Benefits of Pickles: রোজ খাবার প্লেটে রাখুন একটু আচার, গুণ জানলে চমকে যাবেন

খাবারের সঙ্গে একটু আচার একদিকে যেমন খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ করে, তেমনি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। কেন তা জেনে নিন।

Advertisement
 রোজ খাবার প্লেটে রাখুন একটু আচার, গুণ জানলে চমকে যাবেনBenefits of Pickles
হাইলাইটস
  • আচার আমাদের খাদ্যের একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশ
  • এতে টক, মিষ্টি এবং ঝাল স্বাদে পাওয়া যায়
  • আচার ভারতীয় খাবারের স্বাদ বাড়াতে কাজ করে

লেবু, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, আমলকি, কাঁঠাল, আম আরও না জানি কতকিছু। আচারের কথা যদি বলি, তাহলে তালিকাটা এত লম্বা হয়ে যাবে যে পড়তে পড়তেই জিভে জল চলে আসবে। বলতে গেলে,  আচার আমাদের খাদ্যের একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে টক, মিষ্টি এবং ঝাল স্বাদে পাওয়া যায়, আচার ভারতীয় খাবারের  স্বাদ বাড়াতে কাজ করে। যে কোনও আচার মূলত মশলা, সর্ষের তেল, লবণ এবং ভিনেগার দিয়ে তৈরি করা হয়।

 

 

আচারের ইতিহাস
আচার মূলত খাদ্য সংরক্ষণের একটি উপায়। রেফ্রিজারেশন আবিষ্কারের আগে আচারই ছিল ভবিষ্যতের জন্য বিভিন্ন খাবার সংরক্ষণের একমাত্র উপায়। এটি সাধারণত মরসুমী, খুব কমই পাওয়া যায় বা সীমিত চাষাবাদ করা খাবার সংরক্ষণের জন্য চালু করা হয়েছিল। ভারতে আচার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল প্রায় চার হাজার  থেকে  পাঁচ হাজার বছর আগে। গ্রীষ্ম মরসুমে তাপ ও ​​জলের স্বল্পতার কারণে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন কম হতো তাই শীতের মরসুমে বেশি উৎপাদিত খাদ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আচারের প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছিল। ওরিয়েন্টাল স্টাইলে আচারকে দীর্ঘ সময় রাখতে মশলার সঙ্গে লবণ, তেল এবং শুকনো লঙ্কার গুঁড়ার মতো উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানগুলি নির্ধারিত অনুপাত অনুযায়ী আচারে যোগ করা হয়।

 

 

আম, কাঁচা তেঁতুল, লেবু, কাঁচা ফল ইত্যাদি  ঐতিহ্যগতভাবে ভারতে আচার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ছাড়াও শসা, করলা, গাজর, ফুলকপি, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, কাঁঠাল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজি থেকেও আচার তৈরি করা হয়। আচার তৈরিতে বেশিরভাগ সবজি বা ফল ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক সময় দুই বা ততোধিক সবজি বা কাঁচা ফল একসঙ্গে মিশিয়ে আচার তৈরি করা হয়। সাধারণত শাকসবজি এবং কাঁচা ফল থেকে তৈরি আচার অত্যন্ত যত্ন সহকারে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলি নষ্ট না হয় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য নিরাপদ থাকে। আমিষ আচারও ভারতে জনপ্রিয়। চিকেন, মাছ, চিংড়ি ও মাটন দিয়ে এই আচার তৈরি করা হয়।

Advertisement

আচারের গুণাগুণ
আচার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস হতে পারে কারণ রান্না না করা কাঁচা ফল এবং সবজি আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এসব কাঁচা ফল ও সবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নিরাপদ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা আমাদের শরীরকে মুক্ত র‌্যাডিক্যাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল হল অস্থির রাসায়নিক যা কোষের বিপাকের সময় উৎপাদিত হয়। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল আমাদের কোষের সাথে প্রতিক্রিয়া করে এবং আমাদের ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাবার খেয়ে আমরা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।

 

 

এগুলো আচার খাওয়ার উপকারিতা
আচার হজমশক্তি সহজ করে তবে এটি বাড়িতে তৈরি করলেই  ভাল। আচারে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এর কারণ হলো আচারের শিশিগুলো রোদে রাখা হয়। আচারে ব্যবহৃত ভিনেগারে উচ্চ পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত আচার খেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। শুধু তাই নয়, আচার ভিটামিন কে সমৃদ্ধ। যা রক্ত ​​জমাট বাঁধতে সহায়ক। এটি ক্ষত নিরাময়ে এবং আঘাতের ক্ষেত্রে রক্ত ​​​​প্রবাহ বন্ধ করতে সহায়ক।

খাবারের সঙ্গে একটু  আচার একদিকে যেমন খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ করে, তেমনি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও উপকারী। তবে আচার খাওয়ার সময় বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যেন এর পরিমাণ ভারসাম্যপূর্ণ হয় না হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।  আপনি নিশ্চয়ই প্রতিদিন আচার খান কিন্তু আচার খাওয়ার উপকারিতা অনেকেই জানেন না। চলুন এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

১. গর্ভাবস্থায় মহিলাদের  আচার খাওয়ার ইচ্ছে তৈরি হয়। এই সময় সকালে আমের আচার ও লেবুর আচার খেলে গর্ভবতী মহিলার দুর্বলতা দূর হয়।
২. যদি আপনি ওজন কমানোর প্রতিটি পদ্ধতি চেষ্টা করেন, তাহলে এই পদ্ধতিটি একবার ট্রাই করুন। আচার খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। আসলে, এতে খুব কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। এছাড়াও এতে উপস্থিত মশলা ফ্যাটকে খুব দ্রুত ভাগ করে ফেলে।
৩. আচারে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করতে কাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে আচার খাওয়া খুবই উপকারী। 
৪. কিছু গবেষণা অনুসারে, আচার খাওয়া ডায়াবেটিসে উপকারী। সপ্তাহে একবার আচার খেলে উপকার হবে। আমলকির  আচার ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিত।
৫. আচার ভিটামিন কে-এর একটি ভালো উৎস। এই ভিটামিন রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য দায়ি। বিশেষ করে আঘাত ইত্যাদি ক্ষেত্রে। এটি আচার খাওয়ার সেরা উপকারিতা। 
৬. আচার খেলে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং এতে উপস্থিত ফাইবারের সাহায্যে হজম প্রক্রিয়াও মসৃণ থাকে।

 

 

এই সমস্ত জিনিসের পাশাপাশি, কোন লোকেদের আচার খাওয়া উচিত নয় তাও জানা গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোক বা হার্ট সংক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রে আচার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

বেশি আচার খাওয়ার অসুবিধা
আচারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা হাইপার টেনশন ও হাই ব্লাড প্রেশারের রোগীদের জন্য ভালো নয়। বাজারে পাওয়া আচারে তেলের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এতে ব্যবহৃত মশলাগুলোও অনেক সময় সঠিক ভাবে রান্না করা হয় না, যার কারণে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। আচার তৈরি ও সংরক্ষণে যেসব প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং শরীরে অ্যাসিডিটি বা প্রদাহের জন্য দায়ী। আচারে প্রচুর পরিমাণে তেল, লবণ ও ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। এগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে।

POST A COMMENT
Advertisement