শীতকাল মানেই বাঙালির বিয়েবাড়ির নেমন্তন্ন। আর বিয়েবাড়ি মানেই জমিয়ে খাওয়া। বাঙালি ভোজনরসিক। একটা সময় পাত পেড়ে খাওয়ানো হত বিয়েবাড়িতে। মেনুতে থাকত ভাত, শুক্তো, পাঠার মাংস। এখন বিয়েবাড়ির খাওয়াদাওয়া বদলে গিয়েছে। কলকাতা তো বটেই মফঃস্বলের বিয়েবাড়ির খাবারেও 'ভিনদেশি' ছোঁয়াচ। সাদা ধোঁয়া ওঠা ভাতের জায়গা নিয়েছে চিকেন বা মাটন বিরিয়ানি। আর লুচি-ছোলার ডালের জায়গায় নান-তরকা! মেনুর এমন বদলে কি বাঙালিয়ানা হারিয়ে যাচ্ছে? এনিয়েই বিতর্ক উস্কে গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ফেসবুকে এক জনৈক শিলিগুড়ির বাসিন্দা লিখেছেন,'বাঙালি বিয়েবাড়িতে আজকাল উত্তরের ছোঁয়া। খাঁটি বাঙালি খাবার মেনুতে থাকে না।' তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন নেটিজেনরা। কেউ লিখেছেন, একদম সত্যি। কাওর মন্তব্য, গরম ভাত, ডালের সঙ্গে বেগুনি...আহা অমৃত। আর একজন মনে করিয়ে দিলেন বাঙালি বিয়েবাড়ির মেনুতে ঠিক কী থাকে? এই যেমন- চানা-বাটুরা, মাটন রোগানজোশ, নবরত্ন ইত্যাদি না খাওয়ালে মান থাকে না।
সদ্য বিয়ে করেছেন মণীশা পাল। তাঁর বিয়ের মেনুতে ছিল, মাটন বিরিয়ানি, চিকেন কষা, ফিস কবিরাজি ও চিকেন রেশমি কবাব। বাঙালি পদ কেন নেই? মনীশার কথায়,'এটাই এখন ট্রেন্ড। আর বন্ধুদের বিয়েতে গিয়েও এই সবই খেয়েছি। অফিসের সহকর্মীরাও আসেন। ফলে ভাত-ডাল-বেগুন ভাজা দিলে মান-ইজ্জত থাকবে না। আর অতিথি ডেকে আপ্যায়ন করাই তো বাঙালির রেওয়াজ।'
একটি জনপ্রিয় ক্যাটারার সংস্থা যার নামে পুরোপুরি বাঙালিয়ানার ছাপ, রেস্তোরাঁও রয়েছে একাধিক, তারা জানাল,'বিয়েবাড়িতে সকালে বাঙালি পদ অর্ডার করেন সকলেই। ভাত, ডাল, বেগুনভাজা থাকে। মিষ্টি দইও খান। তবে রাতের খাবারে একটু অন্যরকম খেতেই পছন্দ করেন সবাই। আমরা সব মিলিয়েমিশিয়েই রাখি। এই যেমন নলেন গুড়ের রসগোল্লার সঙ্গে গরম গরম জিলিপিও ভেজে দেওয়া হয়। নিখাদ বাঙালি পদ মাছের পাতুরিও থাকে। সেই সঙ্গে নানও।'
বাঙালির বিয়েবাড়ির এলাহি খানাপিনা অনেক কাল ধরেই হয়। এই যেমন সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটি কবিতায় বিয়ের মেনুতে মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টির কথা লেখা রয়েছে। ফলে ভাত-বেগুনি খাওয়ানো হত এমন নির্দশনও যেমন রয়েছে তেমন রয়েছে পোলাও, কাটলেটের কথাও। আসলে বাঙালি খেতে ভালবাসে। তাই খাদ্যরসিক জাতি নানা দেশের খাবারকে আপন করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন- এই ৩ জোড়া রাশি বিয়ে করলে হন রাজযোটক, দারুণ কাটে দাম্পত্য