প্রশাসনিক বৈঠকে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাডামের কাছে দাবিদাওয়া, অভিযোগ বলছেন। তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের থেকে জবাবও চেয়ে নিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যেই পুরুলিয়ায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা প্রশাসনিক বৈঠকের শেষ দিকে ঝালদার বিরাট বপুর নেতাকে ডায়েট পরামর্শও দিয়ে দিলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত স্বাস্থ্য সচেতন। প্রতিদিন সকালে উঠে ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার ট্রেডমিলে হাঁটেন। খাওয়াদাওয়া-ও নিয়ন্ত্রিত। নিজেই একবার বলেছিলেন, তিনি ভাত খান না। ইদানীং হাতে ফিটনেস ব্যান্ডও পরছেন। সেই তাঁর সামনেই ঝালদা পুরসভার চেয়ারম্যান সুরেশ আগরওয়াল বলতে ওঠেন। যাঁর ওজন ১২৫ কেজি। মমতা জিজ্ঞেস করলেন,'আপনার ভুঁড়ি যেভাবে বাড়ছে যে কোনওদিন ব্লক করে যাবেন। হাঁটাচলা করছেন না।'
উত্তর এল,'আমার সুগার, লিভারের কোনও সমস্যা নেই।' মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। বললেন,'পেটের প্রবলেম তো আছেই।' সুরেশ আগরওয়াল জানান,'কিচ্ছু নেই ম্যাডাম। একটাও মেডিসিন খাই না। এটা রেকর্ড।' নাছোড় মমতা প্রশ্ন করলেন,'রেকর্ড ঠিক আছে. হাঁটাহাঁটি করেন? এত বড় মধ্যপ্রদেশ কীভাবে হল?'
সুরেশ জানান,'হাঁটাহাঁটি করি। রোজ এক-দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করি। সকালে পকোড়া চাই-ই। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।' এই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে গিয়েছেন ওই নেতা। মমতা বলেন,'কেন পকোড়া খাবেন? ও খেলে কোনওদিন কমবে না এটা।'
'কিন্তু ডেইলি দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করি ম্যাডাম'। জবাব শুনে মমতা জানতে চাইলেন,'কী কী ব্যায়াম করেন দেখান তো আমায়।' উত্তর,'অনুলোম বিলোম।'
মুখ্যমন্ত্রী জানান,'প্রাণায়মে তো ভুঁড়ি কমে না। ভুঁড়ির কী ব্যায়াম করেন? ক'বার করেন কপালভাতি।'
'কপালভাতি এক হাজার বার করি।' শুনেই মমতা বলেন,'এখানে করলে ১০ হাজার টাকা দেব। ১ হাজার বার করলে আপনার ভুঁড়ি এই জায়গায় থাকত না।' ওই ব্যক্তি জানান,'বিকেল পাঁচটার পরে করে দেখিয়ে দেব।' মুখ্যমন্ত্রীর স্বগতোক্তি,'অসম্ভব। এক হাজার বার করলে এমন ভুঁড়ি থাকত না। কপালভাতি আমিও করি। পেট নাচালে হবে না। নিঃশ্বাস কোথা থেকে নেন! গোড়ায় গলদ। ভুল করছেন। এখন তো ইউটিউবে দেখা যায়।' এরপরই ওজন চানতে চান মমতা। বলেন,'১২৫ কেজি ওয়েট?' সায় দিয়ে ঝালদার চেয়ারম্যানের জবাব,'ম্যাডাম এই চেয়ারগুলি আমাদের জন্যই তো তৈরি করা। প্লাস্টিকের চেয়ার ভেঙে যায়।' হেসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,'আবার গর্ব করছে!'
সব শোনার পর ওজন কমাতে দিদির প্রেসক্রিপশন,'পকোড়া খাবেন না। একমাস সেদ্ধ ভাত খান। রাত ৭টার মধ্যে খেয়ে নেবেন। ১২ ঘণ্টা কিছু খাবেন না। ভোরবেলায় পকোড়া খেতে শুরু করলে চলবে না।'ঘাড় নেড়ে ঝালদার নেতা জানান,'রাত ১০টায় খাই ম্যাডাম'। তা শুনে মমতার পরামর্শ,'১০টায় ভাত খাওয়ার পর এক কিলোমিটার হাঁটবেন। পরদিন সকাল ১০টার আগে খাবেন না। অ্যারোবিক করুন। বরং ব্যায়াম বন্ধ করে পকোড়া খাওয়া কমান। আমি দেখব। লোক ফিট করছি।'
মুখ্যমন্ত্রী ও আগরওয়ালের কথোপকথনের ভিডিও দেখুন-
আরও পড়ুন- বাংলায় তৈরি হল নীল চা, স্বাদ-গন্ধের সঙ্গে বিবিধ গুণ, দাম কত?