Rabindranath Tagore In North Bengal Hills: আসছে ২৫শে বৈশাখ, পাহাড়ে রবি-স্মৃতিও কম নেই, চলুন...

Rabindranath Tagore In North Bengal Hills: পাহাড়ের এখানে জমি কিনেছিলেন রবি ঠাকুর। ইচ্ছে ছিল, মাঝে মধ্যে এসে থাকবেন। কিন্তু শেষমেষ তা আর হয়নি। সামনেই আসছে ২৫ বৈশাখ। তার আগে চলুন কবিগুরুর পছন্দের জায়গায়। সাইট সিন, সূর্যোদয় কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে প্রাণের ঠাকুর রবিঠাকুরের স্মৃতি মন্দ লাগবে না।

Advertisement
আসছে ২৫শে বৈশাখ, পাহাড়ে রবি-স্মৃতিও কম নেই, চলুন...আসছে ২৫শে বৈশাখ, পাহাড়ে রবি-স্মৃতিও কম নেই, চলুন...
হাইলাইটস
  • ২৫ বৈশাখের আগে এবার পাহাড়ে ঘুরে আসুন
  • কবিগুরুর পছন্দের জায়গাগুলিতে
  • জায়গাগুলি নস্টালজিক করে দেবে

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির হৃদয়ে রয়েছে। বাঙালিকে বিশ্বজনীন করার অন্যতম কারিগর রবি ঠাকুর। বৈশাখ মাসে কবিগুরুর জন্মমাস। আমাদের আবেগের শেষ নেই। ফলে এই সময় নানা অনুষ্ঠান, উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমরা পালন করি। কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই মাস যেন সাংষ্কৃতিক উৎসবের মাস। সব ক্ষেত্রেই এটা আমাদের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে। ঘোরাফেরার ক্ষেত্রেও এটা একই রকমভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে। যাঁরা এ মাসে পাহাড়ে ঘুরতে যাচ্ছেন, যাঁরা ২৫ বৈশাখের মধ্যে যদি যান, আলাদা করে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত ও তাঁর প্রিয় জায়গাগুলিতে ঘুরতে পারবেন। যদিও সারা বছরই ঘোরা যায়। তবে এই মাসে ২৫ বৈশাখকে উপলক্ষ করে সরকারি-বেসরকারি স্তরে বহু অনুষ্ঠান হয়। যা ঘরের বাইরে থেকেও আপনারা উপভোগ করতে পারবেন।

 

মংপুর রবীন্দ্রভবন

মংপুর রবীন্দ্রভবন

এই ভবনে বিশ্বকবিকে ঘিরে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৩৮ সালের ২১ মে কবি প্রথমবার কালিম্পং থেকে মংপু-র সুরেল বাংলোতে আসেন। সেখানে ৫ জুন পর্যন্ত কাটিয়ে তিনি এই ভবনে এসে ৯ জুন পর্যন্ত থাকেন। তারপর আবার চলে যান কালিম্পং। দ্বিতীয়বার কবি ১৯৩৯ সালের ১৪ মে পুরী থেকে সোজা মংপু আসেন গ্রীষ্ম কাটাতে। সেবারে ১৭ জুন পর্যন্ত সময় পার করে কবি কলকাতায় ফিরে যান। তারপর ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে তিনি আবার মংপুতে আসেন। দুই মাসের কিছু বেশি সময় পার করে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতায় ফিরে যান। ১৯৪০ সালের ২১ এপ্রিল চতুর্থ বারের জন্য মংপু আসেন রবীন্দ্রনাথ। সেবারে পঁচিশে বৈশাখে তাঁর জন্মদিন সেখানেই পালিত হয়। সেখান থেকে তিনি কালিম্পং যান। সেই বছরই শরৎকালে আবার মংপু আসবেন বলে জিনিসপত্রও রেখে যান। কিন্তু আর মংপু আসা হয়নি। তিনি সেবারে শরৎকালে কালিম্পং আসেন। তখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে আর আসতে পারেননি মংপু। ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি কালিম্পং-এর গৌরীপুরে অজ্ঞান হয়ে গেলে, তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। মংপুর এই ভবনটি আসলে লেখিকা মৈত্রেয়ীদেবীর স্বামীর কোয়ার্টার। তিনি স্থানীয় সিঙ্কোনা প্লান্টে কাজ করতেন। এই কোয়ার্টারেই কবিকে বারবার আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসেন মৈত্রেয়ী দেবী। কবিও সেখানকার শান্ত, সুন্দর পাহাড় দেখে মুগ্ধ হয়ে এক মাস, দেড় মাস করে থেকে যেতেন। সেই কোয়ার্টারটি সিঙ্কোনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আজ ঐতিহাসিক রবীন্দ্র ভবন। সেই ভবনে কবির ব্যবহার করা খাট, লেখার ডেস্ক, রঙের প্যালেট, বায়োকেমিক ওষুধের শিশি, বহু ছবি আজও রয়ে গিয়েছে। কবি এই ভবনে বসেই তাঁর ‘জন্মদিন’ কবিতা যেমন লিখেছেন, তেমনই শেষ কথা, বাংলা ভাষার পরিচয়, ছেলেবেলার কথা লিখেছেন। তাছাড়া নবজাতক, সানাই, আকাশ প্রদীপ, মংপু, ক্যামেলিয়া কবিতাগুলো এখানে বসেই লেখা। তিনি এখানে বসে পাহাড়ের ছবি বাদে বেশ কিছু ছবি নিজে হাতে এঁকেছেন। সেসব এখন এই ভবনের সংগ্রহশালায় রাখা আছে। মৈত্রেয়ী দেবিকে লেখা কবির কিছু চিঠিও এখানে রয়েছে।

