বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। আর তার মধ্যে একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল জামাই ষষ্ঠী (Jamai Shasthi)। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এই উৎসবে সামিল হন সকলে। জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়ি মায়েরা এই ব্রত পালন করেন মূলত।
জামাই ষষ্ঠীর উৎসবকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে বাঙালি বাড়িতে পালন হয়ে আসছে নানা আচার- অনুষ্ঠান। মূলত জৈষ্ঠ্যে মাসেই হয় এই পার্বণ। এই বছর জামাই ষষ্ঠী পড়েছে আগামী ১৬ জুন অর্থাৎ ১ আষাঢ়। সকাল থেকে উপবাস করে নানা নিয়মের মাধ্যমে এই ব্রত পালন করেন শাশুড়িরা।
একদিকে জৈষ্ঠ্যে মাসে চারিদিকে থাকে আম- জাম- কাঁঠাল - লিচুর মতো ফল। সেই সঙ্গে এদিন জামাইদের পাতে পড়ে রকমারি সুস্বাদু পদ। ভিন্ন ধরনের মরসুমি ফল, মিষ্টি সহযোগে জামাইভোজের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয় এই বিশেষ দিনে। বলাই বাহুল্য বছরের একটা দিন শ্বশুরবাড়ির এই স্পেশাল 'জামাই আদর'-র অপেক্ষায় থাকেন সকল জামাইরাই।
তবে জামাই ষষ্ঠী নিয়ে জড়িয়ে আসছে বেশ কয়েকটি প্রচলিত কথা ও মতভেদও। অনেকে মনে করেন, ভারতবর্ষে এক সময় এক সংস্কার প্রচলিত ছিল যে, কন্যা যতদিন না পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে, তাঁর বাবা-মা তাঁর গৃহে পদার্পণ করবেন না। তাই জৈষ্ঠ্যে মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে বেছে নেওয়া হয় জামাই ষষ্ঠী হিসাবে। এই প্রথার মাধ্যমে মেয়ের মুখ দর্শন হবে তাঁদের এই আশায়।
আরও পড়ুন: দেবীর আগমন-গমনে কী বার্তা দিচ্ছে এবার! ধরায় ফিরবে সুদিন?
সেই সঙ্গে লোকমুখে শোনা যায়, এদিন মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করতেন মেয়ের মায়েরা, যাতে তাঁদের মেয়ের কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে পুত্রসন্তান। বর্তমানে এই সংস্কারের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মা ষষ্ঠীর পুজো ও জামাই আদরের জন্য এই পার্বণের নামকরণ হয় 'জামাই ষষ্ঠী'। এখন মেয়ে-জামাইকে ডেকে সমাদরে বিশেষ কিছু নিয়ম পালন ও খাওয়া দাওয়া, আনন্দের মাধ্যমেই উদযাপন হয় জামাই ষষ্ঠী।
আরও পড়ুন: জামাই ষষ্ঠীর আগে দিঘার বাজারে পৌঁছাল দেড় টন ইলিশ! দাম নাগালের মধ্যেই
বাঙালি হিন্দুসমাজে জামাই ষষ্ঠীর গুরুত্ব অনেক। সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন এই উৎসবের জন্য। নতুন বস্ত্র, উপহার, ফল- ফলাদি, পান-সুপারি, ধান- দূর্বা, বাঁশের করুল,তালের পাখা, করমচা দিয়ে শাশুড়ি মায়েরা উদযাপন করেন জামাই ষষ্ঠী। তবে বর্তমানে সকলের ব্যস্ততার মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে এই অনুষ্ঠান পালনের পদ্ধতি। বহু রেস্তরাঁতে আয়োজন হচ্ছে, বিশেষ জামাই ষষ্ঠীর। আর সকলে সেখানেই উৎসবে মাতছেন ও আদরে- যত্নে আপ্যায়ন করছেন আদরের জামাইকে।