Kolkata Eggroll History: মুচমুচে পরোটার ওপরে ডিমের পরত, ওপরে ঝিরি করে কাটা পেঁয়াজ, শসা, সস, লেবু, লঙ্কা। আহা কী স্বাদ! জিভে জল আনা খাবার এগরোল একার্থে 'ঘ্রাণং অর্ধং ভোজনং'। দূর থেকে এগরোলের গন্ধ নাকে ভেসে এলে যে কোনও বাঙালির ডোপামিন হরমোন চাগাড় দিয়ে ওঠে।
সন্ধের টিফিনে মায়ের হাতের এগরোল। পুজোয় ঘোরাঘুরির সঙ্গে এগরোল। আবার অফিসের মধ্যাহ্নভোজনে এগরোলে এইস্যা একটা কামড়। খিদে মেটাতে একখানা সুস্বাদু এগরোলের জুরি মেলা ভার। তাও আবার ট্যাঁকের ওজন না বাড়িয়েই। হ্যাঁ, তবে শরীরের ওজনের কথা না বলাই ভালো। শসা-পেঁয়াজ, সস দিয়ে এগরোলের এক এবং একমাত্র স্রষ্টা কলকাতা। কলকাতার এগরোল পরে জনপ্রিয়তা পেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও। তবে কলকাতার এগরোল যাত্রা খুব পুরনো নয়। যতটা আগে যাত্রা শুরু হয়েছিল চিকেন রোল বা বিফ রোলের।
জনপ্রিয় ফুড ব্লগার তথা লেখক দামু মুখোপাধ্যায় বলছেন, "কলকাতায় রোল শুরু করে নিজাম রেস্তোরাঁ। তখন মূলতঃ চিকেন রোল বা বিফ রোলই তৈরি হত। আশির দশকের গোড়া বা মাঝামাঝি সময়ে। তখনও রাস্তায় রাস্তায় এগরোল মিলত না। এরপর শুরু হল পার্ক স্ট্রিটে হটকাটি রোল, বাদশাহ সহ আরও কিছু রোলের দোকানের রমরমা। নিজামই কলকাতার রোলের পথিকৃৎ। পরোটাকে আরও সুস্বাদু করতে শুরু হয় এগ ও মটন দেওয়া। পরে সস্তার জনপ্রিয় খাবার হিসেবে এগরোলের আবির্ভাব।"
কোন সময়ে কলকাতায় এগরোল জনপ্রিয়তা পেল? দামুবাবু জানান, আগে আলুর তরকারির পুর দিয়ে তৈরি হত এগরোল। আলুর চোখা শসা, পেঁয়াজ দিয়ে মেখে পরোটার মাঝখানে রেখে তৈরি হত এগরোল। তাও আবার খবরের কাগজে মোড়া। এরপর ধীরে ধীরে এগরোলের বিবর্তন হয়। ব্রাউন পেপার, হোয়াইট পেপারে মুড়ে এল এগরোল। এরপর একে একে ডবল ডিমের এগরোল, এগ চিকেন রোল। তবে নব্বই দশক থেকে জনপ্রিয়তা বেড়েছে পাড়ায় পাড়ায় এগরোল সেন্টারের যাত্রা। কলকাতার বাইরে এগ পরোটা থাকলেও এগরোলের স্রষ্টা কলকাতা।
জানা যায়, ১০ জুন জাতীয় এগরোল দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৮০০ সালের দিকে, চাইনিজ স্প্রিং রোল থেকে এগরোল তৈরি হয়। পরে ক্যান্টোনিজ খাবারের একটি জনপ্রিয় খাবার হয়ে ওঠে এগরোল। চিনে রুটির ওপর ডিম দিয়ে একটি পদ তৈরি হত। এই ক্লাসিক খাবারটি ১,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত। বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিতে এটি একটি প্রিয় খাবার বলে জানা যায়। আমেরিকান রান্নার বইতে এগরোলের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, চাইনিজ-আমেরিকান খাবারে এগরোল ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালের ১০ জুন প্রথম জাতীয় এগরোল দিবস পালিত হয়। জনপ্রিয় ফ্রোজেন এশিয়ান খাবার ব্র্যান্ড প্যাগোডা এই দিনটিকে জাতীয় এগরোল দিবস হিসেবে পালন করে। বিশ্বজুড়ে নানা দেশে এগরোলের ভিন্ন পদ আছে। তবে জনপ্রিয়তার খাতিরে কলকাতার এগরোলই দেশজুড়ে জনপ্রিয়।