বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব হল নববর্ষ। বছরের শুরুতে যেমন উৎসব, সেরকম বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির (Chaitra Sankranti) সঙ্গে নানা আচার (Rituals) জড়িয়ে রয়েছে। এদিন বেশিরভাগ 'বাঙাল' (East Bengal) পরিবারে পাঁচন (Pachon) তৈরির রীতি রয়েছে। টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি, তেতো সব রকম স্বাদ মিলিয়ে তৈরি হয় ঐহিত্যবাহী এই খাবার। রকমারি সবজি, শাক, বীজ, ডাল দিয়ে তৈরি এই রান্না খুবই সুস্বাদু হয়।
কেন পাঁচন খাওয়ার রীতি?
পাঁচন খাওয়ার রীতির পিছনে ব্যাখ্যাও খুব সুন্দর। সবরকম দুঃখ- দুর্দশা, রাগ-অভিমানকে পিছনে ফেলে নতুন বছরকে যেমন বরণ করে নেওয়া হয়, ঠিক তেমনই জীবনের চলারপথে মিষ্টি-টক-তেতো সবরকম অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে নেওয়ার রূপক হল পাঁচন৷ অন্যদিকে মনে করা হয় চৈত্র মাসের গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সব স্বাদের মিশেলে তৈরি করা হয় পাঁচন৷ রইল বিশেষ এই পদের সহজ রেসিপি।
পাঁচন বানানোর উপকরণ (Ingredients)
* এঁচোড় - ৫০০ গ্রাম
* কুমড়ো- ৫০০ গ্রাম
* ঝিঙে - ২-৩ টে
* আলু - ১ কেজি
* কাঁচকলা - ২ টো
* রাঙাআলু - ৫০০ গ্রাম
* বরবটি - ২০০ গ্রাম
* উচ্ছে - ১০০ গ্রাম
* সজনে ডাঁটা - ২৫০ গ্রাম
* মুলো- ২৫০ গ্রাম
* কুমড়োর ডাটা - ১ আটি
* কাঁচা পেঁপে - ১ টা
* সিমের দানা - ১০০ গ্রাম
* কাঁচালঙ্কা - ৮-৯ টা
* তেজপাতা- ৩-৪ টে
* শুকনো লঙ্কা- ৩-৪ টে
* পাঁচ ফোড়ন-আধ চা চামচ
* আদা বাটা- আধ চা চামচ
* হলুদ গুঁড়ো- পরিমাণ মতো
* ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ
* নারকেল বাটা - আধ আঁচি
* নুন- পরিমাণ মতো
* চিনি- পরিমাণ মতো
* সর্ষের তেল-পরিমাণ মতো
পাঁচন বানানোর প্রণালী (Procedure)
* ডুমো করে এঁচোড় ও পেঁপে কেটে সামান্য নুন ও হলুদ গুঁড়ো দিয়ে সিদ্ধ করে নিন৷ সিদ্ধ হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে সরিয়ে রাখুন।
* আলু, উচ্ছে ছোট ছোট করে কেটে ভাজা করে সরিয়ে রাখুন।
* সিমের দানা শুকনো খোলায় নেড়ে, সিদ্ধ করে নরম করে নিন ও খোসা ছাড়িয়ে রাখুন।
* এবার কড়াইতে তেল গরম করুন। শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ও পাঁচফোড়ন যোগ করুন।
* সুন্দর গন্ধ বেরোলে সব সবজি (আলু, উচ্ছে ও এঁচোড় বাদে) দিয়ে নুন ও হলুদ দিয়ে ভাল করে নেড়ে চাপা দিয়ে মাঝারি আঁচে ১২-১৫ মিনিট সিদ্ধ হতে দিন।
* মাঝে মাঝে নাড়বেন এবং গ্যাস স্লো করে রাখবেন যাতে সবজি পোড়া না লাগে।
* সবজিকিছুটা সিদ্ধ হলে এঁচোড়, নারকেল বাটা সহ সব মশলা দিয়ে ভাল করে কষাতে থাকুন।
* ভাল করে মিশিয়ে ৪-৫ মিনিট নেড়ে প্রয়োজন মতো জল দিন।
* সব সবজি সিদ্ধ হয়ে এলে আলু, উচ্ছে ও সিমের দানা যোগ করুন কড়াইতে।
* নুন, মিষ্টি, ঝাল চেখে দেখুন সব পরিমাণ মতো হয়েছে কিনা।
* সব ঠিক থাকলে এবার কড়াই থেকে নামিয়ে নিন।
* এবার আবার পাঁচন সম্পূর্ণ তৈরি। একটু ঠাণ্ডা করে, পরিবেশন করুন।
* এই বিশেষ পদ শুধু যেমন খেতে সুস্বাদু, সেরকম ভাত, রুটি সহযোগে ভাল লাগে খেতে।
বর্তমানে এই রীতিনীতি অনেকটা শিথিল হয়েছে কর্ম ব্যস্ততার জন্য। তবে শহরে কম হলেও, গ্রামাঞ্চল বা শহরতলিতে এখনও এই পার্বণ ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়। তবে পাঁচন মূলত পূর্ববঙ্গীয়দের রীতি। তবে বাংলাদেশের সব বংশোদ্ভূতদের নয়, ওপার বাংলার কিছু জেলার রীতি এটা। এছাড়া পশ্চিমবাংলার আদি বাসিন্দারা অর্থাৎ এদেশীয়রা এই রীতি পালন করেন না।