আপনি অনেককে দেখে থাকবেন যে দিন শুরু করেন এক গ্লাস বা আধ জগ জল পান করে। হেলথ এক্সপার্টরাও পর্যাপ্ত মাত্রায় জলপানের ওপর জোর দেন। নিয়মিত খালি পেটে জল খাওয়ার কথা বলেন চিকিৎসকরা। কারণ জল খেলে শরীর ভেতরের টক্সিন খুব ভালোভাবে বের করে দিতে পারে, শরীরকে ঝরঝরে রাখে এবং শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্য ঠিক রাখে। শরীরকে ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচায়। বিষাক্ত পদার্থ এর মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে, রক্ত পরিষ্কার রাখে, নতুন কোশিকা নির্মাণ করে, মেটাবলিজম একটিভ থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শরীরকে দূরে রাখে। কিন্তু এই সমস্ত ফায়দা যদি আপনি পেতে চান তাহলে সঠিকভাবে জল পান করতে হবে। ভুল হলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে এবং তা অনেক ক্ষেত্রেই আমরা না জেনে করে ফেলি।
সঠিকভাবে জল না খেলেই বিপদ
যদি আপনি সঠিকভাবে জলপান না করতে পারেন তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। আসুন আজকে আমরা জেনে নিই যে জল পান করার সঠিক পদ্ধতি কি এবং ভুল কোনগুলি আমরা করে থাকি? যেগুলি আজকেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নইলে দীর্ঘকালীন অভ্যাসে এটি বদঅভ্যাসে পরিণত হতে পারে। যদি আপনারা এভাবে জল খেয়ে থাকেন এতদিন তাহলে আজই বদলে ফেলুন।
আরও পড়ুন ঃ Sugar-free Foods খান? লাভের বদলে ক্ষতি বেশি, হতে পারে ৯২ রকম সাইড এফেক্ট
BPA বোতলের ব্যবহার
BPA করা প্লাস্টিকের বোতলে জল খেলে তা ক্ষতি করে। কেমিক্যাল ফেনোল এর প্রয়োগ করা হয় ওই বোতল বানাতে। রিসার্চে জানা গিয়েছে যে এই কেমিক্যাল থেকে যৌন সম্পর্কিত সমস্যা হতে পারে। প্রজননে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। দীর্ঘদিন যদি এ বোতলে জল খান তাহলে এটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। এক্সপার্টরা মনে করছেন যে এই কেমিক্যাল শরীরের খারাপ প্রভাব ফেলে যার মধ্যে হাই ব্লাড প্রেসার ভারসাম্য নষ্ট হয়। টাইপ-টু ডায়াবেটিস এবং হৃদয় ঘটিত সমস্যা আশঙ্কা বেড়ে যায়। বিপিএ-র এমন জলের বোতলে জল পান বন্ধ করুন। যার মধ্যে এটি না থাকে, সেটি প্লাস্টিকের জগে জল না খাওয়াটাই ভালো।
একবারে খুব বেশি জল খাওয়া কী ঠিক?
এক অথবা দুই লিটার জল পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু কিছু লোক এমন রয়েছে, জলের ভালো প্রভাব পাওয়ার জন্য একাধারে জল খেয়ে ফেলেন, তাতে আপনার শরীরে অত্যধিক প্রেসার পড়ে এবং আপনার শরীর ভালো চেয়ে মন্দের দিকে বেশি চলে যায়। এক্সপার্টরা বলছেন যে একবারে বেশি জল খেলে মেটাবলিজমের ওপরে তার প্রভাব পড়ে। এ কারণে অল্প অল্প করে জল পান করুন। তেষ্টা পেলে এক গ্লাস অথবা তার চেয়ে কিছুটা বেশি জল খাওয়া যেতে পারে। আবার তেষ্টা পেতে দিন, তারপর জল পান করুন।
পর্যাপ্ত জল না পান করলে কী হবে?
শরীরে অর্ধেকের বেশি জল থাকে। এর মানে হল যে শরীরে যদি সঠিকভাবে জল পান না করা হয়, তার শরীরও সঠিকভাবে কাজ করবে না। জল যেমন হজম শক্তিকে ঠিক রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরে রাখে, টক্সিন বের করে দেয়। তেমনই ডিহাইড্রেট হওয়া থেকে বাঁচায়। এখন এর মধ্যে পর্যাপ্ত জল যদি না খান, তাহলে শরীর কিন্তু বহু রকম সমস্যায় পড়তে পারে। দীর্ঘকালীন বদঅভ্যাসে শরীর শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
জলে কাটা ফল সবজি ডোবানো
আপনারা দেখে থাকবেন যে অনেকে কাটা ফল সবজি জলে দিয়ে জল পান করেন। যদিও এমন করলে জল সুস্বাদু হয়, কিন্তু এমন করা একেবারেই ভুল। কোলির মতো রোগ হতে পারে। আসলে যদি কোন ফল বা সবজিতে সামান্য নোংরা থেকে যায়। ঠিকমতো পরিষ্কার না হয় তাহলে সেই ব্যাকটেরিয়া জলের মধ্যে চলে যায়। যে আপনাকে রোগের মুখে ঠেলে দেয়। এ কারণে সব সময় ফল ভালো করে সাফ করে ধুয়ে খান। দিতে পারেন জলেও। কিন্তু তাদের অত্যন্ত পরিষ্কার হয় সেটা নজর রাখতে হবে।
ক্যাফিন বা অ্যালকোহল পান করলে পরে জল খান
অ্যালকোহলে সেবন এরপরে অনেক জল পান করেন না। যা ভুল। ক্যাফিন কিংবা অ্যালকোহল বডিকে ডিহাইড্রেট করে দেয় এবং যারা ড্রিংকের সেবন করেন, তারা মনে করেন যে তিনি এদিকে অনেকটা জল খেয়েছেন। এ কারণে কিন্তু এমনটা হয় না। এই ড্রিঙ্ক বডিকে ডিহাইড্রেট করে দেয়। এই কারণে ড্রিংকের পর জল খাওয়াতে জরুরি। যাতে বডি হাইড্রেট না থাকে এবং রিহাইড্রেট হয়ে যায়।
তেষ্টা পেলে খান, না পেলে খাবেন না
তেষ্টা পেল জল না খাওয়া অনেকে তৃষ্ণা না পেলেও জল খান। সেটা যেমন খারাপ তেমনি তেষ্টা পেলে জল না খাওয়াটাও খারাপ মনে করা হয়। যে আপনি কিছু কাজ করছেন এবং কাজে ব্যস্ত আছেন, জল তেষ্টা পেয়েছে। তা পিছিয়ে দিলেন। সেটি অত্যন্ত খারাপ। তেষ্টা থাকলে অবশ্যই অল্প পরিমাণ হলেও জল খেতে হবে। তারপর আপনি আবার সময় পেলে কিছুক্ষণ পর বাকি জল টুকু পান করুন। কিন্তু তেষ্টার জল না খেলে শরীর বিভিন্ন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে এবং এটা যদি আপনার রোজকার অভ্যাস হয়ে পড়ে তাহলে কিন্তু বড় বিপদ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।