ভালবাসার মানুষের সঙ্গে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা অবশ্যই শারীরিক এবং মানসিক ভাবে উপভোগ্য। কিন্তু জানেন কি, নিছক উপভোগ্যতার বাইরেও নিয়মিত যৌনতার বেশ কিছু গুরুত্ব রয়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে, ‘হেলথ বাডি’ নামক মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা-রিপোর্ট। আটলান্টা ইউনিভার্সিটির হেলথ ডিপার্টমেন্ট পরিচালিত এই গবেষণা দাবি করছে, এমন বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে, যেগুলি প্রতি দিন সঙ্গমের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিকার করাও সম্ভব।
বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের দাবি, যে সব শারীরিক সম্পর্কে মনও যুক্ত থাকে, সেখানে কেবল রতিক্রীড়ার আনন্দ বা উপভোগটুকুই শেষ কথা নয়, বরং এমন যৌনতায় যোগ হয় কিছু শারীরিক লাভও। সুখী যৌন জীবন কেবল সম্পর্ককেই তরতাজা রাখে তা নয়, শরীরকেও তুলনামূলক ভাবে অনেক সুস্থ রাখে। রোগ দূরে রাখাই শুধু নয়, মেদ কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সক্ষম সুস্থ যৌন সম্পর্ক। নিয়মিত যৌন মিলন মানুষের আয়ু বাড়ায়। এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। জেনে নিন নিয়মিত সুস্থ যৌন সম্পর্ক কী কী শারীরিক উপকারও করে?
হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমায়
নিয়মিত যৌনতার ফলে মানুষের হৃদয় ভাল থাকে বলেই দাবি গবেষকদের। দৈনিক সঙ্গম হার্টের রোগকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
মাথাব্যথা ও যেকোন ব্যথার ওষুধ
যৌনতার সময়ে শরীরে অক্সিটোসিন ক্ষরণ হয়, এবং এন্ড্রোফাইন-এর বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মাথাব্যথা থেকে প্রায় তাৎক্ষণিক ভাবে মুক্তি মেলে। দৈনন্দিন কাজের চাপ, বয়স বৃদ্ধির কারণে গায়ে–হাতে, পায়ে ব্যথা তো নিত্যদিনের সমস্যা। নিয়মিত যৌন মিলন ব্যথা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে।
প্রস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধ
চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের শরীরে এই রোগের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি থাকে। কিন্তু নিয়মিত সঙ্গম প্রস্টেটকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে, ফলে দূরে থাকে প্রস্টেট ঘটিত রোগও।
ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে
নিয়মিত যৌনতা শুধু যে স্তনের ক্যানসারকে দূরে রাখে তা-ই নয়, পাশাপাশি এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে তাকে চিহ্নিত করাও সহজ হয়।
অবসাদ দূরে রাখে মন ভাল করে
গবেষণা জানাচ্ছে, দৈনিক যৌনতা মানুষকে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে সক্ষম। মন ভাল করে নিয়মিত যৌন মিলন। ভাল ঘুম হলে, শরীরে রক্ত চলাচল ভাল হলে কিংবা চাপ কমে গেলে মন যে ভাল থাকবে তা স্বাভাবিক। নিয়মিত যৌন মিলনে কাজে উৎসাহ আসে। সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
নিদ্রাহীনতা দূর করে
যাঁরা ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতায় ভোগেন, তাঁদের জন্য নিয়মিত যৌনতার দাওয়াই অত্যন্ত কার্যকর। সঙ্গম শরীরকে সম্পূর্ণ রিল্যাক্সড অবস্থায় পৌঁছতে সাহায্য করে, ফলে ঘুমও চলে আসে তাড়াতাড়ি।
প্রস্রবাঘটিত সমস্যা
সঙ্গমের ফলে পেলভিস এলাকা সুগঠিত হয় ও মাংসপেশিগুলি দৃঢ় হয়ে ওঠে। ফলত, প্রস্রাবঘটিত সমস্যা, যেমন হঠাৎ করে প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
মেনোপজ দূরে সরিয়ে রাখে
নিয়মিত যৌন মিলন মহিলাদের শরীরের হরমোনের সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে। নিয়মিত যৌন মিলন মেনোপজকে দূরে সরিয়ে রাখে।
