আজকাল কম বয়সিদের মধ্যে দেরি করে ঘুমতে যাওয়া যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও কাজ নেই হাতে, তবু টিভি দেখে বা ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অযথা ঘোরাফেরা করে শুতে যেতে যেতে ঘরির কাঁটা ১১ টা পেরিয়েই যাওয়া যেন রোজনামচা হয়ে উঠেছে। কারও কারও তো শুতে যেতে ১-২ টোও বেজে যায়।
জেনে রাখুন এমন অভ্যাস কিন্তু একেবারেই ভাল নয়। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে রাত ১১ টার পর শুতে গেলে একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে শরীর।
১১টার পরে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস যদি আপনার থেকে থাকে তাহলে জেনে রাখুন ৪০ পেরতে না পেরতেই হার্টের অসুখ তো ঘাড়ে চেপে বসবেই, সেই সঙ্গে লেজুড় হতে পারে ডায়াবেটিসের মতো মারণ ব্যাধিও। আসলে দেরি করে শুতে গেলে আমাদের শরীরের ভিতরে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে, তার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার ধরনেও পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ফলে হার্টের ক্ষতি হতে সময় লাগে না।
শুধু তাই নয়, দেরি করে শুতে যাওয়া এবং সকালে ৭-৮ টার মধ্যে উঠে যাওয়ার কারণে দিনের পর দিন ঘুমের কোটা কমপ্লিট হয় না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেরে যাওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে দিনের পর দিন রাত ১১ টার পর শুতে গেলে হার্টের রোগ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পায়, তেমনি আরও কিছু রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও যায় বেড়ে।
অনেককেই ব্যস্ততার কারণে দেরি করে ঘুমাতে হয়। কিন্তু অফিস থাকার কারণে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে যেতে হয়। ফলে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার কারণে দেহের ভেতরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। আর এমনটা হওয়ার কারণে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ভয় তো থাকেই। সেই সঙ্গে আরও হাজারখানেক রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। শুধু তাই নয়, আয়ুও চোখে পরার মতো কমে যায়। কারণ ৮ ঘন্টা না ঘুমলে শরীরের অন্দরে নানা নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে, এমনকী মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও কমে যায়। ফলে অজান্তেই কখন যে আমরা মৃত্যুর দোর গোড়ায় এসে দাঁড়াই, তা বুঝতেই পারি না।
ওজন বৃদ্ধি পাবেই পাবে
একাধিক গবেষণায় একথা প্রামাণিত হয়েছে যে দিনে কমপক্ষে ৬ ঘন্টা না ঘুমলে ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। কারণ একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে দেরি করে ঘুমলে ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুড খাওয়ার পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। আর একথা তো সকলেই জানেন যে ওজন বৃদ্ধি কখনও একা আসে না। সঙ্গে নিয়ে আসে আরও হাজারো রোগকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে নানা কারণে শ্বেত রক্তি কণিকা ধ্বংস হতে শুরু করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে নানাবিধ সংক্রমণ এবং জটিল রোগ বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে। আর এমনটা হলে এক সময় গিয়ে হাসপাতালই হয়ে ওঠে পার্মানেন্ট ঠিকানা।
ডিলেড স্লিপ সিমড্রম
দিনের পর দিন দেরি করে শুতে গেলে এক সময়ে গিয়ে এমন অভ্যাস হয়ে যায় যে তাড়াতাড়ি ঘুম আসতেই চায় না। এই ধরনের সমস্যাকে ডিলেড স্লিপ সিনড্রম বলা হয়ে থাকে। আর একবার যদি এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে পরেন, তাহলে আগামী সময় গিয়ে শীরর ভাঙতে শুরু করে দেয়। ফলে আয়ু যায় কমে।
হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি
দেরি করে শুতে যাওয়ার অর্থ হল কম সময় ঘুমানো। আর এমনটা যে হার্টের জন্য একেবারেই ভাল নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যারা দিনে ৬ ঘণ্টার কম সময় ঘুমোন, তাদের হার্টের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে নানাবিধ হার্টের রোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
ডায়াবেটিস
দিনের পর দিন রাত ১০ টার পর শুতে গেলে প্রথমে হরমোনাল ইমব্যালেন্স এবং তারপর তার লেজুর হিসেবে শরীরে গ্লকোজ ইনটলারেন্স হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রোক
দেরি করে শুতে গেলে কি দেরি করে ওঠা যায়? তা তো নয়! ফলে কম সময় ঘুমনোর কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ঠিক মতো হতে পারে না। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ রেস্ট না পাওয়ার কারণে ব্রেন সেল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপ
গত এক দশতে যে যে লাইফ স্টাইল ডিজিজের কারণে সারা দুনিয়াতেই বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে তার মধ্যে অন্যতম হল উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার। কিন্তু দেরি করে ঘুমনোর সঙ্গে রক্তচাপ ওঠা নামার কী সম্পর্ক? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কম সময় ঘুমলে নানা কারণে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মাত্র বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ ঠিক থাকতে পারে না।
মাথা যন্ত্রণা
কম সময় ঘুমলেই দেখবেন ঘুম থেকে ওঠার পর প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা অথবা মাথাটা কেমন যেন ভারি হয়ে থাকে। কেন এমনটা হয় জানা আছে? কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে মস্তিষ্কের ভিতরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে ব্রেন সেলগুলি মরাত্মক ধাক্কা খায়। আর এমনটা যদি দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে, তাহলে ব্রেন ড্যামেজ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়
ঠিক মতো ঘুম না হলে ব্রেন ঠিক মতো রেস্ট নেওয়ার সুয়োগ পায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশের ক্ষমতা কমতে শুরু করে। আর ঠিক এই কারণেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যায় কমে। আর আজকের প্রতিযোগিতাময় জীবনে যদি ঠিক মতো ডিসিশন নিতে না পারেন, তাহলে কিন্তু পিছিয়ে যেতে হবে।
চোট-আঘাত লাগার প্রবণতা যায় বেড়ে
সারাদিন যতই ঘুমোন না কেন, রাতে ঘুম আসতে বাধ্য। এমন পরিস্থিতিতে মনোযোগ যেমন হ্রাস পায়, তেমনি শরীরের সচলতাও কমতে শুরু করে। ফলেচোট-আঘাত লাগার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
বাবা-মা হতে সমস্যা দেখা দিতে পারে
শরীরের নিজস্ব ছন্দ বিগড়ে গেলে দেহের অন্দরে এমন কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে থাকে যে তার সরাসরি প্রভাব পরে মা হওয়ার ক্ষেত্রে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে সব মেয়েরা নিয়মিত নাইট শিফট করেন তাদের মিসক্যারেজ এবং প্রিটার্ম ডেলিভারি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম ওজনের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে ভুলেও রাত জেগে কাজ করবেন না যেন!
মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে
রাতের বেলা মস্তিষ্কের আরাম নেওয়ার সময়। তাই তো এই সময় দিনের পর দিন কাজ করলে ধীরে ধীরে ব্রেন পাওয়ার কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ডিপ্রেশন, হাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্লো কগনিটিভ ফাংশন, স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সহ আরও সব সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।