জন্য কাশির সিরাপ কি মারাত্মক? কী বলছেন চিকিৎসকরা, জানুন

কাশির জন্য সবচেয়ে সাধারণ প্রতিকার হল কাশির সিরাপ। তবে, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কাশির সিরাপের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। আধিকারিকরা মনে করছেন যে কাশির সিরাপে ডাইথাইলিন গ্লাইকল নামক একটি বিষাক্ত রাসায়নিক ছিল।

Advertisement
 বাচ্চাদের জন্য কাশির সিরাপ কি মারাত্মক? কী বলছেন চিকিৎসকরা, জানুনশিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকির কাশির সিরাপ?

সিকারের খোরি ব্রাহ্মণন গ্রামে, পাঁচ বছর বয়সী নিত্যানস ক্রমাগত কাশিতে ভুগছিল। তার মা তাকে রাজ্যের বিনামূল্যে ওষুধ প্রকল্পের আওতায় নিকটবর্তী কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে (সিএইচসি) নিয়ে যান। রাত ১১:৩০ টার দিকে তাকে একটি কাশির সিরাপের ডোজ দেওয়া হয়। মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে, ভোর ৩:৩০ টার দিকে,  হেঁচকি শুরু হয়। পরে সকালে হাসপাতালে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।  ভরতপুরের কালসাদা গ্রামে, তিন বছর বয়সী গগনকেও ​​একই সিরাপ - ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড আইপি ১৩.৫ মিলিগ্রাম/৫ মিলি - খাওয়ানো হয়েছিল, যা একটি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেও অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ভেন্টিলেটরে রাখা হলেও তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। 

কাশির সিরাপের কারণে, রাজস্থানের ড্রাগ কন্ট্রোলার  সিরাপের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এবং রীক্ষাগারে নমুনা পাঠায়। ফলস্বরূপ, কাশির সিরাপের মান পরীক্ষ করা হয়েছে। জানা গেছে, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে দেওয়া কাশির সিরাপ শিশুদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রিপোর্ট অনুসারে, কাশির সিরাপের কারণে ভরতপুরে ৪ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং জয়পুরে ২ বছর বয়সী শিশুকন্যা এবং সিকারে ৫ বছর বয়সী একটি ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আরও জানা যাচ্ছে যে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারা জেলায়, গত মাসে কিডনি সংক্রমণের কারণে ছয়টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

রাজস্থানে শিশুদের অসুস্থ করে তোলার জন্য ব্যবহৃত কাশির সিরাপটির নাম ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড  Dextromethorphan Hydrobromide।  এই কাশির সিরাপ কাদের জন্য, এর ডোজ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ডাক্তারদের সঙ্গে  কথা বলেছে Aajtak.in , এবং এর ব্যবহার সম্পর্কেও জেনেছে ।

ডেক্সট্রোমিথোরফান হাইড্রোব্রোমাইড সিরাপ কী?
ডেক্সট্রোমিথোরফান হাইড্রোব্রোমাইড সিরাপ ১৯৫০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং কোডিনের মতো অভ্যাস তৈরি করা ওষুধের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হত। দিল্লির অ্যাপোলো স্পেকট্রা হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুনীল সারিন  Aajtak.in কে বলেন, 'ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড কাশির প্রকোপ কমায় যা মূলত শুষ্ক কাশিতে দেওয়া হয়। এই ওষুধটি মস্তিষ্কে কাশি তৈরি করা  সংকেতগুলিকে ব্লক করে কাজ করে, রোগীকে স্বস্তি প্রদান করে।'

Advertisement

'এই ওষুধটি কেমিক্যাল প্রসেসিং-এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় এবং এতে সক্রিয় যৌগ হিসেবে ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড (Dextromethorphan HBr) থাকে। এটি সাধারণত সিরাপ হিসেবে দেওয়া হয় যাতে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি গ্রহণ করা সহজ হয়।'