সর্দি-জ্বরের সমস্যা দূর করে
বিশ্বাস হওয়া কঠিন, কিন্তু এটা সত্যি যে, সঙ্গমের আনন্দের সময়ে শরীরে অ্যান্টিবডি প্রোডাকশন বেড়ে যায়। এর ফলে সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি হয়। পরিণামে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগকে দূরে রাখা সম্ভব হয়। গবেষকদের মতে প্রত্যেক সপ্তাহে এক বা দু’বার যৌন সঙ্গম করলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। সঙ্গমের সঙ্গে একটি অ্যান্টিবডির যোগ বর্তমান। এই অ্যান্টিবডিকে বলে ইমিউনোগ্লোবিউলিন। এই অ্যান্টিবডিটি আমাদেরকে রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে যে কোনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় ইমিউনোগ্লোবিউলিন।
শরীরের ওজন কমায়
নিয়মিত সঙ্গীর সঙ্গে যৌন মিলন করলে প্রচুর ক্যালোরি বার্ন হয়। জিম–যোগার থেকেও যা অনেক বেশি কার্যকরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনন্দ করতে করতেই ক্যালোরি বার্ন করা যাবে। বিশেষ করে ত্রিশ বছরের পর থেকে নিয়মিত যৌন মিলন ক্যালোরি বার্নে সাহায্য করে।শারীরিক মিলন কিন্তু দারুণ এক্সারসাইজও। এতে মাংসপেশির স্ফীতি হ্রাস পায়, এবং গাঁটের ব্যয়াম হয়। ফলে শরীরের ব্যথা-বেদনা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়।
গর্ভধারণজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়
গর্ভবতী মহিলাদের উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা খুব কষ্ট দেয়। এর ফলে অনেক সময়ই শরীরের কিছু কিছু অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু নিয়মিত যৌন মিলন করলে এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেক্স করলে মেয়েদের অভ্যন্তরীন অঙ্গ এবং পেশী সচল থাকে। রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। জিমে গিয়ে শরীরের বাইরের দিক তো সুঠাম করে তোলা যায়। কিন্তু শরীরের ভেতরের দিককেও ভাল রাখতে দরকার নিয়মিত সেক্স। এছাড়াও নিয়মিত যৌন সম্পর্কে থাকলে মহিলাদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডও সময়মতোও হতে থাকে। ফলে সন্তানসম্ভবা হওয়ার সুযোগও অনেক বেশি থাকে এবং সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা কম হয়।
ত্বকের নিষ্প্রাণ অবস্থা দূর করে
সঙ্গমের ফলে ত্বকে জমে থাকা টক্সিনস বেরিয়ে যায়। ফলে ত্বকে ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসে। শরীরে-শরীরে ঘনিষ্ঠতা রক্ত সংবহন বাড়িয়ে তোলে। ফলে ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ হয় বেশি। যৌন সম্পর্কে যেটুকু ঘাম হয়, তার মাধ্যমে শরীরের টক্সিনও দূর হয়। এ সব কারণে ত্বক জেল্লাদার হয় ও তার জৌলুশও বাড়ে।
গন্ধ অনুভবের ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত যৌন মিলনে গন্ধ অনুভূতির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এমনটাই বলছে গবেষণা।
চাপ এবং রক্তচাপে ধন্বন্তরী
নিয়মিত যৌন মিলন চাপ কমায়। লো ব্লাড প্রেশারের সমস্যাও নিয়মিত যৌন মিলনে সেরে যেতে পারে। নিয়মিত যৌন মিলন করলে ভাল ঘুম হয়।
হাড় সুস্থ
নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কে থাকলে শরীরে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হাড়ের জোর বাড়ে। পেশীকে টানটান ও সতেজ রাখতেও সাহায্য করে যৌনতা।
যৌবন ধরে রাখতেও সঙ্গমের ভূমিকা রয়েছে
পাশাপাশি যৌবন ধরে রাখতেও সঙ্গমের ভূমিকা বর্তমান বলে দাবি করা হয়। সক্রিয় রোমান্টিক জীবনে থাকলে যুগলের দীর্ঘায়ু হয় বলে দাবি। এমনকি রোজ সঙ্গম করলে ত্বকে ভিটামিন ডি বাড়ে ফলে বয়সের ছাপ পড়ে না।