ভারতে করোনারভাইরাসের টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ লক্ষ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার লোকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এদের মধ্যে ৭ জনের শরীরে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এরপরেই কোভিশিল্ড এবং কোভাক্সিন ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের তরফে ফ্যাক্টশিট স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কাদের এই ধরণের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়।
টিকাকরণ প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই কোভ্যাক্সিনকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। কেউ এই টিকা কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তো কেউ আবার প্রশ্ন করেছেন, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে। বিতর্কের মাঝেই এবার ভ্যাকসিন নির্মাতা ভারত বায়োটেক জানিয়ে দিল, সকলের জন্য নয় কোভ্যাক্সিন। কারা কারা এই টিকা নিতে পারবেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে হায়দরাবাদের এই সংস্থা। মঙ্গলবার ভারত বায়োটেকের তরফে একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করা হয়েছে।
অ্যালার্জির ধাত থাকলে কোনওভাবেই নেওয়া যাবে না কোভ্যাক্সিন। জ্বর থাকলে এই টিকা নেওয়া চলবে না। ব্লাড ডিসঅর্ডার থাকলে। অথবা নিয়মিত রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরাও এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না।
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে, অথবা সেই ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এমন কোনও ওষুধ সেবন করলে এই টিকা না নেওয়াই ভাল। অন্তঃসত্ত্বারাও এই টিকা নিতে পারবেন না। সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন এমন মহিলারাও টিকা নেবেন না।
অন্য কোনও কোভিড ভ্যাকসিন নিয়েছেন এমন কেউ কোভ্যাক্সিন নিতে পারবেন না। জটিল অসুখ থাকলে নেওয়া যাবে না কোভ্যাক্সিন।
কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট তাদের ফ্যাক্ট শিটে যাদের গুরুতর অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
কোভিশিল্ডে যে যে উপকরণ আছে, সেগুলিতে যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁদের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রোজেনেকার তৈরি করোনা টিকা না নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিরাম। একইসঙ্গে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যে টিকাগ্রাহকদের গুরুতর অ্যালার্জি সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তাঁদেরও কোভিশিল্ড নিতে বারণ করা হয়েছে। সিরামের তরফে জানানো হয়েছে, কোভিশিল্ডে এল-হিস্টিডিন, এল-হিস্টিডিন হাইড্রোক্লোরাইড মনোহাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড হেক্সাহাইড্রেট, পলিসরবেট ৮০, ইথানল, সুক্রোজ, সোডিয়াম, ক্লোরাইড, ডি-সোডিয়াম ইডিটেট ডিহাইড্রেট, ইনজেকশনের জন্য জল থাকে।
কোভিশিল্ড নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাতে হবে যে কোনও ওষুধ, খাবার, কোনও টিকা বা কোভিশিল্ডের কোন উপকরণের ফলে অতীতে কোনও গুরুতর অ্যালার্জি সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল কিনা। শারীরিক পরিস্থিতির বিষয়ে খুঁটিনাটি জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে। টিকাগ্রাহক যদি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণের থেকে দুর্বল বা যাঁরা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তারকারী ওষুধ খান এবং জ্বর থাকে বা রক্ত জমাট বাঁধার ধরনে সমস্যা হয় বা রক্ত কম ঘন হয়, তা টিকা নেওয়ার আগেই জানাতে বলেছে সিরাম।
এদিকে কোভিশিল্ডের মতো কোভ্যাক্সিনে কী কী উপকরণ থাকে, তা জানিয়ে দিয়েছে ভারত বায়োটেক। ভারত বায়োটেকের তথ্য অনুযায়ী, কোভ্যাক্সিনে ৬৪ গ্রাম হোল-ভিরিয়ন মৃত সার্স-কোভ-২ অ্যান্টিজেন (স্ট্রেন : এনআইভি-২০২০-৭২০), অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড জেল (২৫০ মাইক্রোগ্রাম), টিআরআর ৭/৮ অ্যাগনিস্টের (১৫ মাইক্রোগ্রাম) মতো উপকরণ থাকে। তবে কোভ্যাক্সিন দেওয়ার আগে গ্রাহকরা টিকা নেবেন কি নেবেন না, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে।