কচু একধরনের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। মানুষের চাষকৃত প্রাচীন উদ্ভিদগুলির মধ্যে একটি হল কচু। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। তবে পূর্ববঙ্গীয়দের মধ্যে কচুর বিভিন্ন পদ খাওয়ার চল বেশি।
স্থলভূমি ও জলভুমি উভয়রূপ স্থানে কচু জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই বেশি। প্রজাতিভেদে কচুর মুল, শিকড় বা লতি, পাতা ও ডাটা সবই মানুষের খাদ্য। কচুর বহু আয়ূর্বেদীয় গুণ আছে। তবে অনেকের কচু খেয়ে গলা চুলকায়। এজন্যে এই সবজি খাওয়া নিয়ে একটা ভীতি কাজ করে বহু মানুষের মনে।
কচু বা ওল খেলে গলা চুলকায় কেন?
আসলে, ওল কিংবা কচুর কান্ডে, মূলে এবং পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক একটি যৌগ থাকে৷ এই যৌগ র্যাফাইড নামে বেশি পরিচিত। র্যাফাইডের গড়ন সূঁচালো, তারকা আকৃতির, বা গোলাকার হয়। এসব আকৃতির র্যাফাইড গলায় আটকে চুলকায় বা ব্যথা করে। উচ্চ তাপে রান্না করলে র্যাফাইড বেশির ভাগ সময়ে গলে যায়। কিন্তু কিছু র্যাফাইড হাই হিটেও গলে না এবং গলায় অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এমনকী তা কিডনিতে জমে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তবে কিছু কচুতে র্যাফাইড থাকে না, সেগুলি নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়। সাধারণভাবে এই সমস্যা থেকে বাঁচতে টক খাবার খেতে হয়। কারণ র্যাফাইড বা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্ষারীয়, এটি টক খাবারের অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়।
কীভাবে ওল বা কচু রান্না করলে গলা চুলকাবে না?
* ওল বা কচু তাজা রাখতে বাজারে জল ছিটিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও এটি জল দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে রান্না করতে হয়। ভেজা কচু কাটলে হাত চুলকাতে পারে। তাই কিনে আনার ২-৩ দিন পরে কাটা ভাল। নয়তো ফ্যানের নীচে জল শুকিয়ে নিতে পারেন।
* এই ধরনের সবজি ধোয়ার সময়ে স্ক্রাবার ব্যবহার করে কাদামাটি পরিষ্কার করতে পারেন। এটি সরাসরি হাত না লাগালে চুলকাবে না। পরিষ্কারের পরে জলটা ভাল করে নিংড়ে নিতে হবে। নয় খাওয়ার সময়ে গলা ধরার সম্ভাবনা থাকবে। প্রয়োজনে ধোয়ার সময় হাতে গ্লাবস পরে নিতে পারেন।
* কচু রান্না করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট লবণ দিয়ে মাখিয়ে রাখলে, কষ বের হয়ে যাবে। লবণ মাখানো কচু একটি ছিদ্রযুক্ত জালিতে নিয়ে কয়েকবার ঝাঁকিয়ে নিন। এরপর জল দিয়ে আবার ভাল করে ধুয়ে নিন।
* এছাড়া ওল বা কচু গরম জলে আধ সেদ্ধ করে, সেই জল ফেলে দিতে পারেন।
* রান্না করার সময়ে অনেকটা রসুন কুচি এবং সামান্য তেঁতুল বা লেবুর রস দিন। লেবু বা তেঁতুল রান্না শেষ করার ৫ মিনিট আগে ওল বা কচুতে দেবেন। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে খাওয়ার সময়ে গলা ধরবে না।
* এছাড়া রসুন কুচি তেলে ভেজে তা কচু বা ওলের তরকারিতে পুনরায় দিতে পারেন।
* এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হল টমেটো ব্যবহার করা। এই সবজি রান্নাতে টমেটো দিন বেশি করে। টমেটো, লেবুর রস বা তেঁতুলের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
* রান্নায় টক না দিতে চাইলে, ভাত খাওয়ার সময় অনেকটা লেবুর রস দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে এরপর খান।