Advertisement

গৌরীপুর ভবন

 

গৌরীপুর ভবন

১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মোট চারবার কালিম্পং-এ এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শেষ বার আসেন ১৯৪০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সেবারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি ছিল সেটি। বাড়িটির অবস্থান কালিম্পং শহর থেকে দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটার গিয়ে খানিকটা পশ্চিম দিকে। মংপু থেকে কাছেই। এই বাড়িতেই বিশ্বকবি অতিথি হিসাবে এসেছিলেন। সেই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা কোনও জিনিসই আর নেই। তবে সেই বাড়ির এক স্থানে একটি ফলকে লেখা আছে, ‘এই ভবনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাস করিতেন এবং ২৫ শে বৈশাখ ১৩৪৫ সনে জন্মদিন কবিতা আকাশবাণীতে সরাসরি আবৃত্তি করিয়াছিলেন।’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশিতম জন্মদিন কাটিয়েছিলেন এই বাড়িতে। নিজের লেখা ‘জন্মদিন’ কবিতাটি তিনি এখান থেকেই আবৃত্তি করেছিলেন টেলিফোনে। যেটি আকাশবাণী কলকাতা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। আর বলা হয়, কালিম্পং-এর সঙ্গে কলকাতার টেলিফোন যোগাযোগের সূচনা নাকি হয়েছিল এর পর থেকেই।

টয়ট্রেন রম্ভি ও কবি

কবি কখনও সড়ক যোগে রম্ভি পর্যন্ত আসতেন। কখনও টয়ট্রেনে গেলখোলা পর্যন্ত। তারপর রম্ভি থেকে ৯ কিলোমিটার পথ কবি পালকি করে আসতেন। ৩৭৫৯ ফুট উচ্চতায় মংপু এখন ছোট পাহাড়ি শহর, কবির সময় তা ছিল পাহাড়ি গণ্ডগ্রাম। সিঙ্কোনা চাষের জন্যই এর প্রথম খ্যাতি ছড়ায়। কালিম্পং থেকে এর দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার, দার্জিলিং থেকে দুরত্ব ৫৭ কিলোমিটার আর শিলিগুড়ি থেকে দুরত্ব ৪৭ কিলোমিটার। এর ১৩ কিলোমিটার নিচে শাল, সেগুন, অর্জুন সহ নানা গাছের সমারোহ। মংপু যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে দিনের বেলাতেই যেন বনের ধার থেকে ঝি ঝি পোকার ডাক কানে ভেসে আসে। শিলিগুড়ি থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রম্ভি থেকে এর দুরত্ব ৯ কিলোমিটার। বিভিন্ন ভাবে অবহেলায় কবির স্মৃতি বিজড়িত এই ভবন নষ্ট হতে বসেছিল।

চিত্রভানু

চিত্রভানু

এই গৌরীপুর হাউসের কাছেই অতিশা রোডে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত আরও একটি বাড়ি রয়েছে। তার নাম চিত্রভানু। নামও কবিগুরু নিজের দেওয়া। সে বাড়িটির জমি কেনা হবে বলে কবিই স্থান নির্বাচন করে দিয়ে যান। কবির খুব ভালো লাগত কালিম্পং। তাই কালিম্পং-এ স্থায়ী একটি আবাস তৈরি করতে চেয়েছিলেন কবি। ১৯৪১ সালে কবির পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্ত্রী প্রতিমা দেবীর নামে লিজে নেওয়া হয় জমি। সেখানে নির্মাণের সময় রথীন্দ্রনাথ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নির্মাণ করিয়েছিলেন। পরে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসাবে রথীন্দ্রনাথ কাজে ব্যস্ত থাকলে, প্রতিমাদেবী দীর্ঘদিন সেই চিত্রভানুতে ছিলেন। আর তিনি থাকার সময় চিত্রভানুর লনে তিনি কয়েকবার রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করেছিলেন। সেই সময় কালিম্পং টাউন হলে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী পালন হলে তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমা দেবী। ২০১১ সালের ভূমিকম্পে সেই বাড়ির অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে প্রতিমা দেবীর ব্যবহার করা টেবিল, চেয়ার, খাট সবই আছে। তাছাড়া কবিগুরুর অনেক হাতের কাজ এখানে আছে। সেখানে অবশ্য এখন রাজ্য সরকারের তরফে মহিলাদের হাতের কাজের কিছু প্রশিক্ষণ হয়। কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্টুডিওর নামে এই বাড়ির নামকরণ হয় চিত্রভানু।

Advertisement

 

POST A COMMENT
Advertisement