বর্তমানে পুরুষদের সঙ্গে বডি বিল্ডিং করছেন মহিলারাও। ১৯৭৭ সালে প্রথম মহিলাদের বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তাতে জয়ী হন জিনা লাসপিনা নামে এক মহিলা। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে বডি বিল্ডিংয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়তে থাকে মহিলাদের।
এই প্রতিবেদনে এক ভারতীয় মহিলা বডি বিল্ডারের বিল্ডারের কাহিনি বলা হব। তিনি হরিয়ানার গুড়গাঁওয়ে। তিনি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছেন যেখানে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য বিকিনি পরতে গেলে পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নেওয়া ছিল রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। Aajtak.in-কে নিজের জার্নির কথা জানিয়েছেন ওই মহিলা বডি বিল্ডার। তিন জানান একসময় তাঁর ওজন ছিল ১১০ কিলো। কিন্তু পরে তিনি ওজন কমিয়ে মাসল বাড়ান। বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতায় আসার পুরো জার্নিই জানিয়েছেন তিনি।
নাম - গীতা সাইনি (Geeta Saini)
শহর - গুড়গাঁও (হরিয়ানা)
পেশা - বডি বিল্ডিং, গ্রাফিক ডিজাইনার
বয়স - ৩৩ বছর
উচ্চতা - ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি
সবচেয়ে বেশি ওজন - ১১০ কিলো
বর্তমান ওজন - প্রায় ৭০ কিলো
গীতা সাইনি এখনও পর্যন্ত ৩ বার মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা জিতে নিয়েছেন। ২০১৮ সালে মিস এশিয়া প্রতিযোগিতায় চতুর্থ স্থান এবং ১৪তম সিনিয়র ওমেনস বডি বিল্ডিং ২০২২ প্রতিযোগিতায় সোনার মেডেল জিতেছেন তিনি।
কীভাবে কমালেন ওজন? (Weight loss journey from 110 kg to 70 kg)
এই মহিলা বডি বিল্ডার জানাচ্ছেন, বাড়িতে প্রথম থেকেই খুব আদরে বড় হয়েছেন তিনি। ঘি, মাখন, দুধ ইত্যাদি খেয়েছেন। এরপর গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে অফিস যাওয়া শুরু করেন। সেই সময় জাঙ্ক ফুড খাওয়া অভ্যাস হয়ে যায়। আর অধিকমাত্রায় সেইসব খাবর খাওয়ায় মাত্র ২১ বছর বয়সেই তাঁর ওজন হয়ে যায় ১১০। এরপর তিনি ইউটিউবে ওজন কমানোর ভিডিও দেখা শুরু করে. সেই সময় ফিটনেস নিয়ে কম সচেতনতার কারণে তিনি শুধু এটা জানতে পারেন যে, খাবার কমিয়ে দিলে ও কার্ডিও করলে ওজন কমে যায়। সেই মতো ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রায় ৪০-৪২ কিলো ওজন কমিয়ে ফেলেন তিনি।
তবে অল্প সচেতনতার জন্য গীতার ওজন কমলেও চামড়া ঝুলে যায়। কারণ তিনি শুধুমাত্র কার্ডিও করলেও কোনওদিন ওয়েট ট্রেনিং করেননি। এরপর নিজের দাদা যিনি পেশাদার বডি বিল্ডার তাঁকে সমস্যার কথা জানান গীতা। এরপর তাঁর দাদাই তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে নিজের ঝোলা চামড়া ঠিক করেন নেন গীতা। এবং শরীরের গঠনও ভাল হয়ে যায়। সেই সময় তাঁর ওজন ছিল প্রায় ৭০।
