ইলিশের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশ। আর ইলিশ খেতে হলে এক সপ্তাহের বাজার মুলতবি রাখতে হচ্ছে। ফলে ইলিশ ধীরে ধীরে যদি উচ্চবিত্তের মাছ হয়ে যায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যে ইলিশ সাধ্যের মধ্যে থাকছে, তার স্বাদ গন্ধ কোনটাই সুলভ নয়। ফলে বাড়ি আনলেও গিন্নির মন মিলছে না।
এই সুযোগে ইলিশের বিকল্প চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। ইলিশের মত স্বাদ গন্ধওয়ালা বেশ কিছু মাছ বাজারে রয়েছে। তবে অবিকল ইলিশের মতো দেখতে চন্দনা মাছ অনেকে ধরতেও পারেন না। ইলিশ বলেই মনে করে আনেন। ইলিশের দামেই কিনে আনেন তা। ফলে সেখানে ঠকে যাওয়ার সুযোগ থাকছে ষোল আনা। তবে এমন মাছ রয়েছে যা দেখে আপনি বুঝবেন ইলিশ নয় কিন্তু ইলিশের মতই দেখতে। ফলে ঠকার সুযোগও কম। সে কারণে এর দামও অনেকটাই কম। তাই ইলিশ না হলেও অন্তত বাড়িতে মুখ রক্ষা করতে এই মাছ আনতেই পারেন। খেতে মন্দ হবে না।
কী সেই বিকল্প, যাতে ইলিশ না খেয়ে ইলিশের স্বাদ দেবে। সেই মাছের নাম হচ্ছে পেংবা, ইতিমধ্যেই রাজ্যে বেশ কিছু জায়গায় তা চাষও শুরু হয়েছে। হলদিয়াতে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় এই পেংবা মাছ বাজারে আনার জন্য বড় আকারে চাষ করা হচ্ছে।
আমাদের দেশে কেবল মনিপুরেই প্রেম পেংবা মাছের দেখা মেলে। তবে সে মাছ খেয়ে বাংলার মাছ চাষী ও বিজ্ঞানীরা চমৎকৃত হয়েছেন। এ যেন অবিকল ইলিশ। তাই তাকে ধরে আনা হয়েছে এ রাজ্যের জলাশয়ে। এর জন্য নদী বা সমুদ্রের প্রয়োজন নেই। বিশেষ পদ্ধতিতে চৌবাচ্চাতেই পেংবা চাষ করা সম্ভব। মৎস্য দপ্তরের অধিকর্তারা জানিয়েছেন যে, পেংবা মাছ খুবই সুস্বাদু। অবিকল ইলিশের মত খেতে। দেখতে আলাদা হতে পারে, তবে স্বাদে অত্যন্ত পাকা জিহ্বা ছাড়া পার্থক্য করা কঠিন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চৌবাচ্চায় পেংবা মাছের চাষ সম্ভব এবং তা খুব অল্প সময়েই খাদ্য যোগ্য হয়ে উঠছে।
পেংবা নাম শুনে বিতৃষ্ণা জাগতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন যে নামে কি বা আসে যায়। স্বাদে সাক্ষাত ইলিশ। চেহারা ইলিশের মত নয়। কাঁটাও তেমন নেই। কিন্তু ইলিশের রেসিপিতে রান্না করে পাতে তুলে দিলে ধরে কার সাধ্যি আলাদা করে। চিনের হুনান প্রদেশে এই মাছের কদর রয়েছে।
বিশ্বের অন্য জায়গাতেও এই মাছ কম বেশি পাওয়া যায়। তবে বাঙ্গালির মত কেউ তেমন ঝালে ঝোলে অম্বলে রান্না করতে জানে। ফলে অন্য জায়গার পেংবা রান্না খেয়ে সেই স্বাদ আপনার নাও ঠেকতে পারে। তাই স্টিমড পেংবা খেয়ে আপনি আদৌ এর স্বাদ বুঝবেন না। এর জন্য আপনাকে ঢুঁ মারতে হবে বাঙালির হেঁশেলেই।
রাজ্যের অন্যত্র চাষ করলে সহায়তা করবে মৎস্য দপ্তর। শুধু হলদিয়া নয় এ রাজ্যের যে কোন জায়গাতেই মাঠের চাষ করা সম্ভব এবং কেউ যদি চাষ করতে চান, নিজের পুকুর থাকে বা জলাশয় লিজে নিয়ে চাষ করতে পারেন। চৌবাচ্চাতে চাষ করা সম্ভব। তাহলে রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তর তাদের সহায়তা করবে। মিলতে পারে বিনামূল্যে চারাও।
নিজস্ব সত্তা থাকলেও যেহেতু ইলিশের মতো খেতে তাই একে অনেকে গরিবের ইলিশ বলেও বর্ণনা করছেন। তাই এর দাম খানিকটা কম। একটা চারা তিন চার মাসের মধ্যেই ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়ে যায় এবং বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো যায়। চারার দাম মাত্র ১০ থেকে ১৫ টাকা। বিক্রয় মূল্য ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।চৌবাচ্চায় চাষ করে তিন চার মাসের মধ্যেই মোটা লাভ তোলা সম্ভব। সাহায্য চাইলে মৎস্য দপ্তরের যে কোনও জেলার অফিসে যোগাযোগ করলেই হবে।