scorecardresearch
 

আপেলে সায়ানাইড বিষও থাকে! এভাবে খেলে মৃত্যুও হতে পারে

রোসেসি প্রজাতির ফলের বীজে সাধারণত অ্যামিগডালিন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, বাদাম, এপ্রিকট, পীচ এবং চেরি। সায়ানাইড বিষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে। এটি শরীরের কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করা বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তি মারা যায়। অল্প পরিমাণে সায়ানাইড মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং উত্তেজনা-সহ শরীরের স্বল্পমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে।

Advertisement
আপেলে সায়ানাইড বিষও থাকে! এভাবে খেলে মৃত্যুও হতে পারে আপেলে সায়ানাইড বিষও থাকে! এভাবে খেলে মৃত্যুও হতে পারে

আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি 'An Apple a Day, Keeps Doctor Away'. যার মানে আমরা যদি প্রতিদিন একটি আপেল খাই তাহলে আমরা রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে পারি। কারণ শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী ফলের তালিকায় আপেল রয়েছে একেবারে উপরের দিকে। এটি ভিটামিন, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি আমাদের শরীরকে অনেক রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে। আপেল খেলে আমাদের শরীরের উপকার হলেও এর বীজ আমাদের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ বীজ অপসারণের পরেই আপেল খান, তবে কখনও কখনও যদি ভুলবশত দু-একটি বীজ মুখের মধ্যে চলে যায়, তবে লোকেরা সেগুলিও খেয়ে ফেলেন। একই সময়ে, আপেলের রস পান করার সময়ও এর সমস্ত বীজ আপনার পেটে যেতে পারে। এই খবরে আমরা আপেলের বীজ নিয়ে করা বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা বলব।


আপেলের বীজ কি বিষাক্ত?

এতে কোন সন্দেহ নেই যে আপেলের বীজ আমাদের জন্য ক্ষতিকর। বেশি পরিমাণে পেটে গেলে তা ভয়ানক ক্ষতি করতে পারে। বিশেষত শিশুদের। আপেলের বীজে অ্যামিগডালিন নামক একটি যৌগ থাকে যা বিষাক্ত। এই যৌগটি বীজের ভিতরে থাকে। বীজ রক্ষা করার জন্য, এটির উপর একটি স্তর থাকে যা খুব শক্ত। যখন বীজ গিলে ফেলা হয়, তখন পাকস্থলীর রাসায়নিক পদার্থ তার স্তর ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয় না, ফলে বিষাক্ত যৌগ বের হয় না, তবে বীজ চিবিয়ে খাওয়া হলে বা কোনও ভাবে ভেঙ্গে গেলে অ্যামিগডালিন হাইড্রোজেন সায়ানাইডে পরিণত হয়। এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং যদি এটি বেশি পরিমাণে সেবন করা হয় তবে এটি ব্যক্তির মৃত্যুও ঘটাতে পারে।


বিষ এড়াতে কীভাবে আপেল খাবেন

রোসেসি প্রজাতির ফলের বীজে সাধারণত অ্যামিগডালিন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এই প্রজাতির ফলের মধ্যে রয়েছে আপেল, বাদাম, এপ্রিকট, পীচ এবং চেরি। সায়ানাইড বিষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে। এটি শরীরের কোষে অক্সিজেন প্রবেশ করা বন্ধ করে দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তি মারা যায়। অল্প পরিমাণে সায়ানাইড মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, অস্থিরতা এবং উত্তেজনা-সহ শরীরের স্বল্পমেয়াদী ক্ষতি করতে পারে। শরীরে সায়ানাইডের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ, পক্ষাঘাত বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, একজন ব্যক্তি কোমাতে চলে যেতে পারেন। এমনকী মারাও যেতে পারেন। তবে কাউকে অসুস্থ করার জন্য যে পরিমাণ সায়ানাইড প্রয়োজন তা নির্ভর করে তার শরীরের ওজনের ওপর। অল্পবয়সী শিশুদের এতে বেশি ঝুঁকি থাকে। এর পাশাপাশি আপেলের বীজ একজন ব্যক্তির কতটা ক্ষতি হতে পারে, তা নির্ভর করে সে কতটা আপেলের বীজ খেয়েছে এবং সেই বিষ সহ্য করার ক্ষমতা তার কতটা আছে তার ওপর।