যেভাবে হল পেশাদার বডি বিল্ডিংয়ের সূচনা
২০১৬ সালে গুড়গাঁওতে একটি মহিলাদের বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতা হয়। সেই সময় তাঁর দাদা তাঁকে তাতে অংশ নিতে বলেন। জবাবে গীতা জানান, তিনি অংশ নিতে রাজি, কিন্তু বাড়ির লোকেরা মেনে নেবেন না। তা শুনে তাঁর দাদা বলেন, বাড়ির সদস্যদের তিনি বোঝাবেন। গীতা বডি বিল্ডিং করতে চান কিনা সেটা জানতে চান তাঁর দাদা। উত্তরে গীতে সম্মতি দেন। এরপর বডি বিল্ডিং এবং স্টেজে বিকিনি পরা নিয়ে গীতার বাবা-মাকে রাজি করান তাঁর দাদা। বাবা-মাকে দাদা বলেন, এটা এই প্রতিযোগিতার পোশাক, আর সেটা শুধুমাত্র স্টেজেই পরা হবে। বাবা-মায়ের সম্পতির পর পেশাদার বডি বিল্ডার যতিন্দর সিংয়ের সঙ্গে গীতার পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর দাদা। তরপর তিনিই গীতাকে প্রতিযোগিতার জন্য ট্রেনিং দেন। মাত্র ৩ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই প্রতিযোগিতায় দশম স্থান পান গীতা।
কী খান গীতা সাইনি?
প্রতিযোগিতার সময় এবং অফ সিজনে আলাদ ডায়েট থাকে গীতা সাইনির। বর্তমানে ১৭০০ থেকে ১৮০০ ক্যালোরি নিচ্ছেন তিনি। তাঁর ডায়েটে মূলত বাড়ির তৈরি খাবারই থাকে।
মিল ১
১ স্কুপ প্রোটিন
১০ গ্রাম ওটস
মিল ২
১ স্কুপ প্রোটিন
১৫০ গ্রাম ওটস বা চাল
মিল ৩
২০০ গ্রাম চিকেন
৬০ গ্রাম ওটস
২০০ গ্রাম সবুজ সবজি
মিল ৪
৫টি ডিমের সাদা অংশ ও ১টি গোটা ডিম
১৫০ গ্রাম সবুজ সবজি
মিল ৫
১ স্কুপ প্রোটিন
১৫০ গ্রাম ওটস বা চাল
মিল ৬
২০০ গ্রাম চিকেন
২০০ গ্রাম সবুজ সবজি
মিল ৭
১ স্কুপ কেসিন প্রোটিন
৪০ গ্রাম ওটস
গীতার ওয়ার্কআউট
বর্তমানে দিনে ২ বার ওয়ার্কআউট করেন গীতা। সকালে ছোট মাসল ও সন্ধ্যায় বড় মাসলের ওপরে ওয়ার্কআউট করেন তিনি। এছাড়া ১ ঘণ্টা শুধু পেট কার্ডিও করেন গীতা। সকালে খালি পেটে ওয়ার্কআউট করেন তিনি। আর সপ্তাহে ২ বার অ্যাপসের ট্রেনিং নেন।
গীতার ফিটনেস টিপস
এই মহিলা বডি বিল্ডার জানাচ্ছেন, তাঁর কাছে অনেক ছেলে মেয়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান। আর তাঁর কিছুদিনের মধ্যেই ফিটনেস চান। কিন্তি ফিটনেস ১-২ মাসে পাওয়া যায় না। ভাল খাবার, পরিশ্রম ও ডেডিকেশনই মানুষকে ফিট তৈরি করে। কিন্তু এখনকার যুব সম্প্রদায় শর্টকাটে ফিটনেস পেতে চায়, তাতে আখেরে শরীরের ক্ষতি হয় বলেই মনে করছেন গীতা। তাঁর মতে, কেউ যদি ফিটনেস পেতে চান তাহলে সার্টিফায়েড কোচের তত্ত্বাবধানেই প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন - ঠান্ডা জল-কোল্ড ড্রিঙ্কে গলা ব্যথা? বাড়িতেই সেরে যাবে, রইল উপায়