ওজন কমাতে হলে, ডায়াবেটিস কমাতে হলে ভাতের বদলে রুটি খান। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদেরা হরদম এ পরামর্শ দেন। কিন্তু ভাতের বদলে রুটি খেয়ে আসলে লাভটা কী? দুটোই তো শর্করা!
ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভাঙে, তারপর রক্তে শোষিত হয় গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে।
বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা অনুসারে ওজন) অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ। বিজ্ঞানীরা এ ধরনের শরীরকে বলেন আপেল শেপড বডি, মানে মধ্যভাগ স্ফীত। আরেক ধরনের শরীর হলো পিয়ার শেপড বডি, মানে বাহু-কাঁধ-হাত-পা পেশিবহুল হলেও মধ্যভাগ সরু।
দ্রুত বাড়ছে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদ্রোগের ঝুঁকি। তাই শর্করা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলেও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে, আর খেতে হবে বেছে। যে শর্করায় অপেক্ষাকৃত গ্লুকোজ কম উৎপন্ন হয়, সেটাই আদর্শ।
রুটির গুণাগুণ বিবেচনা করলে এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। এছাড়াও এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ তৃপ্ত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রুটির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়াম রয়েছে এবং এটি ভাতের মতো দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
যদি রুটি খান, তাহলে ময়দার রুটি একদমই খাবেন না। মধ্যবিত্ত বাড়িতে যদিও আটার রুটিই বেশি হয়। তবুও ওজন কমাতে চাইলে এবং সুস্থ থাকতে চাইলে জোয়ার, বাজরার রুটি খেতে পারেন। দুটো রুটির সঙ্গে এক বাটি সবজির তরকারি অবশ্যই রাখবেন। এমন সবজি বেছে নেবেন যাতে শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং যাতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি।
রাতে যদি ভাত খাওয়া পরিকল্পনা করেন তাহলে ভাতের সঙ্গে সব সময় হালকা খাবার খাবেন। ভাতের সঙ্গে ডাল ও একবাটি সবজির তরকারি খেলেই যথেষ্ট। আপনি চাইলে খিচুড়ি বানিয়েও খেতে পারেন।
কিন্তু বাজারে যে সাদা চাল পাওয়া যায় তা অত্যন্ত পলিশড, যার কারণে এটির বেশিরভাগ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভাত খেতে চাইলে ব্রাউন রাইস বেছে নেওয়াই ভাল।
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়, তা হল কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা। এই ক্ষেত্রে ভাত ও রুটির মধ্যে যে বিশেষ কোনও পার্থক্য রয়েছে তা নয়। কিন্তু পুষ্টির দিকে তাকালে দেখা যাবে, দুটো খাদ্য পণ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ ভিন্ন।