যেখানে দেশে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ ধীরে ধীরে অস্তমিত, পাশাপাশি টিকাকরণ প্রক্রিয়াও চলছে জোরকদমে, সেখানে নতুন একটি বিষয় ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। চমকপ্রদ বিষয় সামনে এসেছে, কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে মানুষের মধ্যে বেলস পালসি অর্থাৎ মুখের প্যারালাইসিসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে আগেও রক্ত জমাট বাঁধার মতো বেশ কিছু সাইডএফেক্ট দেখা গিয়েছে কিন্তু এই লক্ষণ আগে বোঝা যায়নি।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা অনুযায়ী, বেলস পালসি কোভিদ ১৯ এর ভ্যাকসিন এর দুর্লভ সাইডএফেক্ট এর হিসেবে রিপোর্টে জমা হয়েছে। ওই সব লোকের মধ্যে এই ধরণের সাইড এফেক্ট বেশি দেখা যাচ্ছে, যাদের করোনা আগে হয়ে গিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, ক্লিভল্যান্ড মেডিকেল সেন্টার এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যাদের মধ্যে করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তাদের তুলনায় করোনা যাদের হয়ে গিয়েছে, তাঁদের টিকা দেওয়ার পরে এই ধরনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
মোট হাজার করোন আক্রান্তের মধ্যে শুধু মাত্র আটজন বেলস পালসি কেস পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যেক দশ হাজার ভ্যাকসিন নেওয়ার মানুষের হিসেব ধরলে ১৯ জনের এই লক্ষণ মিলেছে।
বেলস পালসি এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে হঠাৎ রোগীর চেহারায় এর লক্ষণ দেখা যায়। এখানে রোগীর চেহারায় আচমকা মাংসপেশিতে শিথিলতা ধরা পড়ে। প্যারালাইসিসের মত অনুভব হয়। মুখের একটা অংশ ঝুলে যাওয়ার ঘটনাও দেখা গিয়েছে। চোখ বন্ধ করতে সমস্যা তৈরি হওয়া শুরু করে হঠাৎ। সাধারণভাবে এটি একটি অস্থায়ী স্থিতি বলে জানানো হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে রোগী বেরিয়ে আসে বলেও জানানো হয়েছে। এই লক্ষণ অবশ্য ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি খুব অল্পসংখ্যক রোগীর মধ্যে এই ধরনের লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সুস্থ হওয়ার পরেও ভবিষ্যতে এই পক্ষাঘাতের লক্ষণ ফিরে আসতে পারে।
তবে ঠিক কি কারণে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তা অবশ্য এখনও পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে বের করতে পারেননি। বিজ্ঞানীদের অনুমান, শরীরে ইমিউন সিস্টেম অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া তৈরি করলে এই ঘটনা ঘটতে পারে। যা রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় বলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জোনস হপকিন্স এর মত অনুসারে বেলস পালসি ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার এবং কিছু সংক্রমণের কারণে হতে পারে। প্রত্যেক বছর খুব কম লোকের মধ্যেই কিন্তু কিছু পরিমাণ লোকের মধ্যে এই সংক্রমণ দেখা দেয়। আমেরিকায় এক লক্ষ লোকের মধ্যে ১৫ থেকে ৩০ জন প্রত্যেক বছর বেলস পালসি আক্রান্ত হন বলে রিপোর্টে জানা গিয়েছে।
সাম্প্রতিককালে বিস্তৃত করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই বেলস পালসি করোনা, কোভিড ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে খুব কমই লোকের মধ্যে এই প্যারালাইসিস এর সংখ্যা সামনে এসেছে।
সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৪৮ হাজার রোগীর মধ্যে চিকিৎসকেরা করোনা রোগীর মধ্যে ২৮৪ জন বেলস পালসির ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। এর চেয়ে বেশি বলা যায়, কোভিড রোগীর মধ্যে বেলস পালসিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ০.০৮ শতাংশ। এই ২৮৪ জন রোগীর মধ্যে অর্ধেকের একটু বেশি ৫৪ শতাংশ করোনা ভাইরাস হওয়ার আগে বেলস পালসির কোনও রকম লক্ষণ ছিল না। বাকি ৪০ শতাংশের আগে এই ধরণের লক্ষণ ছিল।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, করোনা রোগীদের মধ্যে বেলস পালসি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন, ফাইজার এবং মডার্ন ভ্যাকসিন এর দুটি পরীক্ষায় মোট ৭৪ হাজার রোগী মধ্যে ৩৭ হাজার ভ্যাকসিন নিয়েছেন। যার মধ্যে মাত্র ৮ জনের বেলস পালসির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আবার ৭ জনই ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন।
করোনা রোগী এবং টিকাকরণ হওয়া রোগীর মধ্যে বেলস পালসির ঘটনার তুলনা করে গবেষকরা জানিয়েছেন, ৬৪ হাজার করোনা রোগীর সঙ্গে যারা টিকাকরণ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তার মধ্যে জানা গিয়েছে যে, এই বেলস পালসি হওয়ার সংখ্যা টিকাকরণ হয়ে যাওয়া রোগীর মধ্যে ৬.৪ শতাংশের বেশি নয়।
এই নতুন স্টাডি, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন দাড়া শেষ যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার দাবিকেই সমর্থন করেছে। এই অনুসারে কোভিড ভ্যাকসিন এবং বেলস পালসি এর মধ্যে কোন সংযোগ নেই। আবার একদল বলেছেন, করোনা সঙ্গে এর যে সংযোগ রয়েছেই, তা এখনও বিষয়টিতে সম্পূর্ণ সহমত হতে পারেননি কেউই।