সাহিত্যচর্চা, সংস্কৃতি অঙ্গনে অনন্য-সাধারণ অবদান রাখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোশাকে ছিল নিজস্ব ঢঙের দারুণ ফ্যাশন। এই ফ্যাশন ছিল তাঁর নিজের তৈরি। সেই পোশাক তিনি একাই পরতেন। তাঁর সময়ে অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিককে সেই ফ্যাশনে দেখা যায়নি। নিজস্ব আঙ্গিকের পোশাকেই ছিল রবি ঠাকুরের বিশেষত্ব। নিজস্ব মননশৈলীতে তিনি এসব ফ্যাশনের সৃষ্টি করেছেন। সেই সময় রবীন্দ্রনাথের ফ্যাশন বর্তমান যুগের কবি-লেখকদেরও অবাক করবে। নিজের শিল্পের মতোই রবি ঠাকুর ছিলেন তাঁর ফ্যাশন সম্পর্কেও সচেতন। ফ্যাশন নিয়ে নিজের ভাবনার কথা কবিগুরু তুলে ধরেছিলেন ‘শেষের কবিতা’তে। এই উপন্যাসে কবি বলেছেন, ‘ফ্যাশন হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী।’
শুধু ফ্যাশন নয়, স্টাইল সচেতনও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্টাইলে তিনি জোব্বা ঢংয়ের পোশাক বেশি পরতেন। যদিও বয়সের ধাপে একেক সময় একেক পোশাকে দেখা গেছে প্রিয় কবিকে। যৌবনে স্যুট পরতে পছন্দ করতেন। কিন্তু পরিণত বয়সে তাকে স্যুট পরা দেখা যায়নি। কবি যাই পরতেন তাতেই দারুণ মানিয়ে যেত। লম্বা সুঠাম দেহ ছিল তাঁর। জোব্বা পোশাকের সঙ্গে ছিল তার বাবরি চুল। আর দাড়িতে তাকে বেশ লাগতো। তার প্রিয় পোশাক আলখেল্লা। এই আলখেল্লার আইকন হয়ে ওঠেন তরুণ বয়সে।বাল্মীকির প্রতিভা গীতিনাট্য করার সময় তাঁর এই পোশাক সবার নজরে আসে। ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির জোড়াসাঁকো বাড়ির তেতলার ছাদে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। সেখানে রবি ঠাকুরের নতুন রূপ দেখে অনেকেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
শান্তিনিকেতন আশ্রমে থাকার সময় রবীন্দ্রনাথ পরতেন সুতির লুঙ্গি। সঙ্গে থাকতো ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি। তার সেই লুঙ্গির ডিজাইনেও ছিল নতুনত্ব। অনেকটাই লুঙ্গি আর পেটিকোটের রূপ ছিল সেটায়। রঙ ছিল সাদা কিংবা গেরুয়া। তাছাড়া তিনি পাঞ্জাবির ওপরে পরতেন দুটো জোব্বা। ভেতরের জোব্বাটি বুক ঢাকা। পুরাতন কুর্তার মতো বুকের ওপর আড়াআড়ি করে কোমরে বোতাম লাগিয়ে নিতেন। আর উপরেরটি ছিল গলা থেকে পা পর্যন্ত। সামনের দিকে সবটাই খোলা। পুরোটাই আলগা হয়ে ঝুলে থাকতো তাঁর গায়ে। কালো, বাদামি, গেরুয়া, নীল, খয়েরি, বাসন্তী, কমলা, মেঘ ছাই রঙের জোব্বা পরতে পছন্দ করবেন কবিগুরু। রবি ঠাকুরের শীতকালের পোশাকেও ছিল ফ্যাশনের ছোঁয়া। পরতেন বিলিতি গ্রেট-কোট আর ভারতীয় শেরওয়ানির মিশেলে তৈরি নতুন পোশাক। কালো বা ছাই রঙের তৈরি হতো এই পোশাকগুলো। এর উপরে জড়াতেন শাল বা চাদর। আর মাথায় থাকতো সুতি কিংবা ভেলভেট ফেব্রিকের তৈরি টুপি।
রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫শে বৈশাখ। জন্মদিনেও বিশেষ পোশাকে দেখা যেত তাঁকে। কোঁচানো ধুতি আর গিলে করা পাঞ্জাবি পরতেন তিনি। সেই সঙ্গে গায়ে থাকতো বাটিকের উত্তরীয়। পায়ে পরতেন কটকি চটি বা নাগরা। তাছাড়া পৌষ উৎসবে বা উপাসনার সময় পরতের গরদের ধুতি আর পাঞ্জাবি।
তথ্য সংগ্রহে: সংবাদ প্রকাশ