গ্রুপে এমন বহু লোক আছেন যাঁদের বিরাট হাবভাব! সব কিছুই যেন তাঁদের নখদর্পণে। সবসময় তিনি বুঝিয়ে দেন আপনার চেয়ে তিনি কত জানেন। তাঁর পড়াশুনোর বৃত্ত আপনার চেয়ে অনেক বড়। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি তিনি আদতে বুদ্ধিজীবী বা ইন্টেলেকচুয়াল হওয়ার ভান করতে পারেন! কীভাবে চিনবেন এমন মেকি হাবভাবওয়ালা বুদ্ধিজীবীকে?
সত্যিই এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের জ্ঞানের ভান্ডার অপার। তাঁরা বিষয়গুলি সম্পর্কে জানেন। তবে এমনও অনেকে আছেন যাঁরা কেবল জনপ্রিয় হওয়ার জন্য সবজান্তার ভাব করেন। কথা বললেই বুঝতে পারবেন স্রেফ বুদ্ধিজীবী হওয়ার ভান করছেন ওই ব্যক্তিরা। কয়েকটি গুণ চিনিয়ে দেয় মেকি বুদ্ধিজীবীদের। চলুন জেনে নিই সেই কৌশল-
অন্যদের প্রভাবিত করার চেষ্টা- যাঁরা সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী তাঁরা অন্যের জ্ঞান বাড়িয়ে দেন। নিজেগের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য হল সামনের মানুষকে এগিয়ে দেওয়া। তাঁরা আপনাকে খুব সহজ ভাষায় জটিল বিষয় ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে মেকি বুদ্ধিজীবী একমাত্র লক্ষ্য সামনের মানুষকে প্রভাবিত করা। কথোপকথনের সময় তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেন যাতে সামনের ব্যক্তি মনে করেন কত জানে! অন্যকে নত করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করে অন্যদের ছোট করতে চান মেকি বুদ্ধিজীবীরা। তাই ইচ্ছা করে বিষয়কে জটিল করে পেশ করেন।
কথাবার্তার সময় অন্যদের বাধাদান-যাঁরা বুদ্ধিজীবী হওয়ার ভান করে তাঁরা সামনের ব্যক্তিকে কথা বলার সুযোগই দেয় না। কিছু বলতে গেলে মাঝপথে তাঁর কথা থামিয়ে নিজে বলতে শুরু করেন। তাঁরা অন্যের কথা শুনতেই চান না। নিজের মত চালাতে চান। এই ধরনের লোকেরা মেকি বুদ্ধিজীবী। এঁরা আসলে নিজের মতকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যাঁরা সত্যিকারের জ্ঞানী তাঁরা আগে ভালো শ্রোতা হন। অন্যের মত শোনেন, বোঝেন তার পর নিজে মন্তব্য করেন।
কথায় কথায় তর্ক নয়- সত্যিকারের জ্ঞানীরা কখনও কথায় কথায় তর্ক করেন না। তাঁরা আলোচনা করেন বা সংবাদ করেন। গীতায় লক্ষ্য করবেন, অর্জুনের একের পর এক প্রশ্ন শুনে জবাব দিয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণ। শুরুতেই অর্জুনকে থামিয়ে দেননি। প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি এটাই করেন। তিনি তর্ক করেন না। প্রশ্ন বুঝে উত্তর দেন। যাঁরা বুদ্ধিজীবী হওয়ার ভান করেন তাঁরা কখনও আলোচনা করতে পারে না। সবসময় নিজেদের সঠিক প্রমাণে ব্যস্ত থাকেন। তাঁদের সঙ্গে যে কোনও ধরনের আলোচনা পরিণত হয় তর্কে। আপনি যে কোনও বিষয়ে আলোচনা করুন,তাঁদের মতামত রাখতে হবে এবং নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে হবে। সব বিষয়ে মতামত দেওয়াও মেকি বুদ্ধিজীবীর প্রমাণ।
আরও পড়ুন- কোনটি আপনার পছন্দের রং? বলে দেবে আপনি কেমন মানুষ, মিলিয়ে নিন
নিজের চোখে জগৎ দেখা- লক্ষ্য করে দেখবেন মেকি বুদ্ধিজীবীরা নিজে যা দেখেন, শোনেন বা বিশ্বাস করেন সেটাই চির সত্য বলে মনে করেন। অন্য কারও মত, আদর্শকে পাত্তা দেন না। তাঁদের চেনাজানার বাইরেও যে সত্য আছে সেটা মেনে নেন না। তাঁরা যা বুঝতে চান শুধু সেটাই শোনেন বা বোঝেন। তাঁরা আগে থেকে একটা মত তৈরি করে রাখেন। যুক্তি বা ইতিহাসিক পটভূমিকে মানতে চান না। বরং অকারণ তর্ক জুড়ে দেন।
অন্যের মতের উপর প্রভাব বিস্তার- অন্যের মতের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে চান মেকি বুদ্ধিজীবীরা। তাঁরা সবসময় মনে করেন, তাঁর বিরোধী সকলেই নির্বোধ ও মিথ্যেবাদী। তাঁরা বিশ্বাসই করেন না, অন্য কারও স্বতন্ত্র মত থাকে। মেকি জ্ঞানীরা সব মতকে গ্রহণ করতে পারেন না। তাঁরা শুধু নিজের চিন্তাভাবনাকেই সত্য বলে বিচার করেন। ভিন্নমতের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চান। অন্যদিকে, জ্ঞানীরা সকলের মতকে গ্রহণ করেন। তাঁরা মনে করেন,ভিন্ন চিন্তাভাবনা থাকতেই পারে। সকলের চিন্তাভাবনাকে সম্মান করেন। কারও উপর নিজের মত চাপিয়ে দেন না।