কারা ডেক্সট্রোমিথোরফান হাইড্রোব্রোমাইড সিরাপ খেতে পারে?
ডাঃ সুনীল ব্যাখ্যা করেন, 'এই কাশি কমান  ওষুধটি সর্বদা একজন ডাক্তারের নির্দেশে গ্রহণ করা উচিত। ছোট বাচ্চাদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের এই ওষুধটি একেবারেই দেওয়া উচিত নয় এবং ২ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের সঠিক মাত্রায় দেওয়া উচিত। ৬ বছরের বেশি বয়সী শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদেরও এটি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করা উচিত।'

দিল্লির শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের  ইন্টারনাল মেডিসিন এবং সংক্রামক রোগের ডিরেক্টর  ডঃ অরবিন্দ আগরওয়ালের মতে, 'সঠিক মাত্রায় এবং ডাক্তারের নির্দেশে গ্রহণ করলেই এটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং মহিলাদের জন্য নিরাপদ। এই ওষুধটি কাশি নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে রোগীদের ঘুমনো এবং দিনের বেলার কাজকর্ম করা সহজ হয়।'

ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী কী?
ডাঃ সুনীল একমত যে এটি কিছু লোকের মধ্যে ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঘোরা, অথবা হালকা পেট ব্যথার কারণ হতে পারে, এবং কিছু অল্প ক্ষেত্রে, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে, তাই তিনি সর্বদা নির্ধারিত ডোজ গ্রহণের পরামর্শ দেন। যদি কোনও রোগীর লিভার, কিডনি বা অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে ওষুধ খাওয়ার আগে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাঃ অরবিন্দ বলেন, 'আমি সর্বদা ওষুধটি নির্ধারিত মাত্রা এবং সময়ে গ্রহণের পরামর্শ দিই। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই পরিবর্তন বা অতিরিক্ত মাত্রা গ্রহণ ক্ষতিকারক হতে পারে। কেবলমাত্র সঠিক এবং সুষম ব্যবহারই এই ওষুধের সুবিধা নিশ্চিত করে।'

কাশি সিরাপ-সম্পর্কিত মৃত্যু নতুন কিছু নয়
শিশু মৃত্যুর সঙ্গে কাশির সিরাপের যোগসূত্র এই প্রথম নয়। ২০২২ সালে, গাম্বিয়ায় ৬০ জনেরও বেশি শিশু ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ খাওয়ার পর মারা যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সিরাপগুলিতে ডাইইথিলিন গ্লাইকল এবং ইথিলিন গ্লাইকল ছিল, অ্যান্টিফ্রিজে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক, যা কিডনির ক্ষতি করে এবং মৃত্যুর কারণ হয়। একই বছর, উজবেকিস্তান এবং ক্যামেরুনে একই রকম ট্র্যাজেডি ঘটে, যা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ, WHO সতর্কতা এবং মামলার সূত্রপাত করে। এই ঘটনাগুলি ভারতকে তার নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার উপর কঠোর নজর দিতে বাধ্য করেছিল।

ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারত সরকার এবং ওষুধ নিয়ন্ত্রকরা এই মর্মান্তিক ঘটনার পর পদক্ষেপ নেয়। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) সম্প্রতি ৩৫টি অননুমোদিত ফিক্সড-ডোজ কম্বিনেশন নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি কাশির সিরাপও রয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে, ভারত রফতানির জন্য প্রতিটি ব্যাচের কাশির সিরাপের জন্য ল্যাব পরীক্ষা করা এবং বিশ্লেষণের শংসাপত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, ভারত ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট সিরাপের সংমিশ্রণ (যেমন ফেনাইলাইফ্রিন + ক্লোরফেনিরামিন) নিষিদ্ধ করে, যার ফলে এই নিষেধাজ্ঞার স্পষ্ট লেবেলিং প্রয়োজন হয়। শত শত ব্যাচ কাশির সিরাপ তখন থেকে মান পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে, দূষণ এবং ভুল ফর্মুলেশন বারবার চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাচ্চাদের কি কাশি সিরাপ খাওয়ানোর প্রয়োজন?
শিশুদের, বিশেষ করে ৬ বছরের কম বয়সীদের বেশিরভাগ কাশি ভাইরাসজনিত,  কোনও ওষুধ ছাড়াই নিজে থেকেই সেরে যায়। তাদের কড়া  সিরাপ দেওয়া প্রায়শই উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। 
 

POST A COMMENT
Advertisement