আমাদের সবার শরীরেই একটি জৈব ঘড়ি আছে। এই ঘড়িকেই বলে 'সার্কেডিয়ান রিদম'। এই রিদমই ঠিক করে দেয় কখন আমাদের ঘুম পাবে, কখন আমরা জেগে উঠব, কখন খিদে পাবে, আর কখন শরীর ক্লান্ত হবে। যদি এই রিদম এলোমেলো হয়ে যায়, তাহলে শরীরের ঘুম, হরমোন নিঃসরণ, মনোযোগ, সব কিছুর উপরই খারাপ প্রভাব পড়ে। তাই সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। আদিম মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠেই শিকারে, খাদ্য সংগ্রহে বেরিয়ে পড়ত। আর সন্ধ্যা হলেই অন্ধকারে গুহা বা কুটিরে আশ্রয় নিত। স্ক্রিন, টিউবলাইটের আলোর বালাই ছিল না। কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে হাজার হাজার বছরের সেই প্রবৃত্তিই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তবে চিন্তা করবেন না। খুব সহজ কিছু অভ্যাস বদলেই এই রিদম আবার ঠিক করে নেওয়া যায়। নিচে রইল তেমনই কিছু উপায়। এগুলি মাত্র ৩ দিন পর পর করলেই নিজেই পরিবর্তন টের পাবেন। তাই আর বেশি দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সকালে সূর্যের আলোয় দাঁড়ান
সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাকৃতিক আলো। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই অন্তত এক মিনিট বাড়ির বারান্দা, উঠোন বা ছাদে গিয়ে সূর্যের আলোয় দাঁড়ান। চেষ্টা করুন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে। এতে চোখ ও মস্তিষ্কে সিগন্যাল পৌঁছে যায়। মেলাটোনিন হরমোন কমে গিয়ে আপনি দ্রুত সতেজ হয়ে উঠবেন। দিনের শুরুটা হবে চনমনে। কফি বা কড়া চা খেলে যেমন ফিল হয়, তেমনটাই পাবেন।
সন্ধ্যার পর আলো কমান
সার্কেডিয়ান রিদম অনুযায়ী, সন্ধ্যার পর শরীর ঘুমের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু টিউবলাইট বা চড়া LED লাইট জ্বালিয়ে রাখলে, আমাদের মস্তিষ্ক বুঝতেই পারে না যে রাত হয়ে গিয়েছে। তাই সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে হালা আলো ব্যবহার করুন। ডিম লাইট, নাইট ল্যাম্প(লাল, কমলা বা হলুদ) বা হালকা হলুদ আলো ব্যবহার করুন। এতে শরীর ধীরে ধীরে ঘুমের মুডে চলে যাবে।
স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন
রাতের দিকে মোবাইল ফোন, টিভি, ল্যাপটপ বা মনিটরের স্ক্রিন থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। এই সব স্ক্রিন থেকে যে নীল আলো বেরোয়, তা সার্কেডিয়ান রিদমকে সম্পূর্ণ ঘেঁটে দিতে পারে। এতে রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়। ঘুমের মানও খারাপ হয়। ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে ফোন দূরে সরিয়ে রাখার অভ্যাস করুন। বরং এই সময় বই পড়ুন। চ্যাটিংয়ের বদলে ফোনে কথা বলুন।
নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনেও এই রুটিন মেনে চলুন। এতে শরীরের জৈবঘড়ি ঠিকঠাক কাজ করে। মানসিক চাপ কমে, মন ভালো থাকে, একাগ্রতা বাড়ে।
সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখলে যা হবে
গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হবে
সকালে সহজে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন
কাজ ও পড়াশোনায় মনোযোগ আসবে
হজম ভাল হবে
মুড ভালো থাকবে ও মানসিক চাপ কমবে
সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক রাখার জন্য কোনও ওষুধের দরকার নেই। শুধু প্রয়োজন কিছু সহজ পরিবর্তন। সূর্যের আলোয় সময় কাটান। রাতের আলো কমান, স্ক্রিনের দিকে কম তাকান। এটুকু করলেই শরীরের ঘড়ি সঠিক পথে চলবে। মিলবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন।