করোনা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে সকলের ভরসা এখন ভ্যাকসিন। এই কারণেই ১ মে থেকে ১৮ বছরের ওপরে যারা রয়েছে, তাঁরা ভ্যাকসিন নিতে পারবেন বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ভ্যাকসিনে শুধু আপনি নয়, আপনার পরিবার এবং চারপাশের মানুষও সুরক্ষিত থাকতে পারেন। তবে ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও অনেকের মনেই সন্দেহ রয়েছে। UNICEF-র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যে ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে ও পরে কী কী যত্ন নেওয়া উচিত। জেনে নিন বিস্তারিত।
ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে
ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে কিছু গবেষণা করে নেওয়া ভাল। যেমন কীভাবে শরীরে এটি কাজ করে। প্রতিটি ভ্যাকসিন কতটা আলাদা। কাদের বিশেষ ধরনের ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ইউনিসেফের মতো নির্ভরযোগ্য সূত্রের থেকে আগত ভ্যাকসিন সম্পর্কিত তথ্যগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি।
ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়ও অবশ্যই মাস্ক পরে থাকবেন, যেটিতে নাক এবং মুখ পুরো ঢেকে থাকে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে আরও কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যেমন স্যানিটাইজার,আইডি প্রুফ। ঢিলে -ঢালা বা হাফ হাতা পোষাক পরে ভ্যাকসিন নিতে যাবেন যাতে স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সহজ হয়। যদি আপনি বিশেষ কোনও ওষুধ খান, তাহলে সেই সম্পর্কে স্বাস্থ্যকর্মীকে সম্পূর্ণ তথ্য দিন।
ভ্যাকসিন গ্রহণের আগে কোভিড লক্ষণ থাকলে কী করবেন
আপনি যদি কোভিড পজিটিভ হন বা লক্ষণগুলি থাকে তাহলে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্ল্যান এই মুহূর্তে বাতিল করুন। আগে থেকে বুকিং থাকলে ফোন, মেসেজ বা ই-মেইলের মাধ্যমে আপনার টিকাদান কেন্দ্রকে জানিয়ে দিন। ১৪ দিনে পরে লক্ষণগুলি আর না থাকলে বা আপনি সুস্থ থাকলে ভ্যাকসিন নিন।
টিকা কেন্দ্রে এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন
টিকা কেন্দ্রে মুখ থেকে মাস্ক খুলবেন না এবং সেটি বারবার স্পর্শ করবেন না। বাকিদের থেকে কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। দরজার হ্যান্ডেল, আসবাবপত্র ইত্যাদি স্পর্শ করার পরে হাত স্যানিটাইজ করুন ও সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। মুখে একদম হাত দেবেন না।
ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়ে
ভ্যাকসিন নেওয়ার সময়ে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যদি সেই সময়ে আপনার নার্ভাস লাগে, তাহলে মনে রাখবেন এই সামান্য ব্যথা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। সূচের দিকে তাকাবেন না এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নিন।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে
ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি নির্দেশ দেয় যে আপনার শরীর, প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে কাজ করছে। ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, হালকা জ্বর, ক্লান্তি ভাব, মাথা ব্যথা, পেশী ও গাঁটে ব্যথা এগুলি কয়েকটি সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যা কিছুদিনের মধ্যে নিজে থেকেই নিরাময় হয়।
গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে অনেকে কিছু গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন। তীব্র চুলকানি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, গা বমি ভাব, অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির মধ্যে কোনও লক্ষণ অনুভব করলে, অবিলম্বে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে বলুন। একটি ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হতে ৩০ মিনিট মতো সময় লাগতে পারে। সেজন্যেই টিকা নেওয়ার পর কমপক্ষে ৩০ মিনিট টিকা কেন্দ্রে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে ভুলবেন না
ভ্যাকসিন কেন্দ্র থেকে বেরনোর আগে অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজের তারিখটি জেনে নিন। প্রথম ডোজের ৪-৮ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজের পরে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলেও অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। শুধু মাত্র কোনও শারীরিক কারণে আপনার চিকিৎসক যদি পরামর্শ দেন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ না করার। সেক্ষেত্রে এটি এড়ানো উচিত। ক্যালেন্ডারে দ্বিতীয় ডোজের তারিখটি নোট করুন।
বাড়িতে যাওয়ার পরে কী করবেন
ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলিও আপনার রুটিনকে কয়েক দিনের জন্য প্রভাবিত করতে পারে। আপনার ডায়েটে যতটা সম্ভব তরল যুক্ত করুন। চিকিৎসকেরা ভ্যাকসিনে ব্যথার ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল গ্রহণের পরামর্শ দেন। যদি আপনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তবে যিনি টিকা দিয়েছেন সেই স্বাস্থ্যকর্মীকে জানান। ভ্যাকসিনের নিয়েছেন যেই স্থানে সেখানে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে, জায়গাটিতে একটি পরিষ্কার কাপড়ের তৈরি ঠান্ডা ব্যান্ডেজ লাগাতে পারেন।
সুরক্ষিত থাকুন
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও সুরক্ষার দিকে সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়া দরকার, কারণ কোনও গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে ভ্যাকসিন, এই সংক্রমণ ছড়াতে বাঁধা দেয়। এর জন্য, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য আপনার হাত ধুতে হবে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, সঠিক বায়ু চলাচল রাখুন এবং একটি মাস্ক ব্যবহার করুন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে অন্যের সঙ্গেও সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন এবং তাঁদেরও ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহ দিন।