বিশ্বে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট Omicron এর প্রকোপ বেড়েই চলেছে। নতুন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক আক্রমণের খবর আসছে। পশ্চিমবঙ্গেও একাধিক জায়গায় ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার খবক আসছে। তবে করোনার সব থেকে খারাপ দিক হলো এই ভাইরাস শ্বাসনালি ও ফুসফুসে সরাসরি আক্রমণ করে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠা কিছু মানুষের ফুসফুস অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
তাই এই রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে ফুসফুস সুস্থ রাখা একান্ত জরুরি। অনেকের আগে থেকেই ফুসফুসে সংক্রমণের প্রবণতা আছে। ফুসফুস সঠিকভাবে কাজও করে না অনেকের। তাঁদের চিন্তা খানিকটা বেশি।
ফুসফুসজনিত অন্য কারণগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া, ভাইরাসজনিত জ্বর, ফুসফুসের ক্যানসার অন্যতম। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী সাধারণত কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, উচ্চমাত্রার জ্বর ও আক্রান্ত দিকে তীব্র বুকের ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারে। শিশু ও বয়স্ক রোগীরা এ রোগে অধিকহারে আক্রান্ত হয়। ভাইরাসজনিত ফুসফুস আক্রান্ত হলে প্লুরিসির সৃষ্টি হয় এবং রোগী শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করে।
তবে ফুসফুস ভাল রাখার পাশাপাশি ফুসফুস মেরামতি করার মতো পদ্ধতিও রয়েছে। তবে ঘরেই সাধারণ কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে কিন্তু চিকিৎসকের কাছে না গিয়েই ফুসফুস ঠিক রাখতে পারেন।
ব্রেকফাস্ট
সকালে ব্রেকফাস্ট করার আগে ৩০০ মিলিলিটার জলের সঙ্গে ২ টি লেবুর রস চিপে জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করুন। আঙুর, আপেল বা আনারসের জুস খেতে হবে বেশি করে। কারণ এসব ফলের জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার পদ্ধতিকে উন্নত করে। এ ছাড়া খাদ্য তালিকায় রাখুন গাজরের জুস। গাজরের জুস দেহের রক্তে ক্ষারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
দুপুরের খাবার
দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় কলার জুস, নারকেলের শ্বাস, পালং শাক খেতে পারেন কারণ এই খাবারগুলোর মধ্যে আছে পটাশিয়াম যা দেহের বিষাক্ত টক্সিন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
নৈশভোজ
রাতে ঘুমানোর আগে আপনি ১ কাপ গ্রিন টি পান করুন। এই চা পানের মাধ্যমে আপনার দেহ থেকে সমস্ত টক্সিন বের হয়ে যাবে যা দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই পদ্ধতি মেনে চলার সময় এমন কোন কাজ করা যাবেনা যা ফুসফুসের ওপরে চাপ প্রয়োগ করে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়াতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত।
ভিটামিন এ
ভিটামিন-এ রোজকার খাবার থেকেই পাওয়া যায়। ভিটামিন-এ পাওয়া যায় গাজর, কমলালেবু, টমেটো, ডিমের কুসুম, পালংশাক, রাঙা আলু, ব্রোকোলি-সহ নানা টাটকা ফল ও সবজিতে। ফুসফুসকে রক্ষা করতে পারে তুলসিপাতা। বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে তুলসিগাছ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অল্প করে তুলসীপাতার রস খেলে শরীরের শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর হয়।
রোগ প্রতিরোধে
আমলকী সহ সব ধরনের লেবুতে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।নিয়মিত গোলমরিচ খান আপনার শ্বাস কষ্ট থাকবে না। ফুসফুসের জন্য আদা-রসুন খুবই ভাল। আদা-রসুন ফুসফুস পরিষ্কার রাখে ও কার্যক্ষমতা বাড়ায়। অ্যাজমা ও ব্রংকাইটিসের মতো অনেক শ্বাসযন্ত্রের সমস্যায় কার্যকর হতে পারে গুড়। তিলের সঙ্গে গুড় মিশিয়ে খেলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়।
ফুসফুস ভালো রাখতে ব্যায়াম
নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। বিশেষত হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম উপকারী।
এ রকম কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে রাখলে সুস্থ থাকবেন :
এক পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সব টুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার ‘হুস করে পুরোটা বাতাস বের করে দিন ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন। এই ব্যায়াম দিনে দুবার করা ভালো। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমে। ঘুমও ভালো হয়।
দুই এই ব্যায়ামে ক্রমান্বয়ে প্রশ্বাসের সময় ধীর করে আনতে হয়। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। চোখ বন্ধ করে পর পর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুণবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ১০ মিনিট করবেন। এটি এক ধরনের মেডিটেশন বা ধ্যান। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে ও মনঃসংযোগ বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায়।
তিন মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম এটি। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি নয়। এটি যোগব্যায়ামের একটি কৌশল। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।