সাগরে ইলিশের আকাল বেশ কিছু বছর ধরে শুরু হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের নদীতে কিছু পরিমাণ ইলিশ মিললেও পশ্চিমবাংলার সাগরগুলিতে এবং নদীতে ইলিশ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে ইলিশ। তবে বাঙালির কী মন মানে ? ইলিশ ছাড়া কী মরশুমের ভুরিভোজ সম্পূর্ণ হয় !
বিকল্প চিন্তাভাবনায় সাফল্য
আজন্মলালিত যে ভাবে মনের মনিকোঠায় সেঁধিয়ে আছে, আচমকা তাই ইলিশ বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে কি করা যায়, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে দীর্ঘ বছর থেকেই। তাই বিকল্প হিসেবে পুকুরে ইলিশ চাষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা শুরু হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় চাষ করা হচ্ছে।
ইলিশ নয় ইলিশের আত্মা
কিন্তু যতই চাষ করা হোক, তাতে আদৌ সাগর নদীর মতো ইলিশের স্বাদ মিলবে না এমনটাই দাবি একটা অংশের বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে ইলিশ চাষ হতে পারে। বড় হতে পারে, খাওয়াও যেতে পারে। কিন্তু ওই যে বলে না ! ইলিশ নয়, তা হবে ইলিশের আত্মা। খোলা জলের প্রাকৃতিক ইলিশের মতো স্বাদ মিলবে না।
কিন্তু কারণ কি?
প্রাকৃতিক প্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেভাবে ইলিশের স্বাদ খোলে, যেভাবে ইলিশ নিজস্ব গতিতে, নিজের ছন্দে, নিজের বাসস্থান খুঁজে নেয়, তার মধ্যে ইলিশের স্বাদ অনেকটা লুকিয়ে থাকে। পুকুরে বদ্ধ জলে সেই স্বাদ কিছুটা হলেও মার খাবে। গন্ধ অনেকটা কম হবে বলেই ধারণা তাদের। সাগর বা নদীতে জিনিস পাওয়া যায়, তার চাইতে স্বাদে-গন্ধে অনেকটাই ফিকে এ ইলিশ।
বিজ্ঞানীদের রিপোর্টে বড় তথ্য
এমনটাই একটি গবেষণা রিপোর্টে পেশ করেছেন বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। একই রকম সমীক্ষা চালিয়ে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের একটি দল অনেকটা এমন মত পোষণ করেছেন। তাদের মতে আকারেও খুব বেশি বড় করা সম্ভব নয় পুকুরের ইলিশ। একটা সময়ের পর ইলিশ আর বদ্ধ জলে বাড়তে পারে না। পাশাপাশি স্বাদ এবং গন্ধ খোলা জলের ইলিশের চেয়ে অনেকটাই ম্রিয়মাণ।
বৃদ্ধির হার কম, স্বাদে গন্ধে ফিকে
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার রিসার্চ এর উদ্যোগে স্রোত হীন জলে ইলিশ মাছ উৎপাদনের গবেষণা শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে থেকেই এই কাজের মূল দায়িত্ব ছিল ব্যারাকপুরের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (Cifr) এর উপর। দেশের আরও অন্তত পাঁচটি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণা শুরু হয়েছে। তারা ইলিশ মাছের প্রজনন সংক্রান্ত যাবতীয় আচরণ খাদ্য এবং গুণাগুন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। এর আগেও ১৯৮০ সালে ব্যারাকপুরে পুকুরে ইলিশ চাষ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল বেশিরভাগই পুকুরের মাছ মরে যায়। যেটুকু বাঁচে তার বৃদ্ধির হার কম।