তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথা রয়েছে। ব্রিটেনে সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘিরে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সৌজন্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। আসলে ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা অনেক দিন ধরেই এই দাবি করে আসছে। কারণ, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তুতো ভাইবোনের বিয়ের প্রথা রয়েছে। অর্থাত্ একই রক্তের সম্পর্কে বিবাহ।
সম্প্রতি ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস ফার্স্ট কাজিন বা প্রথম তুতো (খুড়তুতো, মামাতুতো, পিসিতুতো ইত্যাদি) ভাই-বোনের বিয়ের উপকারিতা নিয়ে ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। ন্যাশনাল হেল্থ রিপোর্ট ঘিরে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিতর্ক তৈরি হয়। প্রবল বিতর্কের আবহে এই রিপোর্টটি চুপচাপ সরিয়ে দিয়েছে ব্রিটেনের সরকার।
এখন প্রশ্ন হল, ফার্স্ট কাজিন বা প্রথম তুতো ভাই-বোন কারা?
প্রথম তুতো ভাই-বোন (First Cousin) মানে হল, যাঁর মা-বাবা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মা-বাবা নিজেরা ভাই-বোন। সোজা কথায়, কাকা, পিসি, মাসি, মামার ছেলে মেয়েরা। খুড়তুতো, মামাতুতো, পিসিতুতো ভাইবোনেরা। একেবারে পরিবারের মধ্যেই বিয়ে।
ব্রিটিশ সরকারের রিপোর্টে কী লেখা হয়েছিল?
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের রিপোর্টে, প্রথম কাজিন বিতর্কের সুবিধাগুলি তুলে ধরে এই প্রতিবেদনটি জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার জিনোমিক্স শিক্ষা কর্মসূচির অংশ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এর শিরোনাম ছিল 'যুক্তরাজ্য সরকারের কি প্রথম কাজিনদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করা উচিত?' ফক্স নিউজের মতে, প্রথম কাজিনের বিয়ের সুবিধা ব্যাখ্যা করার সময়, এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এটি মানুষকে তাদের পরিবার সম্প্রসারণের সুবিধা দেয় এবং অর্থনৈতিক সুবিধাও দেয়।
এনএইচএস রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে আন্তঃপরিবার বিবাহ 'দীর্ঘদিন ধরে বৈজ্ঞানিক আলোচনার বিষয়' হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে যুক্তরাজ্যে প্রথম তুতো ভাই বোনের বিবাহ বৈধ, যখন রাজা অষ্টম হেনরি তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর খুড়তুতো বন ক্যাথরিন হাওয়ার্ডকে বিয়ে করেছিলেন। এমনকী আমেরিকাতেও, ফেডারেল স্তরে তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ নয়, এই প্রথা এখনও ২০টি স্টেটে বৈধ। ডেইলি মেল-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এনএইচএসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী প্রথম-কাজিন বিবাহে, জিনগত রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণকারী শিশুর ঝুঁকি কম ছিল। অসুস্থ সন্তান জন্মের হার কম ছিল।
প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টার্মার কী বলছেন?
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টার্মার বলেছেন, প্রথম তুতো ভাইবোনের বিয়ে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। তাঁর বক্তব্য, আইন করে বন্ধ করার বদলে মানুষকে সচেতন করাই বেশি কার্যকর পথ। কারণ, অনেক পরিবারের কাছে এই ধরনের বিয়ে কেবল সামাজিক নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশও। স্টার্মার ও তাঁর লেবার সরকারের অবস্থান, এই প্রথাকে হঠাৎ বন্ধ করার পরিবর্তে জেনেটিক পরীক্ষা ও শিক্ষা-সচেতনতার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো উচিত। তাঁর যুক্তি, সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দিলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, বরং সঠিক তথ্য জানিয়ে মানুষকে সচেতন করাই উপযুক্ত উপায়।
তবে এই অবস্থানেই রক্ষণশীল দল কনজারভেটিভদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। কনজারভেটিভ এমপি রিচার্ড হোল্ডেন অভিযোগ করেছেন, লেবার সরকার বিপজ্জনক ও নিপীড়নমূলক সাংস্কৃতিক প্রথার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তিনি সংসদে এমন বিবাহ নিষিদ্ধ করার জন্য আইন আনার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কনজারভেটিভ এমপি ক্লেয়ার কৌতিনহোও এক্স-এ মন্তব্য করেছেন, এনএইচএস যখন ধূমপান, মদ্যপান, বা বিএমআই নিয়ে এত বিধিনিষেধ আরোপ করে, তখন কাজিনদের বিয়ে নিয়ে তারা একটিও সতর্কবাণী দেয় না, এটা বিস্ময়কর।
অন্যদিকে লেবার দলের এমপি ইকবাল মহম্মদ বলেছেন, অনেক পরিবারের কাছে কাজিন-বিয়ে সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্থিকভাবে স্থিতিশীলতার প্রতীক। তবে তিনি স্বাস্থ্যঝুঁকি মানছেন এবং বলেছেন, বিয়ে নিষিদ্ধ করার বদলে জেনেটিক টেস্টই হওয়া উচিত সমাধান।