Advertisement

আপেলে অ্যামিগডালিনের পরিমাণও আপেলের ধরণের উপর নির্ভর করে। এটি মনে রাখতে হবে যে অ্যামিগডালিন মারাত্মক না হলেও, এর সামান্য পরিমাণ একজন ব্যক্তিকে অসুস্থ করে তুলতে পারে, তাই আপেল খাওয়ার সময় আপনার মুখের ভিতরে এর বীজ না রাখাই ভালো।


আপেলের বীজ খাওয়া কি ক্ষতিকর?

যদি মাঝে মাঝে কিছু আপেলের বীজ আপনার ভিতরে ঢুকে যায়, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত রস বা অন্য কোনও উপায়ে বীজ খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।

২০১৫ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, এক গ্রাম আপেলের বীজে অ্যামিগডালিনের পরিমাণ আপেলের বিভিন্নতার উপর নির্ভর করে এক থেকে চার মিলিগ্রামের মধ্যে। তবে বীজ থেকে নিঃসৃত সায়ানাইডের পরিমাণ খুবই কম। প্রায় ৫০-৩০০ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইডের পরিমাণ মারাত্মক হতে পারে।

প্রতি গ্রাম আপেল বীজে ০.৬ মিলিগ্রাম হাইড্রোজেন সায়ানাইড থাকে। এর মানে হল যে ৮০ থেকে ৫০০ বীজ খেলে একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। আপনি যদি বীজ-সহ একটি আস্ত আপেল খান তবে এটি আপনার কোনও ক্ষতি করবে না।

গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন যে অ্যামিগডালিন এড়াতে, আপেল খাওয়া এবং আপেলের রস পান করার আগে তাদের বীজগুলি সরিয়ে ফেলা ভালো। অন্য একটি রিপোর্টেও অনেক বিজ্ঞানী জানান, আপেলের বীজে অ্যামিগডালিনের পরিমাণ বেশি থাকায় তা বার করার পর এর বীজ খাওয়া ভালো। বিশেষ করে বাচ্চাদের আপেলের বীজ বের করে খাওয়ানো উচিত।


কীভাবে আপেল জুস এবং স্মুদি পান করবেন

আপেলের জুস ও স্মুদি তৈরির সময় আপেলকে টুকরো টুকরো করে জুসারে দেওয়া হয়, যা শেক বা জুস তৈরির সময় আপেলের সঙ্গে বীজগুলো ভেঙ্গে যায়, যার কারণে দেখা যায় যে সেগুলো থেকে কিছু পরিমাণ অ্যামিগডালিন নিঃসৃত হয় এবং রসে মিশে যায়। তবে গবেষণার সময় টিনের রসে অ্যামিগডালিনের পরিমাণ পাওয়া গেছে০.০০১ থেকে ০.০০৭ প্রতি মিলিলিটারে, যা খুবই কম। বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করেছেন যে টিনজাত রসে উপস্থিত অ্যামিগডালিন কোনও ক্ষতি করে না। তবে, বিজ্ঞানীরা এখানেও জোর দিয়েছিলেন যে আপেল খাওয়ার আগে বা বাড়িতে এর রস বের করার আগে বীজগুলি সরিয়ে ফেলা উচিত।

আপেল এবং এর খোসা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো এবং এগুলো কোনও বিপদ ডেকে আনে না। এছাড়াও একটি আপেলের মধ্যে আট বা ১০টি বীজ থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি ক্ষতি করে না, তবে শুধু মনে রাখবেন যে কোনও ব্যক্তির ৮০টির বেশি আপেলের বীজ খাওয়া উচিত নয়।

 

Advertisement