পশ্চিমবাংলায় মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) বিশেষ দিনটি পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ নামে পরিচিত। এই দিনে দক্ষিণায়ন শেষে সূর্যের উত্তরায়ণ পালিত হয়। তাছাড়াও ঘরে ঘরে পিঠে পুলি পায়েস তৈরি করে নতুন মাসকে স্বাগত জানানো হয়। যুগ যুগ ধরে বাড়িতে মা-ঠাকুমারা তৈরি করেন পিঠে-পুলি-পায়েস (Pithe Puli Payesh)। সারা বছর ধরে যেন মুখিয়ে থাকতেন সকলে এই বিশেষ দিনের জন্যে। পাটিস্যাপ্টা, দুধ পুলি, ছানার পিঠে, সরু চাকলি, গোকুল পিঠে রকমারি মিষ্টি পৌষ সংক্রান্তিতে (Poush Sankranti) তৈরি করার চল। তবে এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলেছে। বাজারজাত পিঠেই এখন বেশি চলছে।
চালের গুঁড়ো, ময়দা, নারকেল, ক্ষীর, দুধ ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে সংক্রান্তিতে তৈরি হয় নানাবিধ সুঃস্বাদু মিষ্টি। যা একবার চাখলে, স্বাদ ভোলা যায় না। সপ্তাহ খানেক এগে থেকেই চলতো তার প্রস্তুতি।
বিগত কয়েক বছর ধরে মা-ঠাকুমার হাতে তৈরি সেই পিঠা-পায়েসের জায়গা নিয়েছে বাজারজাত পিঠে-পুলি। গ্ৰাম বাংলায় নিয়মকানুন, রীতি নীতি পালন হলেও শহরে তা প্রায় উঠেই যেতে চলেছে। এই সময়কালে পশ্চিমবাংলার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানে পাওয়া যায় রকমারি পিঠে। এমনকি বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় পিঠের বিশেষ প্ল্যাটার। চারিদিকে চলতে থাকে পৌষ পার্বণ ও পিঠে পুলি উৎসব, পিঠে বানানোর প্রতিযোগিতা।
এখন একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে ছোট হয়ে গেছে বেশিরভাগ বাড়িতেই। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে সকলেই ব্যস্ত।যার জেরে নিজেদের নিত্যদিনের খাবার খাওয়ার জন্যে অনেকের ভরসা অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ। তার ওপর যেটুকু সময় থাকে, তা চলে যায় নিত্যনতুন মুখরোচক কিংবা বিদেশী খাবার বানাতে। বাঙালি কি তাহলে ভুলে যাচ্ছে এত দিনের ঐতিহ্য পৌষ সংক্রান্তির পিঠে-পুলি- পায়েস বানাতে?
পাটিস্যাপ্টার জায়গায় 'প্যান কেক', আবার পায়েসের জায়গায় অনেক ক্ষেত্রে এসেছে কাস্টার্ড। বড়দিনে কেক বেকিং মাস্ট! কিন্তু সংক্রান্তিতে পিঠে 'ব্যাক ডেটেট'। কোথাও গিয়ে যেন নিজেদের পরিচিতি নিয়েই উঠছে এক অজানা প্রশ্ন। পরিচিত গানের উদাহরণ টানলে বলা যায়, "হায় বাঙালি হায় তুই আর বাঙালি নাই। তোর চলন বলন কথার ধরণ নিজের মত নাই, তুই আর বাঙালি নাই....."
আরও পড়ুন: আহারে, বাহারে পৌষ পার্বণ! রাত পোহালেই বাঙালি কামড় বসাতে প্রস্তুত পিঠে, পুলির রকমারি স্বাদে
তবে সবশেষে বলা যায় বাড়িতে পিঠে-পায়েস তৈরি করার পরিস্থিতি না হলেও অনেক ভোজন রসিক বাঙালি কিন্তু ভোলেননি এই উৎসবের বিশেষ খাবারগুলির স্বাদ নিতে। তাই পুরো সময় জুড়ে মিষ্টির দোকানগুলিতে দেখা দেয় লম্বা লাইন, উপচে পড়া ভিড়। এভাবেই বেঁচে থাক বাঙালির উৎসাহ, আনন্দ ও বাঙালিয়ানা!