আদিকাল থেকেই মানুষ সৌন্দর্যপ্রেমী। যুগে যুগে রূপচর্চার বিভিন্ন উপকরণের আবিষ্কার বারবারই মানুষের সৌন্দর্যসচেতন চিত্তের পরিচয় দেয়।
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য বারবার স্পা, ফেসিয়াল কিংবা বিউটি ট্রিটমেন্টের নাম আসলেও পারলালের পিছনে সময় ও টাকা সবটাই যায়।
তবে আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা হারবাল উপাদানগুলো ত্বক ভাল রাখতে কিন্তু ম্যাজিকের মত কাজ করে। আর সেই তালিকার অন্যতম একটি অংশ ডিম। চুলের প্রোটিন ট্রিটমেন্টে ডিমের ব্যবহার সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি। তবে ত্বকের যত্নেও ডিমের ভূমিকা কম নয়। আর এই ডিমের প্যাক তৈরির জন্য আপনাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। ঘরোয়া উপায়েই তৈরি করা যায় এই প্যাক। আসুন জেনে নেই ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিমের নানা প্যাক সম্পর্কে।
সবধরণের ত্বকের জন্য
ডিমের সাদা অংশ এবং দুধ ভাল করে মিশিয়ে নিন। এরসাথে কিছু গাজরের রস দিয়ে দিন। এবার মুখটি ধুয়ে এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি সব ধরণের ত্বকের জন্য উপযোগী।
শুষ্ক ত্বকের জন্য
একটি ডিমের কুসুম, এক চা চামচ মধু একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বক আর্দ্র করে তুলবে।
বলিরেখা রোধের জন্য
ডিমের কুসুম থেকে সাদা অংশ আলাদা করে নিন। মুখ ভাল করে ধুয়ে নিন। একটি তুলোর বল ডিমের সাদা অংশে ভিজিয়ে সেটি মুখে ভাল করে লাগান। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ত্বকের রক্ত চলাচল সচল রাখে। এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করে ত্বক পরিস্কার রাখতেও সাহায্য করবে।
তৈলাক্ত ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য
ডিমের সাদা অংশের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন। প্যাকটি ভালো করে মেশান। খুব বেশি পাতলা যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এই প্যাকটি ত্বকে ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল শুষে নেবে। ব্রণ হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য
বেসনের সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। এরসাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মেশান। মিশ্রণটি ত্বকে ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
ইদানীং ত্বকের ভাঁজ পড়া এবং কালচে ভাব একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যা দূর করতে মটর ডাল বাটা, বাঙ্গির খোসা, ডিমের কুসুম, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও মধুর মিশ্রণ বেশ উপকারী।
ত্বকে রক্ত চলাচল বজায় রাখতে ডিমের কুসুম একটি অপরিহার্য উপাদান। এ ক্ষেত্রে একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ ঘন ক্রিম এবং এক টেবিল চামচ তাজা গাজরের রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা হয়। মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট ব্যবহারেই এটি ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত করে তোলে।
ব্ল্যাকহেডসের সমস্যারও দারুণ সমাধান দেবে ডিমের কুসুম। একটি ব্রাশে ডিমের কুসুম মাখিয়ে সেটি নাকে লাগিয়ে একটি কাগজ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এভাবে প্রথম লেয়ারটি শুকিয়ে গেলে আরেকটি লেয়ার লাগিয়ে নিতে হবে। তারপর তা শুকিয়ে গেলে ম্যাসাজ করে গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
আজকাল এসব সমস্যার চেয়েও প্রকটভাবে যেটিতে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ভুগছে তা হলো ব্রণ। এর জন্য প্রয়োজন ডিমের কুসুম, এক চা-চামচ মধু এবং এক চা-চামচ বাদাম তেল। এসব উপাদান একটি পাত্রে এমনভাবে মেশাতে হবে যেন ফেনা ওঠে। এরপর প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। তবে ফেসপ্যাক লাগানোর পর শুকিয়ে এলে তা প্রথমে জল দিয়ে এবং পরে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া ত্বকে কোনো ধরনের এলার্জি থাকলে ডিমের প্যাক লাগানোর আগে হাতের কবজিতে অল্প করে লাগিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। এভাবে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।