করোনার প্রতিরোধের জন্য সবাইকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়া খুব সাধারণ, তবে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে যা চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে। কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কিছু মানুষের রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
দিল্লির ফোর্টিস সি-ডক সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর ডায়াবেটিস হাসপাতালের টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে যে ভ্যাকসিন থেকে সম্প্রতি রক্তে সুগার ব্যদ্ধির ৭-৮টি ঘটনা সামনে এসেছে। এঁদের মধ্যে একজন ৫৮ বছর বয়সী মহিলাও রয়েছেন যার গত ২০ বছর ধরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রয়েছে।
মেডিকেল জার্নাল, ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবোলিক সিনড্রোমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে ওই মহিলা কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নেন ৪ মার্চ। ফোর্টিস সি-ডকের অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপ মিশ্র বলেন, "ভ্যাকসিনের আগে এই মহিলার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ওষুধ এবং ডায়েটের মাধ্যমে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল, তবে ভ্যাকসিনের পরে এটি এক মাসের জন্য বাড়তে দেখা গেছে। মহিলাকে তার ডায়াবেটিস ড্রাগ, মেটফর্মিনের ডোজ বাড়াতে হয়েছিল।"
আর একটি ঘটনায় ৬৪ বছরের এক ব্যক্তি গত ১৮ জানুয়ারি কোভশিল্ডের প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। মেডিকেল জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁর রক্তচাপ ১৩০/৮০ মিমি এইচজি থেকে বেড়ে ১৬০/৯০ মিমি এইচজি হয়ে যায়। এ ছাড়া কয়েক ঘন্টা ধরে তার ট্যাকিকার্ডিয়া, প্রচুর ঘাম এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যাও হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে।
ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে, এই ব্যক্তির রক্তে সুগার তিন দিন ধরে বাড়তে থাকে , যদিও পরে তা ধীরে ধীরে নিজে থেকেই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে ৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গেও। যেখানে ভ্যাকসিন পাওয়ার পরে তার রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়েছে, যা ১৫ দিনের মধ্যে কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই নিজে থেকে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল।
কোভিশিল্ডের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে ক্লান্তি, সর্দি, মাথা ব্যথা, জ্বর এবং ফ্লুর মতো লক্ষণ রয়েছে। পেটে ব্যথা, লিম্ফ নোড বৃদ্ধি, চুলকানি বা ফুসকুড়ি জাতীয় লক্ষণগুলিও কিছু ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন যে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি বা রক্তে গ্লুকোজের কোনও পরিবর্তন ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের তথ্যে দেখা যায়নি।
জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, 'তিনটি ক্ষেত্রেই ভাল ডায়েট এবং ব্যায়াম দীর্ঘদিন ধরে গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই ক্ষেত্রে, ব্লাড গ্লুকোজ বাড়ার সমস্ত কারণগুলি বাদ ছিল। সম্ভবত ভ্যাকসিনের কারণে তাদের রক্তের গ্লুকোজ স্তর হঠাৎ বেড়ে গেছে।'
ডাঃ মিশ্র বলেন, 'ভালো কথা হ'ল এই সমস্ত ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সঠিক স্তরে ফিরে এসেছিল এবং চিকিৎসায় কোনও বড় পরিবর্তন করার দরকার হয়নি। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের হঠাৎ রক্তে শর্করার বা রক্তচাপের বৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। সতর্ক হয়ে যে কোনও বড় সমস্যা রোধ করা যেতে পারে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) চলতি বছরের মার্চ মাসে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের জন্য একটি কোভিড গাইডলাইনও জারি করেছে। গাইডলাইনে বলা হয়েছিল যে করোনার সংকটে সুগার, বিপি, হার্টের রোগীদের নিয়মিত সমস্ত ওষুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। চিকিৎসকরা অন্য পরামর্শ না দিলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না।