Northbengal Shib Sati Peeth: অনেকেই শ্রাবণে বা অন্য সময় কেদার,বদ্রী,অমরনাথ,কৈলাস যান শিবের দর্শনে। কিন্তু অনেকেই জানেন না,আমাদের রাজ্য়েও রয়েছে শিবতীর্থ। যা কম আকর্ষণীয় নয়। সেই রকমই পাহাড়ের গা বেয়ে দুর্গম পথ অতিক্রম করে যেতে হয় এখানেও।
যাঁরা ডুয়ার্সে বেড়াতে গিয়েছেন তাঁরা অনেকেই চেনেন। আলিপুরদুয়ার জেলায় ভুটান সীমান্তে অবস্থিত এই মহাকাল শিবক্ষেত্র। একে দেশের ৫১ পিঠের এক পিঠও বলা হয়ে থাকে।
অন্যান্য শিবক্ষেত্রের মতো এর পথও দুর্গম। তবে এর পথে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরা দেয় তা মোহময়। ভুটান পাহাড় বর্ষায় সবুজ হয়ে এঠে। জয়ন্তী নদীও জল পেয়ে প্রাণ ফিরে পায়। চারিদিকে সবুজের সমাহার তার মাঝে হেঁটে চলা শিবের দর্শন পেতে।
ডুয়ার্সের এই শিবক্ষেত্র উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শ্রাবণ মাসে শিবের দর্শন করতে আসেন এখানে সকলে। বর্ষায় জঙ্গল বন্ধ থাকে কিন্তু মহাকাল যাওয়ায় কোনও বাধা নেই। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য থেকে গাড়িতে তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর ট্রেক করতে হয়। ১ কিলোমিটার ট্রেক করে যেতে হয়।
দুর্গম হলেও অন্য়ান্য ধামের মতো ভয়ঙ্কর নয়। পুরো ট্রেক উপভোগ করে যেতে পারেন সব বয়সের মানুষই। তবে বাচ্চারা নাও পারতে পারে। দুপাশে জয়ন্তীর অপার সৌন্দর্য। ফলে কখন পথ শেষ হয়ে যাবে টের পাবেন না।
মহাকালে প্রবেশ করলেই একটা ঘণ্টার ধ্বনি শোনা যায়। কোথা থেকে আসে সেই ঘণ্টা ধ্বনি সেটা সেখানে গেলেই বুঝতে পারবেন। সেখানে পৌঁছে মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে। শিবরাত্রি ও শ্রাবণের সময় এখানে বেশি ভিড় হয়।
কলকাতা থেকে এলে শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরলে সরাসরি আলিপুরদুয়ার স্টেশনে নামতে পারবেন। তবে শিলিগুড়ি পর্যন্ত ট্রেনে, বাসে, প্লেনে এলেও গাড়িতে বা কোনওভাবে আলিপুরদুয়ার হয়ে বা সরাসরি আসতে পারেন। আলিপুরদুয়ার থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সোজা জয়ন্তী।
এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এখানে সতীর বামজঙ্ঘা পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম জয়ন্তী এবং এখানের ভৈরব হলেন ক্রমদীশ্বর।
পৌরাণিক মতে, মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছোতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন।
এখানে দেবীর থেকে মহাকালের প্রাধান্যই বেশি। পুরাণ ও তন্ত্র মতে শক্তিই প্রকৃতি, সব শক্তি প্রকৃতিতেই বিরাজমান ও শিব ছাড়া কোনো শক্তিরই অস্তিত্ব নেই। আর জয়ন্তীতে প্রকৃতির সঙ্গে শক্তির মিলন হয়েছে। সর্বোপরি উল্লেখ করতে হয় পাহাড়ের উপর প্রকৃতির শোভা তথা পাহাড়ে পাহাড়ে সীমান্তে দুই দেশের মিলনে এক অপূর্ব সৌন্দর্য।
আর কী দেখতে পারেন?
আলিপুরদুয়ার থেকে কাছে বক্সা জঙ্গলের ধার ঘেঁষা জয়ন্তী। গর্বের গতিপথ হারিয়েছে জয়ন্তী নদীও। পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা নুড়ি-পাথরের শুকনো নদীপথেই বিরাজমান অপার শান্তি। সেই পথ বেয়ে গাড়ি যেখানে থামে, সেখানে এখনও অবশিষ্ট জলের কিছু লেশ। দু'দিকে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার একটি উঠেছে ছোট মহাকালের দিকে এবং অন্যটির গন্তব্য বড় মহাকাল মন্দির। কাঁচের মতো স্বচ্ছ জল মাড়িয়ে ছোট মহাকাল মন্দির দর্শনের জন্য পথ পেরোতে। চড়াই-উতরাইয়ে ভরা দুর্গম পাহাড়ি পথ পেরিয়ে বিপজ্জনক খাড়া লোহার সিঁড়ি বেয়ে গন্তব্য যেখানে, সেখানে ছোট মন্দিরের কান ঘেঁষে নেমে আসা পাহাড়ি ঝরনা নীরবতা ভেঙে চলেছে অবিরাম। প্রায় ঘণ্টা খানেক সেখানেই কাটিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসে। পাহাড়ের অনেকটাই ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা বড় মহাকাল মন্দিরের পথ আরও বেশি দুর্গম। ওখানে যেতে ট্রেকিংয়ের সরঞ্জাম থাকা আবশ্যক।
সমস্ত ছবি: সংগৃহীত