ইতিমধ্যেই বহু প্রতীক্ষিত সুখবর এসে গিয়েছে। এ রাজ্যে ফের পুজোর মরশুমে আসতে চলেছে বাংলাদেশের ইলিশ। সৌজন্যে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঘোষণা করেছেন ভারতকে ইলিশ উপহার দেওয়া হবে। তিনি ভারত সফরে আসছেন, সঙ্গে আনছেন ইলিশ।
ফলে উৎসবের মরশুম ভালই কাটবে বলে মনে করছে ইলিশপ্রেমীরা। দেশে প্রবেশের আগেই ইলিশের নানা রেসিপি দেখতে ইউটিউবে ঢুঁ মারতেও কসুর করছেন না আম বাঙালি। ভাল ইলিশের জন্য এতদিন যে হাপিত্যেশ ছিল, তা সুদে আসলে মিটিয়ে নেওয়ার আকাঙ্খা রয়েছে। দামও যেমনই হোক। সব সময় ভাল ইলিশ মেলে না। তাই ইলিশ চাইই চাই।
কিন্তু বাংলাদেশের ইলিশ তো আসছে। সেই আনন্দে দু'একদিন ইলিশ খাবেন, তা না হয় ঠিক আছে। কিন্তু তা বলে আনন্দের আতিশয্যে রোজ ইলিশ খেতে শুরু করলে কিন্তু কপালে বিপদ আছে। হ্যাঁ এমনটাই সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইলিশে বিপদ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেদার ইলিশ খাওয়া মোটেই ভাল কাজ নয়। শরীরের পক্ষে তা মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যারা সপ্তাহে দু-তিন দিন ইলিশ রাতে তুলছেন, তাঁদের সতর্ক করেছে একটি গবেষণা রিপোর্ট। বলা হচ্ছে ইলিশ বেশি খেলে বাসা বাঁধতে পারে ভয়ানক রোগ। নিয়মিত ইলিশভোজীদের তাই সাবধান হতে বলেছে ভারতের একটি গবেষণা। জানা গিয়েছে ইলিশের বেশি খাওয়া ভয়ানক রোগ তৈরি করতে পারে শরীরে।
ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSI) সতর্কতা
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ফুট সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অফ ইন্ডিয়া ২০২১-এই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তাতে বেশি ইলিশ খেলে বিপজ্জনক বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ১২০ রকমের সামুদ্রিক মাছকে। যেগুলি বেশি খেলে বিষক্রিয়া সম্ভাবনা প্রবল। এই তালিকায় আরও মাছের সঙ্গে প্রথম দিকেই রয়েছে বাঙালির প্রিয় ইলিশও।
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা বাড়তেই বিপত্তি। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও এফএসএসআই এর অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে গোটা দেশে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই বেড়েছে। যা আগে অনেক কম ছিল। সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন এই ধরনের কিছু মারছে হিস্টিডিন নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্তরকম বেশি আছে। যা histamin তৈরি করে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়।
অ্যালার্জি থাকলে ইলিশ নয়
যাঁদের হাই অ্যালার্জি আছে, তাঁরা ইলিশ থেকে দূরে থাকুন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া এর (AANI)-র ব্যাখ্যা, শ্বাসের সমস্যা, গায়ে গোটা বের হওয়া, নাক দিয়ে জল, অবিরত হাঁচি, পেটে খিঁচ ধরা, গায়ে জ্বালা ভাব তৈরি হওয়া, ফোঁড়া বেড়ানোর মতো ঘটনা ঘটে। ওই সামুদ্রিক মাছগুলিতে বেশি হিস্টামিন থাকায় এলার্জি দেখা দেয়।
সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করায় সমস্যা
এফএসএসআই সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যা হচ্ছে জল থেকে মাছটি তুলে তারপর সেটি মহাজনের কাছে আসার পর সেখান থেকে আড়তদার হয়ে বিভিন্ন প্রদেশের বাজারে পৌঁছাচ্ছে। সেখান থেকে ছোট বাজারের খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। তারপর তা কিনে এনে বাড়িতে নিয়ে এসে রান্না করা হয়। এই দীর্ঘ সময় যে তাপমাত্রায় মাছটি রাখার কথা সেটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না তাতে সমস্যা তৈরি হয়।
ইলিশ খান সমঝে
জীববিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে কোনও সামুদ্রিক মাছে কমবেশি হিস্টিডিন থাকেই। ডিকার্বোস্কিলেজ নামে একটি উৎসেচকের প্রভাবে হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়, সেটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক।