দিন কয়েক আগেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেট-রক্ষক, ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ। তাঁকে চিকিৎসার জন্য মুম্বই স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাঁর পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়েছে। ফলে অস্ত্রপচার করতে হবে। এখন ভাবার বিষয়, লিগামেন্ট সার্জারির পর আর আগের মতো দৌড়তে পারবেন এই তারকা ক্রিকেটার? এই প্রশ্নই এখন সর্বত্র।
ঋষভ পন্থের স্বাস্থ্য নিয়ে আপডেট দিয়েছে বিসিসিআই
ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই), ভারতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিল যে, তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করাতে হবে, তাই তাকে মুম্বাইতে আনা হয়েছে। বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পন্থকে কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে ঋষভের হাঁটুর অস্ত্রোপচার এবং পরবর্তী চিকিৎসা করা হবে। তাঁর চিকিৎসা ও সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সবরকম সহায়তা করবে বিসিসিআই।
ঋষভ পন্তের লিগামেন্ট সার্জারি
পন্থের শরীরের কিছু অংশে এখনও ব্যথা ও ফোলাভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। যে কারণে তিনি এখন মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এবং সেখানে তাঁর হাঁটুর লিগামেন্টের অস্ত্রোপচার করা হবে। পন্থের সেরে উঠতে ছমাসেরও বেশি সময় লাগতে পারে। তারপরই তাঁর পক্ষে পিচে ফেরা সম্ভব। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে যে, ঋষভকে অবিলম্বে লিগামেন্ট (হাড়ের সাথে সংযোগকারী টিস্যু) অস্ত্রোপচার করতে হবে কারণ তাঁর হাঁটুতে আঘাত লেগেছে। একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে পুরোপুরি ফিট থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত যে কোনও দুর্ঘটনায় হাড়ের আঘাতের কারণে লিগামেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু লিগামেন্ট সার্জারির পর একজন মানুষ আগের মতো দৌড়াতে ও খেলতে পারে।
লিগামেন্ট কি এবং কীভাবে কাজ করে?
লিগামেন্ট হল টিস্যুর শক্তিশালী ব্যান্ড যা একটি হাড়কে অন্য হাড়ের সাথে সংযুক্ত করে। এগুলোর কারণে হাড়ের জয়েন্টগুলো ঠিকমতো কাজ করতে সক্ষম হলেও ছোট-বড় কোনো দুর্ঘটনার কারণে সেগুলোতে অতিরিক্ত টান পড়লে তা ছিঁড়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে লিগামেন্ট টিয়ার বলা হয়। লিগামেন্ট ইনজুরির তিনটি স্তর রয়েছে। গ্রেড ১ (মৃদু লিগামেন্ট টিয়ার), গ্রেড ২ (মাঝারি লিগামেন্ট টিয়ার) এবং গ্রেড ৩ (সম্পূর্ণ লিগামেন্ট টিয়ার)। অর্থাৎ যেখানে লিগামেন্ট সম্পূর্ণরূপে খারাপ হয়ে যায়। এগুলি তিন প্রকার, অ্যান্টিরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (ACL), পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (PCL), ল্যাটারাল এবং মিডিয়াল কোলাটারাল লিগামেন্ট (LCL, MCL) যা হাঁটুর ক্ষতি করে।
সহজ ভাষায় হাঁটুর ওপরের দিকে ফিমার এবং নিচের দিকে টিবিয়া নামক হাড় থাকে। যা হাঁটুর জয়েন্ট তৈরি করে। দুটি লিগামেন্ট (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট এবং পোস্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) ফিমার এবং টিবিয়াকে একসঙ্গে ধরে রাখে এবং হাঁটুকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া হাঁটুর দুপাশে কোলেটরাল এবং মিডিয়াল কোলেটরাল লিগামেন্ট এবং ল্যাটারাল কোলেটরাল লিগামেন্ট রয়েছে। তাদের কাজ হল উভয় হাড়কে সংযুক্ত করা।
লিগামেন্টে চোট লাগলে বুঝবেন কী ভাবে ?
দুর্ঘটনায় একজন ব্যক্তির লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা, তা জানতে ডাক্তার এক্স-রে বা এমআরআই-এর সাহায্যে পরীক্ষা করেন। ব্যথা, ফোলা, হাঁটতে অসুবিধার উপর নির্ভর করে লিগামেন্ট পরীক্ষা করা হয়। এবং তারপরে চিকিৎসা শুরু হয়। কখনও কখনও ACL এর মত নরম টিস্যু এক্স-রেতে দেখা যায় না। এজন্য অনেক সময় ডাক্তাররা এক্স-রে করার পর রোগীদের এমআরআই করান।
কীভাবে চিকিৎসা হয় ?
লিগামেন্টের চিকিৎসা তার তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। যদি গোড়ালি মচকে গিয়ে লিগামেন্ট ছেঁড়ে, তাহলে বিশ্রাম করলেই তা কিছুদিন পরে সেরে যেতে পারে। কিন্তু চোট বড় হলে সমস্যা হয়। গ্রেড ২: লিগামেন্টের আংশিক ফেটে যাওয়ার অবস্থাও বিশ্রাম, বরফ, ওষুধ, ফিজিওথেরাপি দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। গ্রেড ৩: লিগামেন্ট সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেলে, তার চিকিত্সার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। যেমন অস্ত্রপচার।
আরও পড়ুন- পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি কমাতে কর্যকর আদা, কীভাবে-কতটা খাবেন?