
মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়, হজমে সাহায্য করে এবং বিপাকীয় প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মদ্যপানের কারণে বর্তমানে তরুণদের মধ্যেও ফ্যাটি লিভার একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে।
লিভার পরিষ্কার রাখতে বা 'ডিটক্স' করতে অনেকে নানা ভেষজ চা, দামি সাপ্লিমেন্ট কিংবা বিশেষ ডায়েট অনুসরণ করেন। কিন্তু বিখ্যাত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ এরিক বার্গ জানিয়েছেন, মাত্র তিন দিনের মধ্যেই ঘরোয়া উপায়ে লিভারের প্রাকৃতিক ডিটক্স প্রক্রিয়া উন্নত করা সম্ভব, কোনও ব্যয়বহুল সাপ্লিমেন্ট ছাড়াই।
লিভার ডিটক্স কী এবং কেন জরুরি?
লিভার ডিটক্সের মূল ভিত্তি হল একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অটোফ্যাজি (Autophagy)। এটি এমন এক জৈব প্রক্রিয়া, যেখানে শরীরের কোষ পুরনো, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিষাক্ত উপাদান ভেঙে নতুন কোষ তৈরিতে ব্যবহার করে। ফলে প্রদাহ কমে, কোষ তরুণ থাকে এবং লিভারসহ পুরো শরীরের কার্যকারিতা বাড়ে।
অটোফ্যাজি সক্রিয় করার উপায়
ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস (প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপাদান)
কেটোজেনিক ডায়েট
নিয়মিত ব্যায়াম
পর্যাপ্ত ঘুম
ক্যালোরি সীমিত খাদ্যাভ্যাস
শুষ্ক উপবাস বা 'Dry Fasting' কী?
ডাঃ বার্গের মতে, লিভার পরিষ্কারের সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলির একটি হল শুষ্ক উপবাস। এতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাবার ও জল উভয়ই বন্ধ রাখা হয়। উপবাসের সময় শরীর জমে থাকা চর্বি ভেঙে ফেলে এবং সেই প্রক্রিয়ায় শক্তির পাশাপাশি জলও উৎপন্ন হয়, যা ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র এক দিনের শুষ্ক উপবাসই তিন দিনের জল উপবাসের সমান ফল দিতে পারে।
শুষ্ক উপবাসের মূল ধাপসমূহ
শরীর প্রস্তুত করুন, উপবাসের আগে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।
পিত্ত প্রবাহ সচল রাখুন, পিত্ত লবণ বা 'bile salts' গ্রহণ করলে বিষাক্ত পদার্থ সহজে নির্গত হয়।
বিটরুট ও আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে জল পান করুন।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস, প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা খাবার বা জল ছাড়া থাকুন।
সন্ধেয় স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্রকলি, কেল, ফুলকপি ইত্যাদি ক্রুসিফেরাস সবজি ও মুরগির মাংস খান।
খাওয়ার পর পর্যাপ্ত জল ও ভেষজ চা পান করুন।
গভীর ঘুম নিন, কারণ ঘুমের সময়ই অটোফ্যাজি সবচেয়ে সক্রিয় থাকে।
শুষ্ক উপবাসের উপকারিতা
লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি
শরীরের ফোলাভাব বা ইনফ্ল্যামেশন কমে
হজমশক্তি উন্নত হয়
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়